বিজিবি-বিএসএফের উদ্যোগে মায়ের শেষ দর্শন করল সন্তানরা
বিজিবি-বিএসএফের মানবিক উদ্যাগে সীমান্তের শুন্য রেখায় সন্তানদের দেখানো হলো মায়ের মরদেহ। ভারতের হাটখোলা গ্রাম থেকে খাটিয়ায় করে কাফনের কাপড়ে মোড়ানো ফজিলা খাতুনের মরদেহ আনা হলো সীমান্তের শুন্য রেখায়। দুই মেয়েসহ স্বজনরা দেখল তাদের মায়ের মুখটুকু। এ সময় সেখানে একটি হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। শত শত নারী-পুরুষ সেখানে উপস্থিত থেকে চোখের জলে সিক্ত হয়।
বিজিবি সুত্রে জানা যায়, পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার চাপড়া থানার হাটখোলা গ্রামের মৃত আবদার স্ত্রী ফজিলা খাতুন (৭০)। বার্ধক্য ও শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে শুক্রবার সকাল ৬ টার দিকে মৃত্যুবরণ করেন নিজ বাড়ীতে। এদিকে ফজিলা খাতুনের দুই মেয়েসহ আত্মীয়-স্বজন বাস করেন সীমান্তের এ পারে অর্থ্যাৎ বাংলাদেশের দামুড়হুদা উপজেলার কুতুব গ্রামে। মায়ের মৃত্যুর খবরে মাকে একবার শেষ দেখা দেখার জন্য সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির কাছে আবেদন করে ফজিলার সন্তানরা। উদ্যোগ নেয় বিজিবি। এর পর বিজিবি বিএসএফকে বিষয়টি জানায়। বিএসএফও এই মানবিক উদ্যাগে সাড়া দেয়।
এরপর শুক্রবার বিকেল পৌনে ৪ থেকে সোয়া ৫ টা পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা ব্যাটালিয়ন (৬ বিজিবি) এর অধিনস্থ মুন্সীপুর বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকার সীমান্তের মেইন পিলার ৯৩ এর কাছে সৌহার্দ্য ও শান্তিপূর্ণভাবে মরদেহ দেখানোর শেষ দর্শন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। এ পারে বাংলাদেশের কুতুবপুর-মুন্সিপুর গ্রাম। আর ওপারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাটখোলা গ্রাম। মাঝখানে একটি খাল। এক সময় সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া ছিল না। তখন দুই বাংলার মানুষের অবাধ যাতায়াত ছিল। ছিল আত্মীয়তা। বিয়ে-শাদী সবকছিুই হতো এপার বাংলা ওপার বাংলার মানুষের মধ্যে।
নিহত ফজিলা খাতুনের দুই মেয়ে ডালিমন খাতুন (৫০) ও রাবেয়া খাতুন (৪০)। তাদের বিয়ে হয়েছিল বাংলাদেশের কুতুবপুর গ্রামে। এ ছাড়াও এই গ্রামে ফজিলা খাতুনের দুই ভাতিজি শাখের ভানু (৪৫) ও সোনা ভানুরও বিয়ে হয়েছে। এখন কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে সীমান্ত ঘিরে ফেলেছে ভারত। হাটখোলা গ্রামটি পড়েছে কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে। এই গ্রামের বাসিন্দা ফজিলা খাতুন।
ফজিলা খাতুনের বড় মেয়ে ডালিমন খাতুন বলেন, আমার মায়ের মুখটুকু শেষবারের মতো দেখতে পেয়েছি এটাই আল্লাহর দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া। আমরা ধন্যবাদ জানাই বিজিবি-বিএসএফকে। এই সুযোগটুকু করে দেয়ার জন্য। তবে কষ্ট, মায়ের শরীরটা একটু ছুঁয়ে দেখতে পারলাম না। গোসল নিজ হাতে দিতে পারলাম না। খুব শিগরির পাসপোর্ট ভিসা করে যাবো মায়ের কবর দেখতে।
ফজিলা খাতুন আরও বলেন, আমার ডাক নাম ছিল ডলি। আমি ছিলাম আমার মা-বাবার বড় মেয়ে। আমার মায়ের খুব আদরের ছিলাম। আমরা ৩ ভাই ৩ বোন। দুই বোন বাংলাদেশে আছি। আর বাকীরা ভারতের হাটখোলা গ্রামে। আমার বিয়ের সময় বর্ডার এতো কড়াকড়ি ছিল না। আমার বাবার বড় মুদিখানার দোকান ছিল। আমার বাবা খুব ডাকসাইটে ছিলেন। সে সময় আমার বিয়ের খানা বিএসএফরা খেয়েছিল। তখন আমাদের এ খালে পানি থাকতো। নৌকায় আমার বিয়ে গেছিল। আমার বিয়ে হয় কুড়-লগাছি গ্রামের আনন্দবাজারে। আমার বিয়ের ১০ বছর পর আমার ছোট বোন রাবেয়ার বিয়ে হয় কুতুবপুরে।
ইউপি সদস্য কুতুবপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ। বিজিবি-বিএসএফ আমাদের নিরাপত্তার পাশাপাশি এই মানবিক কাজগুলোও করে। এ জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। চুয়াডাঙ্গা ব্যাটালিয়ন (৬ বিজিবি)ও পরিচালক লে.কর্নেল শাহ মোঃ ইশতিয়াক পিএসসি বলেন, ভারতীয় ভূখন্ডে বসবাসরত মুত্যুবরণকারী নাগরিককে বাংলাদেশে বসবাসকারী পরিবারের সদস্যদের শেষ দর্শনের অনুরোধের প্রেক্ষিতে বিজিবি-বিএসএফ এর সমন্বয়ে মানবতামূলক কার্যক্রম সম্পন্ন করে।
সীমান্তে শান্তি, সম্প্রীতি এবং উভয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে সু-সম্পর্ক উন্নয়নের অগ্রযাত্রার অংশ হিসেবে বিজিবি-বিএসএফ এর মানবতামূলক কার্যক্রম উভয় দেশের সীমান্তে বসবাসরত সীমান্তবর্তী জনগণের মধ্যে সুসস্পর্ক উন্নয়ন সাধিত হবে এবং ভবিষ্যতে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। এছাড়াও উভয়ই সীমান্তে ভ্রাতৃত্ববোধ বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে আন্তঃ রাষ্ট্রীয় সীমান্ত অপরাধ হ্রাস পাবে বলে আশা করা যায়।
এএজেড