উখিয়া ক্যাম্প থেকে জয়পুরহাটে নিয়ে রোহিঙ্গা তরুণীকে বিয়ে
ছবি: সংগৃহীত
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার লকইর গ্রামের আয়নাল হোসেন নামে এক যুবকের সঙ্গে কক্সবাজারের উখিয়া আশ্রয় শিবিরের (ক্যাম্প) এক রোহিঙ্গা তরুণীর বিয়ে হয়েছে।
বাংলাদেশের কোনো স্থায়ী বাসিন্দা রোহিঙ্গা তরুণীকে বিয়ে করে ঘর সংসার করায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও গত বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) রাতে গোপনে উপজেলার বানদীঘি গ্রামে মামুনুর রশিদের বাড়িতে এ বিয়ে হয়।
এরপর থেকে রোহিঙ্গা তরুণী তার স্বামীর বাড়ি লকইর গ্রামে বসবাস করছেন। এ খবর এলাকার লোকজন জানলেও তা ব্যাপকভাবে প্রকাশ পায়নি। খবর পেয়ে পুলিশ ওই রাতে বানদীঘি গ্রামে গেলেও তাদের আটক না করে সেখান থেকে ফিরে আসে।
লকইর গ্রামে আয়নালের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, প্রায় বছর খানেক আগে বানদীঘি গ্রামের একটি শিশু ধর্ষণের মামলার আসামি হারুনুর রশিদ ও সবুজ মিয়া গ্রেপ্তারের ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে কক্সবাজারের রামু উপজেলায় আত্মগোপন করেন। সেখানে তাদের পরিচয় হয় আয়েশা বেগম নামে এক রোহিঙ্গা তরুণীর সঙ্গে। সেই সূত্র ধরে তারা দুজন যাতায়াত করতেন ওই তরুণীর বাড়িতে। আয়েশা বেগমের মেয়ে রুমা খাতুনকে (২১) বিয়ে দিতে হবে, সেই বিষয়ে আলোচনা হয় তাদের সঙ্গে। তখন সবুজ মিয়া সাড়ে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে নিজের ছেলের সঙ্গে রুমার বিয়ে ঠিক করেন। কথামতো সাড়ে তিন লাখ টাকা সবুজকে বুঝিয়ে দেন আয়েশা।
গত ৯ জানুয়ারি আয়েশা মেয়ে রুমাকে নিয়ে তাদের সঙ্গে বানদীঘি গ্রামে আসেন এবং হারুনুর রশিদের বাড়িতে ওঠেন। এরপর টাকা নিয়ে সবুজ মিয়া সেখান থেকে পালিয়ে যান। অনেক খোঁজাখুঁজি করে তাকে না পেয়ে বিপদে পড়েন হারুন। একপর্যায়ে সবুজকে না পেয়ে আয়েশা বেগম ও তার মেয়ে রুমাকে একই গ্রামে তার ছোট ভাই মামুনুর রশিদের বাড়িতে রাখেন হারুন। পরে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে রোহিঙ্গা তরুণী রুমার নামে ভুয়া জন্মসনদ তৈরি করেন তিনি। এরপর একই উপজেলার পুনট ইউনিয়নের লকইর গ্রামে তার ফুফাত ভাই আব্দুল মোমেনের ছেলে আয়নাল হোসেনের সঙ্গে রুমাকে বিয়ে দেন।
রোহিঙ্গা তরুণী রুমার মা আয়েশা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা রোহিঙ্গা এটা সত্য, তাই বলে আমাদের ছেলেমেয়ের কি বিয়ে হবে না? হারুন আমার ধর্ম ভাই। সেই সুবাদে সবুজের ছেলের সঙ্গে আমার মেয়েকে বিয়ে দিতে এসেছিলাম। বিয়ে বাবদ সবুজকে সাড়ে তিন লাখ টাকাও দিয়েছি। এখানে আসার পর আমাদের ফেলে সবুজ পালিয়েছে। এখন বাধ্য হয়ে আমার ধর্ম ভাই হারুন আমার মেয়েকে তার ফুফাত ভাইয়ের ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছে। এতে আপনাদের অসুবিধা কোথায়? ভুয়া জন্মসনদের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যা করার সব কিছুই হারুন করেছে।
রুমা বলেন, আমার কি অপরাধ? মা ও হারুন মামা আমাকে এখানে এনে বিয়ে দিয়েছে। মা সবুজ মামাকে বিয়ের জন্য সাড়ে তিন লাখ টাকাও দিয়েছে। সে আমাদের রেখে পালিয়ে গেছে। হারুন মামা স্থানীয় এক নিকাহ রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে আমাদের বিয়ে দিয়েছে। এখন আমি আয়নালের সঙ্গে ঘর সংসার করছি।
রুমা আরও বলেন, আমার মতো আরও তিন/চারজন রোহিঙ্গা মেয়ের বিয়ে হয়েছে জয়পুরহাটে। কেন আপনারা শুধু আমার দোষ ধরছেন?
আয়নালের চাচা ও সাবেক ইউপি সদস্য সাইদুর রহমান বলেন, বলা নেই, কওয়া নেই, গত বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ করে আয়নাল বিয়ে করে বউসহ বাড়িতে আসে। তাতেই আমার সন্দেহ হয় যে আয়নাল কোথায় বিয়ে করল। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, সে রোহিঙ্গা এক মেয়েকে বিয়ে করেছে। এটা আসলেই একটা ঝামেলা। বুঝুক এখন তারা কি করবে।
বর আয়নাল হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা মেয়ে জেনেই বিয়ে করেছি। তবে আইন অনুযায়ী যে রোহিঙ্গা মেয়েকে বিয়ে করা যাবে না, তা আমার জানা ছিল না। যা হবার তাতো হয়েই গেছে। এখন করার কি আছে, আপনারাই বলেন।
হারুনুর রশিদ বলেন, রোহিঙ্গা হয়েছে, তাতে কি হয়েছে? আমি ওর সব কাগজপত্র ঠিক করে প্রশাসনসহ সবাইকে ম্যানেজ করেই এ বিয়ে দিয়েছি। এখন যা হবার তাই হবে। নিকাহ রেজিস্ট্রারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নাম-ঠিকানা কিছুই বলা যাবে না।
কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াসিম আল বারী বলেন, জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ এ কল পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। সেখানে পুলিশ পৌঁছার আগে বিয়ের সম্পন্ন হয়। মেয়েটি রোহিঙ্গা কি না, তা পুলিশের জানা নেই।
এ বিষয়ে জয়পুরহাট জজ কোটের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রায়হান আলী বলেন, ফরেইনার্স অ্যাক্ট অনুসারে রোহিঙ্গা শরনার্থীরা তাদের জন্য নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে যেতে পারে না। এছাড়া আইন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে রোহিঙ্গাদের বিয়ে করা যাবে না। এ ঘটনায় তারা দুটি অপরাধ করেছেন। ওই মেয়েকে নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে নিয়ে এসেছেন। আবার নিকাহ রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে বিয়ে দেওয়া হয়েছে।