স্বপ্ন দেখাচ্ছে ইবরা মৌ খামার
সরিষার রূপ আর গন্ধে মাতোয়ারা চারিদিক। হলুদের এমন দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য দেখতে প্রকৃতি প্রেমিরা যেমন ছুটছেন ঠিক তেমনিভাবে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌ খামারিরা। ইবরা মৌ খামারে বসানো হয়েছে শতাধিক বক্স। মৌমাছিরা ফুলে ফুলে ঘুরে মধু নিয়ে এই বাক্সেই জমায়। আর সেই মধু সংগ্রহ করে বিক্রি করে মৌ চাষিরা।
ফেনী সদর উপজেলার ফাজিলপুর ইউনিয়নের কালিদাস পাহালিয়া নদীর তীর সংলগ্ন ১৬ একর জায়গাজুড়ে ৮ বন্ধু গড়ে তুলেন কে.পাহালিয়া এগ্রো পার্ক। এখানকার ৬ একর জায়গায় সরিষা আবাদ করছেন তারা। ক্ষেতের পাশে মৌ বক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করছেন মৌ-খামারিরা। ৫ বছর ধরে মৌ-বক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করেন তারা।
খামার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইবরা মৌ খামারে মৌ চাষিরা ১০০ বক্স বসিয়েছেন। খামার থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে একদম খাঁটি মধু বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় লোকজনদের পাশাপাশি বিভিন্ন ছোট খাটো কোম্পানিও এখান থেকে মধু সংগ্রহ করছেন।
ইবরা মৌ-খামারের পরিচালক মেজবাহ উদ্দিন শামীম বলেন, ৫ বছর যাবত তারা এই পেশায় জড়িত। বছরের ৫-৭ মাস মৌমাছিদের চিনিযুক্ত খাবার দিতে হয়। আর এই মৌমাছি থেকে তারা আয় করেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, গত বছর জেলায় সরিষার আবাদ হয়েছিল ১ হাজার ৮০৬ হেক্টর জমিতে। চলতি বছরে চাষ হয়েছে ৩ হাজার ৪৯৪ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে আবাদের পরিমাণ বেড়েছে ১ হাজার ১৪৭ হেক্টর। চলতি বছরের চাষাবাদের হিসেবে ৪ হাজার ৬৭০ মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতি কেজি সরিষা থেকে ৪০০ গ্রাম সরিষার তেল পাওয়া যায়। এখানে বারি সরিষা-৯, বারি সরিষা-১০, বারি সরিষা-১১, বারি সরিষা-১২, বারি সরিষা-১৩, বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৫, বারি সরিষা-১৬, বারি সরিষা-১৭, বিনা সরিষা-৪, বিনা সরিষা-৭, বিনা সরিষা-৮, বিনা সরিষা-৯ এবং বিনা সরিষা-১০ জাতের সরিষাও চাষাবাদ করছেন কৃষকরা।
অধিদপ্তর আর জানায়, জেলায় সরিষা আবাদের জন্য ১৩ হাজার ৫০০ জন কৃষককে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। প্রতি জনে ১ বিঘা জমির জন্য সার ও বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। সরিষার আবাদ বাড়ার জন্য ৪৬৭টি প্রদর্শনী করা হয়েছে। সেসব কৃষককে বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে সার, বীজ, ট্রেনিংসহ যাবতীয় সহযোগিতা।
এ ব্যাপারে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু তৈয়ব বলেন, মৌমাছির পরাগায়নের ফলে সরিষার ১০-১২ ভাগ ফলন বৃদ্ধি পায়। ফুল থেকে অতিরিক্ত একটা মধু আহরিত হয়। এতে একদিকে সরিষার উৎপাদন বাড়ছে অপরদিকে এই ফুল থেকে মধু আহরণ করা যাচ্ছে। সমন্বিত এই চাষে সরিষা চাষি ও মৌ চাষি উভয়ই লাভবান হচ্ছেন।
ফেনী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমীন আক্তার মধু আহরণ সম্পর্কে বলেন, এই সরিষার ক্ষেত (ইবরা মৌ খামার) থেকে গত বছরও মধু আহরণ হয়েছিল ৫০০ কেজি। এই বছরে ইতিমধ্যে ৩০০ কেজি মধু সংগ্রহ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গতবারের তুলনায় এবার আরও বেশি মধু আহরণ সম্ভব হবে।
ফেনীস্থ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক মো. একরাম উদ্দিন বলেন, ভোজ্য তেলের দাম রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদার ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। তবে সরকার চাইছে আমদানি নির্ভরতা কিছুটা কমিয়ে দেশেই উৎপাদন বৃদ্ধি করতে। সরকারের লক্ষ্য হলো আগামী তিন বছরের মধ্যে ভোজ্য তেল আমদানী ৫০ শতাংশ কমিয়ে নিয়ে আসা। এ জন্য সরিষার উৎপাদন বাড়াতে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে সরিষার ফুল থেকে মধু আহরণ করে বাড়তি আয় করছে চাষিরা।
এসআইএইচ