টাকা হলে সবই সম্ভব!
নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই এক জায়গার সেচ সংযোগ অন্যত্র সরানোর হিড়িক পড়েছে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নে। এতে এলাকার লোকজন পড়েছেন বিপাকে। ঝুলন্ত তারের কারণে রয়েছেন মারাত্মক ঝুঁকিতে। যেন অনিয়মই এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশেই এসব কাজ করছেন সেচপাম্প মালিকরা।
তবে পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) আইয়ুব আলী এ বিষয়ে সংবাদকর্মীর সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। উল্টো বিষয়টি দেখভালের জন্য উপজেলা সেচ কমিটির উপর চাপিয়ে দেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নের সেনপাড়া তৈলক্ষ্য নামে একজন সেচপাম্প মালিক ১৩০ ফুটের মধ্যে (যার বহিঃ নম্বর-১৬৫) সেচ বডিং দেখিয়ে আদিতমারী পল্লীবিদ্যুৎ অফিস থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে কয়েক বছর ধরে সেচপাম্প চালিয়ে আসছেন। সম্প্রতি সেচপাম্প বডিংটি প্রায় ৭০০ ফুট দূরে স্থানান্তরিত করেন মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে। পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের কর্মীদের যোগসাজশে এসব কাজ করছেন কথিত লাইনম্যানরা।
এতকিছুর পরেও বিদ্যুৎ বিভাগের কর্তারা কিছুই জানেন না বলে জানান। তবে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখবেন বলে জানান সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) এএসএম রকিবুল হাসান।
উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নের সেনপাড়া গ্রামে শুধু তৈলক্ষ্যই নয়। সেখানে কোকিলেশ্বর,মনোরঞ্জন, গুনধর ও নিরঞ্জনসহ ৫/৭ জন সেচপাম্প মালিক ১৩০ ফিটের মধ্যে বডিং দেখিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ নিলেও কিছুদিন পর দালাল চক্রের মাধ্যমে পল্লীবিদ্যুৎ অফিসকে ম্যানেজ করে বডিং সরিয়ে নিয়েছেন।
ভাদাই ইউনিয়নের সেনপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি সদস্য বিনয় কুমার বলেন, প্রথমে নিয়ম অনুযায়ী বডিং করে সেচ সংযোগ নিলেও এখন এসব নিয়ম মানার কোনো বালাই নেই। তিনি আরও বলেন, যেভাবে সেচ সংযোগের তারগুলো ঝুলন্ত রয়েছে তাতে করে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
একই গ্রামের বাসিন্দা ও সেচপাম্প মালিক কোকিলেশ্বর বলেন, ‘টাকা হলে সবই সম্ভব।’ এর বাইরে কোনো কথা বলতে রাজি হননি তিনি।
এদিকে সেচ মৌসুমের শুরুতেই কথিত লাইনম্যানদের মাধ্যমে পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে সেচ পাম্প মালিকরা নিজের ইচ্ছেমতো জায়গায় সেচ পাম্প বডিং স্থানান্তরিত করে থাকেন। শুধু ভাদাই ইউনিয়নে নয়, পুরো উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় চলছে এধরনের অনিয়ম। ফলে ঝুলন্ত তারের কারণে ঝুঁকিতে রয়ে যান সেখানকার বসবাসরত পরিবারগুলো।
আদিতমারী বিন্নাগাড়ী এলাকার বাসিন্দা আসাদুন্নবী হীরা বলেন, তার এলাকায়ও কমপক্ষে ৫/৭ টি সেচ পাম্প বডিং মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এসব সেচ পাম্প বডিংয়ের ঝুলন্ত তারের কারণে মারাত্মক ঝুঁকিতে থাকতে হচ্ছে লোকজনকে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে আদিতমারী পল্লীবিদ্যুৎ জোনাল অফিসের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) এএসএম রকিবুল হাসান বলেন, নিয়ন অনুযায়ী ১৩০ ফিটের মধ্যে সেচ পাম্পের সংযোগ দেওয়া হয়। এরপর যদি কোনো গ্রাহক অফিসকে না জানিয়ে সেচপাম্প বডিং স্থানান্তরিত করেন তাহলে সেটা চরম অপরাধ। তিনি বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে দাবি করেন।
ডিজিএম আইযুব আলীর সঙ্গে তার অফিসে কথা হয় এ প্রতিনিধির। তিনি কোনো কথা না বলে উল্টো উপজেলা সেচ কমিটি এ বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।
এসএন