হত্যা করে শিশুর মরদেহ রান্নাঘরে পুতে রাখেন সৎ মা
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে নিখোঁজের চার দিন পর সৎ মায়ের বাবার বাড়ির রান্নাঘর থেকে আহম্মদ শাহ সাইফ নামের তিন বছরের এক শিশুর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সৎ মা কোহিনুর বেগমকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) সকালে নিহত শিশুর বাবা মিরন হোসেন মামলা দায়ের করেন। এর পরই তাকে আদালতে পাঠায় রামগঞ্জ থানা পুলিশ।
এর আগে সোমবার (২৯ আগস্ট) বিকালে রামগঞ্জ উপজেলা দরবেশপুর ইউনিয়নের উত্তর দরবেশপুর গ্রামের চৌকিদার বাড়ির মৃত মোবারক হোসেনের রান্নাঘরে পুতে রাখা অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
নিহত শিশু আহাম্মদ শাহ ওরপে সাইফ চাঁদপুরের হাজিগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ রায়চর গ্রামের মো. মিরন হোসেন ও শারমিন আক্তারের ছেলে।
রামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. এমদাদুল হক এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন,গত (২৬ আগষ্ট) শুক্রবার থেকে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ দক্ষিণ রায়চর জিয়া নগর ছৈয়াল বাড়ির মিরন হোসেনের ছেলে তার বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজাখুজির পর না পাওয়ায় গত রবিবার (২৮ আগস্ট) হাজীগঞ্জ থানার সাধারণ ডায়েরি করে শিশুটির বাবা মিরন। পরে বিষয়টি রামগঞ্জ থানাকেও অবহিত করা হয়। পুলিশ বিষয়টি তদন্তকালে শিশুর সৎ মাকে সন্দেহবশত জিজ্ঞাসাবাদ করলে-‘রাগের মাথায় তল পেটে লাথি মারায় শিশু আহাম্মদের মৃত্যু হয় বলে শিকার করেন সৎ মা কোহিনুর বেগম’। পরে কোহিনুর বেগমের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তার বাবার বাড়ির রান্না ঘরে মাটিতে পুতে রাখা অবস্থায় শিশু আহাম্মদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন।
স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শিশু আহম্মদ শাহ সাইফের আড়াই বছর বয়সকালে তার বাবা মিরন হোসেন পরকীয়া করে অন্যত্রে বিয়ে করে তার প্রথম স্ত্রী শারমিন আক্তারকে তালাক দেন। বিয়ের পর থেকে সৎমা কহিনুর বেগমের কাছেই থাকতেন শিশু আহাম্মদ। চাকরির সুবাধে বাবা মিরন ঢাকায় চলে যান। এই সুযোগে গত ১০ আগস্ট বেড়ানোর কথা বলে কৌশলে স্বামীর বাড়ি থেকে শিশু আহাম্মদকে নিয়ে লক্ষীপুরের রামগঞ্জে বাবার বাড়িতে আসেন সৎ মা কোহিনুর বেগম। দীর্ঘ ১৬ দিন থাকার পর গত শুক্রবার (২৬ আগস্ট) শিশু ছেলেকে না নিয়েই হাজীগঞ্জে স্বামীর বাড়িতে ফিরেন তিনি। এ সময় নাটক সাজিয়ে শিশু আহাম্মদের নিখোঁজের বিষয় স্বামীকে জানান তিনি। খবর শুনেই মিরন বাড়ি ফিরে ছেলেকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে হাজীগঞ্জ ও রামগঞ্জ থানা পুলিশকে অবহিত করেন তিনি। এর আগেই সৎ মা কোহিনুর বেগম শিশু আহাম্মদ শাহকে হত্যা করে তার বাবার বাড়ির রান্না ঘরের মাটিতে পুতে রাখে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মাটি খুঁড়ে শিশু আহাম্মদের মরদেহ উদ্ধার করে।
এদিকে শিশু হত্যার ঘটনায় সৎ মা কোহিনুর বেগমের ফাঁসির দাবিতে রামগঞ্জ থানার সামনে বিক্ষোভ করেন স্বজন ও এলাকাবাসী। পরে রামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ এমদাদুল হক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
শিশুর মা শারমিন আক্তার কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার ছেলেকে ফেরত নিতে চাইলেও তারা আমার কাছে ফেরত দেয়নি। কোহিনুর বেগম কৌশলে পরিকল্পিতভাবে আমার ছেলে আহাম্মদ শাহ সাইফকে হত্যা করে মাটিতে পুতে রাখে। আমি এ হত্যাকারী নারীর ফাঁসির দাবি জানাই।
এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ ও রায়পুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ মোহাম্মদ শেখ সাদি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে অভিযুক্ত সৎ মাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য শিশুর মরদেহ লক্ষীপুর জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। অন্য আর কেউ জড়িত কিনা তা তদন্ত করে দেখা হবে।
এসআইএইচ