আমনের বাম্পার ফলন, দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা
নেত্রকোনায় আগাম জাতের রোপা আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। ফলনও হয়েছে বাম্পার। কিন্তু উৎপাদনে যে খরচ হয়েছে সে তুলনায় কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না কৃষকেরা। এবার জ্বালানি তেল, সারসহ ধান চাষের অন্যান্য উপকরণ বেশি দামে কেনায় উৎপাদন খরচও বেশি হয়েছে। কিন্তু খরচের তুলনায় বাজারে উৎপাদিত আমন ধানের দাম কম।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস বলছে, ধানের উৎপাদন ভালো হয়েছে। আগাম জাতের ধান কেটে একই জমিতে সরিষা, আলু ও শাকসবজি চাষ করতে পারবেন কৃষকেরা। আবার সরিষা ও শাকসবজির আবাদ শেষে একই জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা যাবে। দামও মোটামুটি ভালো।
স্থানীয় কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার প্রতি ১০ শতাংশ জমিতে আমন ধান উৎপাদনে সার, বীজ, রোপণ ও ধান মাড়াইসহ মোট খরচ হয়েছে প্রায় ৩ হাজার টাকা। ধান হয়েছে ৪ মণ। প্রতি মণ ধান বর্তমান বাজার দরে গড়ে ১ হাজার ১০০ টাকা। এতে ১০ শতাংশ জমির ধান কৃষক বিক্রি করছেন ৪ হাজার ৪০০ টাকায়।
নিজের শ্রম বাদ দিয়ে ১০ শতাংশ জমি চাষ করে একজন কৃষকের মাত্র ১ হাজার ৪০০ টাকা থাকছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার কারণে এই লাভ তুলনামূলকভাবে কম। ধানের দাম কম থাকায় তাদের লাভ কম হচ্ছে।
সদর উপজেলার সিংহের বাংলা ইউনিয়নের সিংহের রৌহি গ্রামের কৃষক ফারুক মিয়া বলেন, এবার ৮-১০ একর জমিতে ধান চাষ করেছি। ধান রোপণের পর মাঝে কয়েক দফা বৃষ্টি হওয়ায় ফলন ভালো হয়েছে। প্রতি বিঘায় ১১-১২ মণ ধান হয়েছে। এবার পোকামাকড়ের আক্রমণ কম ছিল।
তিনি আরও বলেন, পুরো মাঠের ধানই পাকতে শুরু করেছে, তবে উঁচু জমিগুলোর ধান কাটতে শুরু করেছি। প্রতি মণ (৪০ কেজি) ধান ১ হাজার ১০০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারছি। ধান উৎপাদনে তেল, সার বেশি দামে কিনতে হয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় হারভেস্টর দিয়ে খেত থেকে ধান কাটানোর খরচও বেড়ে গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মাঠের প্রায় সব ধানই পাকা শুরু করেছে। কিছু কিছু জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। পুরো মাঠের ধান পাকলে হারভেস্টর দিয়ে ধান কাটা শুরু হবে। আপাতত কম জমির ধান নিজেরা সঙ্গে থেকে দিনমজুর দিয়ে কাটাচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি আমন মৌসুমে ১ লাখ ৩২ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে।
নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের সহযোগিতার ফলে জেলায় আমন ধানের উৎপাদন ভালো হয়েছে। সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান সংগ্রহ শুরু করলে চাষীরা আরও লাভবান হবেন।
এএজেড