সেই সেন্টুর পাশে দাঁড়ালেন ডিসি
ঋণের দায়ে যখন দিশেহারা পরিবার, তখনই শ্বাসের টান এসে স্থায়ীভাবে বাসা বেঁধেছে সেন্টুর সংসারে। এতদিন প্রতি সপ্তাহে টানতে হতো ২ হাজার ৭০০ টাকার কিস্তির বোঝা। এখন ফুসফুস বিকল হয়ে সেখানে যোগ হয়েছে ওষুধসহ চিকিৎসার আনুষাঙ্গিক খরচ বাবদ আরও ৬০০ টাকা। আর সেই খরচ সামলাতেই নাকে অক্সিজেন লাগিয়েই রিকশা নিয়ে বাইরে বের হয়েছিলেন মইনুজ্জামান ওরফে সেন্টু। এই দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানবিকতার দোয়ারে ঝড় তুললেও স্থানীয় কোনো জনপ্রতিনিধি এখনো তার পাশে দাঁড়ানো তো দূরে থাক, খোঁজও নেয়নি!
তবে বৃহস্পতিবার (১৪ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে সেন্টুর সঙ্গে কথা বলেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) শামীম আহমেদ। এসময় তিনি তার চিকিৎসার সব খরচ বহনের আশ্বাস দেন।
ডিসি বলেন, সেন্টুকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর মেশিন দেওয়া হবে। জেলা প্রশাসন সেন্টুর চিকিৎসার সব ব্যয় বহন করবে।
রিকশাচালক মইনুজ্জামান ওরফে সেন্টুর বাড়ি রাজশাহী নগরের কলাবাগান মহল্লায়। দুই মেয়ে ও এক ছেলের বাবা তিনি। ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে বিয়ে করে পবা উপজেলার দারুশা গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। নগরের কলাবাগান এলাকায় ২ হাজার টাকা ভাড়া বাসায় মইনুজ্জামান ও তার স্ত্রী চম্পা বেগম থাকেন। ৫ বছর ধরে ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছেন তিনি।
শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি আর রিকশা চালাতে পারবেন না। কিন্তু কোনো উপায়ান্তর না দেখে সর্বশেষ দুই দিন নাকে অক্সিজেনের নল নিয়েই রিকশা চালিয়েছেন। এই দৃশ্য সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে আলোচনায় আসে। এরপর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত রবিবার তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি হন। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
জানা যায়, ঋণ নিয়ে একটি রিকশা কিনেছিলেন মইনুজ্জামান ওরফে সেন্টু। সেই রিকশা চুরি হয়ে যায়। নতুন করে ঋণ করে আরেকটি রিকশা কিনে চালাচ্ছিলেন। এর মধ্যে ফুসফুসের সমস্যার কারণে চিকিৎসকরা নাকে অক্সিজেনের নল পরিয়ে দেন। সংসার চালাতে অক্সিজেনের নল পরেই রিকশা চালাচ্ছিলেন তিনি।
সেন্টু জানান, ৫ বছর আগে একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ৮০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি রিকশা কিনেছিলেন। দুই বছরের মাথায় নগরের ঘোষপাড়ায় রিকশাটি চুরি হয়ে যায়। পরে আবার ৮০ হাজার টাকা ঋণ করে আরেকটি রিকশা কেনেন। সেই রিকশাই চালাতেন। এরই মধ্যে ‘হার্নিয়া অপারেশনের’ জন্য আরও ৫০ হাজার টাকা ঋণ করেছিলেন। প্রতি সপ্তাহে দুই জায়গায় ১ হাজার ৩৫০ টাকা করে কিস্তি দিতে হয়। দিনে তিনটি অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগে। ওষুধ আর অক্সিজেন মিলিয়ে তার দিনে ৬০০ টাকা খরচ হয়। দুই মাস ধরে তিনি বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। অক্সিজেন ছাড়া চলতে পারছিলেন না।
তিনি আরও জানান, ডাক্তার বলেছেন, তার ফুসফুস নষ্ট হয়ে গেছে। এখন একটি যন্ত্র কিনতে হবে। সেটা সব সময় নাকে লাগিয়ে রাখতে হবে। তাতে আপনা আপনি বাতাস থেকে অক্সিজেন আসবে। এই মেশিনের দাম ৫০ হাজার টাকা। তিনি চিকিৎসকের সই করা সেই কাগজ পকেট থেকে বের করে দেখালেন। তাতে লেখা আছে ‘কনসেনট্রেটর’। এই যন্ত্রটি কিনে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক।
হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের চিকিৎসক অধ্যাপক হাসান তারিক জানান, সিওপিডি ও যক্ষ্মা হওয়ায় তার ফুসফুস দুর্বল ও হৃদযন্ত্রে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ কারণে তিনি স্বাভাবিকভাবে অক্সিজেন নিতে পারছেন না। ‘কনসেনট্রেটর’ নামের যন্ত্র লাগিয়ে তিনি বাড়িতে বিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকলে স্বাভাবিকভাবে বাতাস থেকে অক্সিজেন নিতে পারবেন। তখন তার অক্সিজেনের খরচ লাগবে না।
এসজি