খুলনায় মামলার চাপে বিএনপি, রাজনীতির মাঠ ছাড়তে নারাজ আওয়ামী লীগ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতির মাঠ সরব হয়ে উঠেছে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন ক্ষমতাসীনরা। এক্ষেত্রে একচুলও ছাড় দিতে রাজি নয় দলটি। অপরদিকে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে চুড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। বিএনপি নেতা-কর্মীরা বলছেন, যেকোনো পরিস্থিতি মাঠেই মোকাবিলা করবেন তারা। তবে নেতারা জানান, খুলনায় গণসমাবেশের পর মিথ্যা মামলার চাপে পড়েছেন দলটির নগর শাখার নেতা-কর্মীরা।
প্রায় ২ মাসেরও বেশি সময় দেশব্যাপী লাগাতার কর্মসূচি পালন শেষে গত ১২ অক্টোবর থেকে ১০ বিভাগে গণসমাবেশ শুরু করেছে বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২২ অক্টোবর খুলনায় গণসমাবেশ করে দলটি।
খুলনা নগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা বলেন, বাধা দিয়েও গণসমাবেশে জনস্র্রোত ঠেকাতে পারেনি আওয়ামী লীগ। তাদের ব্যর্থতা ঢাকতে এখন বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, সমাবেশের দিন ভাঙচুরের ঘটনায় নগরীর বিভিন্ন থানায় নগর বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে চারটি মামলা করেছেন খুলনা রেলস্টেশন মাস্টার ও আওয়ামী লীগ নেতারা। এসব মামলায় কাউন্সিলর, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের সিনিয়র নেতাসহ ৭২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন ১২ জন।
মনা বলেন, ২২ অক্টোবর রাতে খুলনা রেল স্টেশন ভাঙচুরের অভিযোগ করে জিআরপি থানায় অজ্ঞাতপরিচয় বিএনপির ১৭০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেন স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার। এর পরদিন ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগে নগরীর দৌলতপুর থানায় মামলা করেন ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক কাজী মোবাশ্বের। এই মামলায় দৌলতপুর থানা ও ওয়ার্ড বিএনপির ৫৯ জন নেতার নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত পরিচয় ২০০ জনকে আসামি করা হয়।
এ ছাড়াও গণসমাবেশের দিন শ্রমিক লীগের সভাপতিসহ কয়েকজনকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ এনে একইদিন নগরীর দৌলতপুর থানায় আরেকটি মামলা করেন নতুন রাস্তা বেবি স্ট্যান্ড শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন। এই মামলায় ৫৯ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত পরিচয় ১৫০/২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তা ছাড়াও ২৬ অক্টোবর নগরীর সোনাডাঙ্গা থানায় মোটরসাইকেল ভাঙচুরের অভিযোগ এনে মামলা করেন ১৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। এই মামলায় নগরীর ১৮ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত পরিচয় ১৪০/১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, মামলা নিয়ে ভীত নয় বিএনপি। আইনিভাবে মামলা মোকাবিলা করা হবে। পাশাপাশি রাজপথেও আন্দোলন চলবে।
অন্যদিকে খুলনায় বিএনপির গণসমাবেশের পর রাজনীতির মাঠ নিজেদের দখলে রাখতে নানা পরিকল্পনা করেছে আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে নগরীর দৌলতপুর নতুন রাস্তা মোড় ও হাদিসপার্কে দুটি জনসভার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। একইসঙ্গে নগরীর ৫টি থানায় বর্ধিত সভার মাধ্যমে দলকে সংগঠিত করার পরিকল্পনা নিয়েছে দলটি।
এ প্রসঙ্গে খুলনা নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, গত ২৭ অক্টোবর রাতে দলীয় কার্যালয়ে খুলনা নগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় ৪ নভেম্বর নগরীর দৌলতপুর নতুন রাস্তা মোড় ও ১ ডিসেম্বর নগরীর শহীদ হাদিস পার্কে জনসভার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়াও তৃণমূল পর্যায়ে দলকে শক্তিশালী করতে ২ নভেম্বর সদর থানা, ৫ নভেম্বর সোনাডাঙ্গা থানা, ১১ নভেম্বর খালিশপুর থানা ও ১২ নভেম্বর খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা করার সিদ্ধান্ত হয়। সভায় দিবসভিত্তিক বিভিন্ন কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়।
আবদুল খালেক আরও বলেন, হঠাৎ সরব হওয়া বিএনপির সমাবেশ জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। আমরা জনসভা করে দেখাতে চাই, জনগণ কাদের সঙ্গে আছে।
বিএনপি নেতাদের উস্কানি এবং সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের জবাব রাজনৈতিকভাবে সমাবেশে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এসআইএইচ