ফেনীতে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ

ফেনীতে বেড়েছে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ। চলতি মাসে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ২৮ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। পূর্বের তুলনায় এই সংখ্যা বেশি বলে জানিয়েছেন ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আসিফ ইকবাল।
ডা. আফিস জানান, প্রতিদিনই গড়ে জেনারেল হাসপাতালে আসছেন রোগীরা। এদের মধ্যে কেউ কেউ চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে চলে গেলেও গুরুতর অসুস্থ অনেককে হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে।
ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ডা. আসিফ বলেন, বর্ষাকাল এলেই এডিস মশার প্রকোপ বৃদ্ধির সাথে সাথে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যায়। তবে এ বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে বৃষ্টি হওয়ায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। শুধু সরকারি হাসপাতাল নয়, ফেনী ডায়াবেটিক হাসপাতালেও ভর্তি হচ্ছে ডেঙ্গু আক্রান্তরা।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, গত দুই সপ্তাহে ফেনী ডায়াবেটিক হাসপাতালে ৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। গত ১১ অক্টোবর থেকে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে ফেনী পৌরসভার ১৮টি ওয়ার্ডে মশক নিধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
কার্যক্রমের উদ্বোধনের দিন পৌর মেয়র স্বপন মিয়াজী জানিয়েছিলেন, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগ প্রতিরোধে ৬টি ফগার মেশিনের মাধ্যমে ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ওষুধ ছিটানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে পৌরসভা। এডিস মশার প্রাদুর্ভাব রোধে পৌরসভার পক্ষ থেকে মাঝে মাঝে মশক নিধন ওষুধ প্রয়োগ করা হলেও পৌর এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে নিয়মিত এ কার্যক্রম অব্যাহত রাখার দাবি পৌর নাগরিকদের।
মনিরুল নামে এক পৌর নাগরিক বলেন, মাঝেমধ্যে ফেনী পৌরসভার পক্ষ থেকে মশক নিধন ওষুধ প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। শুধুমাত্র একদিন ওষুধ প্রয়োগ করে এডিস মশার প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধ সম্ভব নয়। নিয়মিত প্রতিটি ওয়ার্ডে মশক নিধন ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতার বিকল্প নেই উল্লেখ করে নুর হোসেন নামে একজন বলেন, শুধুমাত্র পৌরসভার ওষুধ প্রয়োগে ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন জনগণের সচেতনতা। আমরা একটু সচেতন হলে আমাদের বসতবাড়ির আশপাশে যেন কোথাও পানি জমে না থাকে। এ বিষয়ে সতর্ক থাকলে এডিস মশার বংশ বিস্তার রোধ সম্ভব।
এদিকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক দর্শনার্থী বলেন, শুধুমাত্র পৌর এলাকায় মশক নিধন ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। ইউনিয়ন পর্যায়ে একদমই করা হয় না। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে এলাকাভিত্তিক মশক নিধন ওষুধ প্রয়োগও জরুরি।
এ ব্যাপারে মেয়র স্বপন মিয়াজী জানান, সকলের প্রচেষ্টায় মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। প্রতিটি ওয়ার্ডের ঝোপঝাড় পরিষ্কারসহ যেখানে মশার জন্ম হয় সেসব স্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলে মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্ত থাকা যাবে। বিশেষ করে যারা ছাদ বাগান করেন তার টবে বা হাউজে পানি জমে থাকে কিনা তা খেয়াল রাখলে এডিস মশা জন্মাতে পারবে না।
ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে পৌরবাসীর প্রতি সহযোগিতা কামনা করে মেয়র বলেন, পরিষ্কার ও বদ্ধ পানি এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র। তাই বাসা-বাড়ির আশপাশে ডাবের খোসায়, ফুলের টবে, ছাদে, ফ্রিজের নিচের ট্রেতে যাতে পানি জমে না থাকে সেদিকে পৌরবাসীকে খেয়াল রাখতে হবে। এ ছাড়াও ফেনী পৌরসভার পক্ষ থেকে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করা হবে বলে জানান পৌর মেয়র।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসানও। রবিবার (১৬ অক্টোবর) সকালে নিজ সম্মেলন কক্ষে জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় সভায় এ নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।
জেলা প্রশাসক বলেন, নিজের বাড়িঘর, অফিসের আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলে এডিস মশা জন্মাতে পারবে না।
ডেঙ্গুর ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সকল রাস্তাঘাট, অফিস, আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাড়িসহ সরকারি বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে ও অভিযান পরিচালনা করতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সকল প্রতিষ্ঠানের আশপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ পৌরসভাকে কাজ করতে হবে।
এসআইএইচ
