জলাবদ্ধতায় ৫ হাজার বিঘায় সরিষা চাষ অনিশ্চিত
মানিকগঞ্জ সদর উপজেরার গজারিয়া চকের ৫ হাজার বিঘা ৩ ফসলি জামি এখন জলাবন্ধতার কারণে ১ ফসলি জমিতে রূপান্তরিত হয়েছে। কয়েক বছর ধরে এ অঞ্চলের কৃষকরা এই চকে শুধু রোরো ধান রোপন করে আসছেন। এক সময়ে এই চক ছিল শষ্যভান্ডার হিসাবে পরিচিত। আজ অপরিকল্পিতভাবে খাল ভরাট করে রাস্তা নির্মান এবং খালের উপরে মাটির বাধ দেওয়ার কারনে এই জলাবদ্ধতার সৃস্টি হয়েছে। সে কারণে প্রায় ১১টি গ্রামের দেড় হাজার কৃষক পরিবার এখন পথে বসার উপক্রম হয়ে গেছে। তবে এবছর চকে সরিষা চাষের উপযোগী করার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পানি নিস্কাশনের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কৃষি অধিদপ্তর বলছেন জলাবদ্ধতা না থাকলে এই চকে ৮ কোটি টাকার সরিষা আবাদ করা সম্ভব।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন উপজেলার পৌরসভা ও দিঘী ইউনিয়নের মধ্যে এই চকটির তিন দিকে রয়েছে পৌলি, চামটা, সেওতা, বান্দুটিয়া, খাগড়াখড়ি, ভাটবাউর গ্রাম। উত্তর দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক। মহাসড়কের তিনটি কালভার্টের নিচ দিয়ে পাশের খাল থেকে বর্ষার পানি এই চকে ঢোকে। আবার বর্ষা মৌসুম শেষে ওই খালদিয়েই পানি বেড়িয়ে যায়।
এছাড়াও সেওতা এলাকার আবেদ মিয়ার বাড়ি থেকে মাখু বাবুচীর ব্রীজ পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার খাল ভরাট করে পাইপ বসিয়ে ড্রেন নির্মান করা হয়েছে গজারিয়াা চকের পানি নিস্কাশনের জন্য। কিন্তু ড্রেনটি গজারির চক থেকে প্রায় তিন ফুট উচু করে নির্মানের ফলে বর্ষার পানি নিঃস্কাশন হতে পারছেনা। এছাড়াও ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন খালটিও বেশ কিছু স্থানে ভারাট করা হয়েছে। ফলে জলাবদ্ধতা আরও বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
কৃষক জসিম উদ্দিন বলেন, একসময় গজারিয়া চক ছিল বিশাল একটি বিল। প্রায় সারা বছর পানি থাকতো। কালক্রমে বিলটি ভরাট হয়ে গত প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে তিন ফসলি জমিতে পরিণত হয়। পর্যাক্রমে সরিষা, বোরো, ও আমন ধানের আবাদ হয়ে আসছিল। কিন্তু চকে পানি ঢোকার খালের উপর বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করায় পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ভরা বর্ষায় পানি ঢুকতে পারলেও বর্ষা মৌসুম শেষে পানি আর বের হতে পারেনা। পুরো চকই প্রায় চার পাঁচ ফুট পানিতে ডুবে থাকে।
কৃষক মো. হাসেম আলি বলেন, গজারিয়া চকে আমার ২ বিঘা জমি আছে। পাঁচ বছর আগেও তিন ফসলি জমি ছিল। এবার সরিষা চাষের মৌসুমেও জমি থেকে পানি নামেনি। জমির যে অবস্থা তাতে এবার আর সরিষা চাষ করতে পারবনা। তিনি বলেন এভাবে থাকলে বোরো আবাদও করা সম্বব হবেনা।
কৃষক আলি আহামেদ বলেন, এই জমির ওপরেই পুরো পরিবার নির্ভরশীল। গত কয়েক বছর ধরে কেবল বোরো ধান চাস করতে পারছি। অন্যায় ভাবে বাধ দিয়ে আমাদের সর্বনাশ করা হচ্ছে। প্রশাসন কিম্বা রাজনৈতিক নেতা কেও সাহায্যে এগিয়ে আসছেনা বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
দিঘী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আখতার উদ্দিন আহমেদ বলেন, জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পেতে কৃষকেরা মিলে কয়েক বার মানববন্ধনসহ জেলা প্রশাাসক বরাবর লিখিত আকারে স্বারক লিপি দিয়েছেন। কিন্তু অপরিকল্পিত ভাবে রাস্তা, কালভাট, বাঁধের ফলে গজারিয়া চকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি। তবে এবছর জেলা প্রশাসন থেকে চকের জমে থাকা পানি নিস্কাশনের জন্য ব্যবস্থা নিয়েছেন।
মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রাসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু মো. এনায়েত উল্লাহ গজারিয় চকের জলবদ্ধতার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, জলবায়ু ট্রাস্টের অর্থায়নে যে ড্রেনটি করা হয়েছে তা সঠিক ভাবে হয়নি। যে কারনে জলবদ্ধতা সুষ্টি হচ্ছে। তিনি জানান, জলব্ধতা নিরসনে আমরা পাম্পের মাধ্যমে পানি নিঃস্কাশনের ব্যবস্থা নিয়ে এ বছর চকে সরিষা আবাদের চেস্টা করছি। আবাদ করতে পারলে ৮ কোটি টাকার সরিষা উৎপাদন করা সম্বব হবে বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন বোরো আবাদ করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি। আমরা আশা করছি এই চকের জমি থেকে এ বছর আট হাজার মেট্রিকটন চাল উৎপাদন কারবো।
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, গজারির চকে জলবদ্ধাতা নিরসনে জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ, কৃষি সম্প্রসারন, পৌরসভা, ও উপজেলা পরিষদ নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। চকে যেন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি না হয় সে বিষয়ে কাজ শুরু করেছে। আগামী দশ পনের দিনের মধ্যে এর সুফল পাওয়া যাবে। কৃষকরা এ বছরই সরিষার আবাদ করতে পারবে বলেও জানান তিনি।
এএজেড