ঠাকুরগাঁওয়ে শিশু-কিশোরদের বিনোদন পার্কে অসামাজিক কার্যকলাপ
ঠাকুরগাঁও শিশু পার্কের নামে গড়ে উঠা বেসরকারি পার্কগুলোতে চলছে অসামাজিক কার্যকলাপ। এতে নষ্ট হচ্ছে যুব সমাজ। বিনোদন পার্কগুলো বর্তমানে শিক্ষার্থীদের আপত্তিকর মেলামেশার অন্যতম স্থানে পরিণত হয়েছে। এসব জায়গায় তরুণ-তরুণীরা প্রকাশ্যেই বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হচ্ছে। তবে পার্কগুলোতে অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
প্রশাসনের তথ্য মতে, সদরে ছোট-বড় ৫টি বেসরকারি পার্ক রয়েছে। আর এসব পার্কে পরিবার-পরিজন ছাড়াও প্রতিদিন ৫ শতাধিক যুবক-যুবতী আসা-যাওয়া করে।
কর্মব্যস্ত যান্ত্রিক শহরের উচু দালান-কোঠার মধ্যে থেকে কিছুটা সময় খোলা আকাশের নিচে কাটানোর জন্য মানুষ ছুটে যান জেলার বিভিন্ন বিনোদন পার্কগুলোতে। কিন্তু সেই পার্কগুলো এখন অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠছে। প্রেমিক যুগলরা সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত পার্কের মধ্যে নানান অশ্লীল কাজে লিপ্ত হয়ে থাকে। ছোট ঘর কিংবা ছাতার নিচেই তারা অশ্লীলতার নিরাপদ স্থান হিসেবে বেঁচে নেয়।
ঠাকুরগাঁও সদরের কয়েকটি পার্কে ঘুরে দেখা যায়, কল্পনা পিকনিক স্পটের ভেতরে অন্ধকারাচ্ছন্ন সারি সারি পাম গাছের নিচে বসার সু-ব্যবস্থা করে রেখেছেন কর্তৃপক্ষ। আর পার্কের ভেতর এমন সুযোগ- সুবিধা লুফে নিচ্ছে যুবক-যুবতীরা। এ সময় চোখে পড়ে শিক্ষার্থীরা প্রেমের নামে মিলিত হচ্ছে অনৈতিক সম্পর্কে। সেই সময় পার্কের ভেতরে থাকা দায়িত্বরত ম্যানেজার মোমিনুল ইসলামকে এ ধরনের অবৈধ কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন করা হলে রেগে গিয়ে ঢাকাপ্রকাশের প্রতিবেদকের সঙ্গে তর্কে জড়ান তিনি। এক পর্যায়ে কথা না বলেই স্থান ত্যাগ করেন তিনি।
শুধু কল্পনা পিকনিক স্পট নয়, মোহিনী তাজ, স্বপ্নজগৎসহ জেলা সদরের অধিকাংশ পার্কে চলছে এমন অবৈধ কার্যক্রম। এতে নষ্ট হতে বসেছে যুব সমাজ। প্রশাসন এসব পার্কে অভিযান পরিচালনা করে জেল জরিমানা করলেও ফিরছে আগের রুপে। এ অবস্থায় সুষ্ঠ পরিবেশে বিনোদনের ব্যবস্থা চান স্থানীয়রা।
জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সদরের স্বপ্ন জগৎ পার্কের ভিতরে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকায় প্রেমিকযুগলকে আটক করে পুলিশ। এ সময় তাদের সহযোগিতা করার অপরাধে পার্কের দুই কর্মচারীকেও আটক করা হয়। পরে তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
কল্পনা পিকনিক স্পট পার্কে এক জোড়া শিক্ষার্থীকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখে তাদের প্রেমের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা ঢাকাপ্রকাশ-কে জানায়, একাধিক বার এই পার্কের বাইরেও বিভিন্ন জায়গায় মিলিত হয়েছে তারা। এটা তাদের কাছে স্বাভাবিক। বর্তমানে প্রেম ছাড়া আধুনিক জীবন ভাবাই অসম্ভব। সবাই এখন প্রেম করে তাই আমরাও করি।
কল্পনা পিকনিক স্পট পার্কে ঘুরতে আসা কয়েকজন বলেন, সুস্থ কোনো মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে পার্কগুলোতে ঘোরাফেরা করার কোনো অবকাশ নেই। প্রকাশ্যে অনৈতিকক কর্মকাণ্ড চোঁখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।
আব্দুল জব্বার নামে এক সেচ্ছাসেবক বলেন, শিশু পার্কে অসামাজিক কাজসহ অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা দিন দিন বেড়ে চলেছে। পার্কের ভেতরে বেশ কিছু ঘর তৈরি করা হয়েছে তাতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অসামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকে। এসব কাজ বন্ধ না করা হলে ভবিষ্যতে এলাকার নতুন প্রজন্ম তথা যুব সমাজ ধ্বংসের মুখে নিমজ্জিত হবে।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পার্কে বসে থাকে তরুণ-তরুণীরা। কেউ কেউ প্রকাশ্যে অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়। বিকালে প্রাইভেট পড়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রেমিকার সঙ্গে পার্কে বসে আড্ডা দেয় প্রেমিকরা। অনৈতিক কাজের জন্য পার্কের পুকুর পাড় কিংবা পার্কের ঘরগুলো ব্যবহার করছে তারা।
এলাকাবাসীরা জানায়, জেলার সাধারণ মানুষ ও শিশু-কিশোরদের বিনোদনের জন্য কয়েক বছর আগে স্বপ্ন জগৎ পিকনিক স্পট ও কল্পনা পিকনিক স্পট নির্মিত হয়। কিন্তু বিনোদন তো দূরে থাক নস্টামি বেশি হচ্ছে। পার্কে তরুণ-তরুণীদের অবৈধ মেলামেশার সুযোগ করে দেয় তারা। বিষয়টি সবার জানা থাকলেও কেউ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
স্বপ্ন জগৎ পিকনিক স্পটের মালিক গোলাম সারোয়ার চৌধুরী বলেন, আমার পার্কে কোন প্রকার অসামাজিক কাজ হয় না। অসামাজিক কাজ যাতে না হয় সেজন্য পার্কের বিভিন্ন জায়গায় বেশ কয়েকটি স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
তবে অভিযান পরিচালনার পরেও অবৈধ কার্যক্রম চলমান থাকলে আরো কঠোর অবস্থানে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান।
এসআইএইচ