পাউবো অফিসে কর্মচারীকে আটকে রেখে নির্যাতন
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) রাজশাহী পওর বিভাগের কার্যালয়ে এক অফিস সহকারীকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই কর্মচারীকে দুপুর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত অফিসে আটকেও রাখা হয়েছিল। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। এ নিয়ে ওই কর্মচারী বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় অভিযোগ করেছেন।
ভুক্তভোগী ওই কর্মচারীর নাম কামরুল হাসান। তিনি পাউবোর অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর তিনি পাউবোর রাজশাহী পওর বিভাগে বদলি হয়ে আসেন। বুধবার (১২ জানুয়ারি) তিনি অফিসেই শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। অফিস প্রধান ও রাজশাহী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম শেখকেও অভিযুক্ত করছেন কামরুল।
কামরুল তার থানায় দেওয়া অভিযোগে বলেছেন, ‘রাজশাহীতে যোগদানের পর থেকে তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন নির্বাহী প্রকৌশলী। গত মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরের পর অফিসে দুজন পিয়ন ছাড়া ঊর্দ্ধতন কোনো কর্মকর্তা ছিলেন না। পারিবারিক জরুরি কাজ পড়ায় তিনি একজন পিয়নকে বলে বাসায় যান। এ কারণে বুধবার নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করার জন্য অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক তালিমুল ইসলামকে নির্দেশ দেন। তখন কামরুল এর প্রতিবাদ করে বলেন, ‘সেদিন অফিসে দুজন পিয়ন ছাড়া আর কেউই ছিলেন না। তাহলে সবাইকেই কারণ দর্শানোর নোটিশ করা উচিত।’ তিনি এ কথা বলার কারণে নির্বাহী প্রকৌশলী উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘কারও নামেই নোটিশ হবে না, শুধু কামরুলের নামেই হবে।’
এরপর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কামরুল তার সহকর্মী তালিমুল ইসলামের কাছে নিজের কাজ বুঝে চাইলে তিনি বলেন, ‘নির্বাহী প্রকৌশলী নাকি বলেছেন তাকে শুধু ৯টা থেকে ৫টা বসিয়ে রাখা হবে। কোন কাজ করতে দেওয়া হবে না। তিনি কামরুলকে কাজ না দিয়ে গালিগালাজ শুরু করেন। গালাগালি শুনে নির্বাহী প্রকৌশলী দুজনকেই তার রুমে ডাকেন। দুজনে তার রুমে গেলে নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুলকে আরও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন এবং প্রাণনাশের হুমকি দেন। প্রতিবাদ করলে তিনি নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে কামরুলকে মারতে শুরু করেন। পরিস্থিতি এ রকম দেখে কামরুল মোবাইল ফোনে রেকর্ড শুরু করেন।’
এটি দেখতে পেয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী তার ফোন কেড়ে নেন এবং আরও বেশি মারধর শুরু করেন। এ সময় নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশে উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুকেশ কুমার, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রিফাত করিম ও ওবায়দুল ইসলাম, সহকারী প্রকৌশলী আবদুর রশিদ ও অফিস সহকারী তালিমুল ইসলাম কামরুলকে জাপটে ধরে চড় থাপ্পড়, ঘুষি ও লাথি মারতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি মেঝেতে পড়ে গেলে সুকেশ হাঁটু দিয়ে কামরুলের গলা চেপে ধরে শরীরের ওপরে বসে থাকেন। এভাবে তিনি শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করেন। অভিযুক্ত অন্যরা তখন কামরুলকে কিল, ঘুষি ও লাথি মারতে থাকেন। এভাবে প্রায় ৩০ মিনিট ধরে কামরুলকে নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়।
কামরুল জানান, নির্যাতনের পর তাকে তার শাখায় যেতে দেওয়া হয়। তবে তিনি যেন বাইরে যেতে না পারেন তার জন্য তাকে দেখে রাখার নির্দেশ দেন নির্বাহী প্রকৌশলী। সে সময় তার মোবাইলের রেকর্ডিং ডিলিট করার জন্য পাসওয়ার্ড জানাতে তাকে চাপ দেওয়া হয়। তিনি পাসওয়ার্ড না দেওয়ায় সুকেশ নির্বাহী প্রকৌশলীকে পরামর্শ দেন, তার বিরুদ্ধে চারটি ফাইল চুরির যেন মামলা করা হয়। এ কারণে পুলিশ ডাকতে হবে। তাদের ফোন কল পেয়ে বেলা আড়াইটার দিকে পুলিশ যায়। এরপর কামরুল পুলিশের মোবাইলের মাধ্যমেই নিজের বাড়িতে খবর দেন। বিকালে তার স্ত্রী অফিসে গিয়ে স্বামীকে আটকে রাখার বিষয়ে ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেও কেউ কথা বলেননি। পরে কামরুলের স্ত্রী বোয়ালিয়া থানায় যান। এরপর রাত সাড়ে ১০টার পরে বোয়ালিয়া থানা পুলিশের আরেকটি দল অফিস থেকে কামরুলকে উদ্ধার করে আত্মীয়-স্বজনদের জিম্মায় দেয়। পরে কামরুল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য অভিযুক্ত সবার সঙ্গেই মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তালিমুল ছাড়া অন্য কারও ফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি। তালিমুল দাবি করেন, অফিসে কী হয়েছে সেটা তিনি জানেনই না। অন্য অভিযুক্তদের সঙ্গে কথা বলতে দুপুর দেড়টায় অফিসে গেলেও কাউকে পাওয়া যায়নি। নির্বাহী প্রকৌশলীর পাশের কক্ষে বসেন প্রাক্কলনিক মাসুমা ফেরদৌস। তিনি জানান, নির্বাহী প্রকৌশলী চাঁপাইনবাবগঞ্জে।
বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারন চন্দ্র বর্মন বলেন, কামরুল অভিযোগ দিয়েছেন দুপুরে। তার আগে রাতেই নির্বাহী প্রকৌশলী তাঁর বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ দিয়েছেন। তাতে বুজছি, দুইপক্ষের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। ওসি জানান, কামরুলের মোবাইল ফোন জব্দ আছে। সেটি পরীক্ষা করা হচ্ছে। কোন রেকর্ডিং যদি থেকেই থাকে তাহলে তা ঘটনাটি আমাদের বুঝতে সাহায্য করবে। এটা তদন্তের ব্যাপার।
এসএসকে/এএন