রাস্তা নির্মাণ না করেই সাড়ে ৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভোমরা ইউনিয়নের ৪টি গ্রামীণ রাস্তার কোনো কাজ না করে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টাকার বিল উত্তোলন করে ভাগবাটোয়ারা করে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় তোপের মুখে পড়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইসরাইল গাজীসহ প্রকল্প ৪টির সভাপতি ওই ইউনিয়নের সংরক্ষিত ১, ২, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্য আমিনা খাতুন শিলা এবং ৭, ৮, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্য রাবেয়া সুলতানা।
সরেজমিনে গেলে স্থানীয় জানান, ভোমরা ইউনিয়নের ২০২১-২২ অর্থবছরের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড হাড়দ্দহার সৈয়দ আলীর বাড়ির মোড় থেকে পূর্বদিক অভিমুখে ইটের সোলিং করার জন্য ১ লাখ ৩ হাজার ৪০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে এই রাস্তায় বরাদ্দের টাকার বিন্দুমাত্র কাজ হয়নি। ১০ বছর আগে তৈরি হওয়া রাস্তাটিকে ইটের রাস্তা দেখিয়ে বরাদ্দের টাকা আত্মসাত করেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
তারা জানান, হাড়দ্দহারের মতো একই চিত্র ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড ভোমরায়। এখানে ওবায়দুল চৌকিদ্বারের পুকুরের পাড় খুঁটি দিয়ে মেরামতের জন্য ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। স্থানীয় ইউপি সদস্য সাজ্জাত নিজস্ব অর্থায়নে পাড় মেরামতের উদ্যোগ নিলেও বরাদ্দের এক টাকাও এখানে খরচ করা হয়নি।
এ সময় স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, এই দুই ওয়ার্ডের রাস্তা নির্মাণ কাজের প্রকল্প সভাপতি ছিলেন মহিলা ইউপি সদস্য আমিনা খাতুন শিলা। চেয়ারম্যান ইসরাইল গাজীর যোগসাজশে এই দুই ওয়ার্ডের রাস্তা নির্মাণ না করে প্রকল্পের ৩ লাখ ৩ হাজার ৪০০ টাকা আত্মসাৎ করে ভাগবাটোয়ারা করা হয়েছে।
এদিকে ইউনিয়রের ৩ নম্বর ওয়ার্ড বায়তেখালী পিচের মুখ হতে ভূমি অফিস অভিমুখে ইটের সোলিং করার জন্য ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে এখানেও কোনো প্রকার কাজ হয়নি। ৭ বছর আগে তৈরি হওয়া রাস্তাটিকে ইটের রাস্তা দেখিয়ে এখানেও বরাদ্দের সব টাকা আত্মসাৎ করেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়াও ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড শ্রীরামপুর এলাকার হায়দার বিশ্বাসের মোড় হতে গয়েশপুর অভিমুখে রাস্তা সংস্কারের জন্য ২ লাখ ৬ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে কোনো প্রকার কাজ না করেই চেয়ারম্যানের যোগসাজশে এ দুই ওয়ার্ডের বরাদ্দকৃত ৪ লাখ ৬ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাৎ করে ভাগবাটোয়ারা করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প দুইটির সভাপতি ৭, ৮, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রাবেয়া সুলতানার বিরুদ্ধে।
স্থানীয়রা বলেন, শ্রীরামপুর এলাকার রাস্তা সংস্কারে সর্বোচ্চ ৪০০ ইট ব্যবহার করা হয়েছে। আর এই ৪০০ ইটের অধিকাংশ পুরাতন ও ভাঙ্গাচুরা। এখানে বরাদ্দের ২ লাখ ৬ হাজার ৫০০ টাকা নয় বরং সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা খরচ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বায়তেখালী এলাকার স্থানীয় ইউপি সদস্য কবির হোসেন বলেন, বায়তেখালী পিচের মুখ হতে ভূমি অফিস অভিমুখে ইটের সোলিং করার জন্য ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কবে কখন এ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে সেটা জানি না। আর এই রাস্তা নির্মাণ করা হয়নি। অথচ রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে জানিয়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বিল উত্তোলন করেছে।
এ সময় অভিযোগ করে তিনি বলেন, চেয়ারম্যানের যোগসাজশে নিয়ম বহির্ভূতভাবে রাস্তার কাজ না করে বিল উত্তোলন করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
কবির হোসেনের মতো একই ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাজ্জাত বলেন, তার এলাকার গ্রাম চৌকিদ্বার ওবায়দুলের বাড়ির পাশের রাস্তার পুকুরের পাড় খুঁটি দিয়ে মেরামতের জন্য ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে বরাদ্দের এক টাকাও এখানে খরচ করা হয়নি। বরং স্থানীয়সহ তার নিজস্ব অর্থায়নে পুকুর পাড়ে ৪০টি সিমেন্টের খুঁটিঁ পুতা হয়। অথচ এই পাড় মেরামত করা হয়েছে জানিয়ে ২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে নেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
এসব ব্যাপারে অভিযুক্ত ১, ২ , ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্য আমেনা খাতুন শিলার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। তবে অভিযুক্ত অপর ইউপি সদস্য ৭, ৮, ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রাবেয়া সুলতানা জানান, এই কাজের ভিতরে আমি কিছু না। যা করেছে কন্ট্রাক্টর। প্রকল্পের সভাপতি হিসেবে বিল উত্তোলনে তার স্বাক্ষর জানালে তিনি বলেন, আমি এসবের কিছু জানি না। চেয়ারম্যান যেভাবে বলেছে আমি সেভাবে করেছি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান ইসরাইল গাজী বলেন, আপনাকে কে বলেছে কাজ হয়নি। স্থানীয়রা বলেছে জানালে তিনি বলেন, স্থানীয়রা কখনও বলবে না। স্টেটমেন্ট অনুযায়ী কাজ হয়েছে বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।
এসআইএইচ