ঠাকুরগাঁওয়ে গ্রেপ্তার আতঙ্কে ৮০০ পরিবার
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় নির্বাচনী সহিংসতায় পৃথক ঘটনায় তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও দুই সহকারী পুলিশ উপ-পরিদর্শক (এএসআই) বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। এতে অজ্ঞাতনামা প্রায় ৮০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আর অজ্ঞাতনামা মামলায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছে পরিবারগুলো। অধিকাংশ পুরুষরা ছেড়েছেন ঘরবাড়ি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মামলার কথা শুনে বাড়ি ছেড়েছে অনেক পুরুষ। গ্রেপ্তার আতঙ্কে সময় পার করছে বাড়ির নারী ও শিশুরা। বাড়িতে অল্প সময়ের জন্য আসলেও কিছুক্ষণ পরেই বাড়ি ছাড়ছেন পুরুষরা। অজ্ঞাতনামা মামলার কথা শুনে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে গ্রামে।
মীরডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা বিলকিস বেগম বলেন, আমরা শুনেছি, মামলা হয়েছে। তাও আবার ৭০০-৮০০ মানুষের নামে। যেহেতু নাম উল্লেখ্য করে মামলা হয়নি এ কারণে ভয়ে সময় পার করছি। বাবুর বাবাকে আমি বাড়ি থাকতে দেয় না। বলা যায় না কাকে কখন তোলে নিয়ে যায়।
আরেক বাসিন্দা মরিয়ম আক্তার বলেন, ছোট তিন সন্তান আর স্বামী নিয়ে সংসার আমার। মামলা আর গ্রেপ্তারের ভয়ে স্বামী বাড়িতে থাকছেন না। আমরা নির্বাচনের ঘটনার দিন ছিলাম না। ভোট দিয়ে আমরা চলে এসেছি। পরেও যায়নি। এখন মামলা হয়েছে অনেক জনের নামে। এ নিয়ে অনেক ভয়ে আছি। স্বামীকে বাসায় থাকতে দিচ্ছি না। আর আশপাশের কোনো পুরুষ বাসায় তেমন থাকে না। আসলে আবার চলে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা মাসুম পারভেজ বলেন, আমরা দিনমজুর মানুষ। একদিন কাজ না করলে না খেয়ে থাকতে হয়। এখন অনেকজনের নামে অজ্ঞাতনামা মামলা হয়েছে। অনেক ভয় আছি। কাকে কখন তোলে নিয়ে যায় বলা যায় না। আমরা এর সুষ্ঠু সমাধান চাই।
উপজেলার বাচোর ইউনিয়নের ভাংবাড়ি ভিএফ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বরত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা খতিবর রহমান ও থানার দুই সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) বিলাশ চন্দ্র রায় ও আহাদুজ্জামান বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
রাণীশংকৈল থানা সূত্রে জানা যায়, মীরডাঙ্গী আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মো. বাদশাহর মেয়ে সুরাইয়া মায়ের কোলে থাকা অবস্থায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। এ ঘটনায় ভাংবাড়ি ভিএফ নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা খতিবর রহমান একটি মামলা করেছেন। এতে অজ্ঞাতনামা ৩০০-৩৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
ওই দিন রাতে ভোট গ্রহণের দায়িত্ব শেষে ফেরার সময় মীরডাঙ্গী বাজারের ১০০ গজ দক্ষিণে পুলিশের ওপর হামলা হয়। এ ঘটনায় ঠাকুরগাঁও সদর থানার এএসআই বিলাশ চন্দ্র রায় একটি মামলা করেন। মামলায় ১৫০-২০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
শিশু সুরাইয়ার মৃত্যুর ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে মরদেহ নিয়ে বিক্ষোভ করেন স্থানীয় লোকজন। ওই সময় তারা রানীশংকৈল আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করেন ও রানীশংকৈল থানা ঘোরাও করে রাখেন। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এ ঘটনায় রানীশংকৈল থানার এএসআই আহাদুজ্জামান বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা ২০০-২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার বিষয়ে রাণীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাহিদ ইকবাল ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, তিনটি মামলা করা হয়েছে। এতে অজ্ঞাতনামা ৭০০-৮০০ জনের নামে মামলা করা হয়েছে। আর আমি বলে দিয়েছি কোনো সাধারণ মানুষ এতে হয়রানি হবে না। অতএব কেউ ভয় পাবেন না। শুধুমাত্র দোষীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ভোটের দিন তিনটি পৃথক ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। এতে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা একটি ও আমাদের পুলিশ সদস্য দুজন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। এসব হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, নিহত শিশুর মা মিনারা বেগম বুধবার (২৭ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলার বাচোর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ভাংবাড়ি ভিএফ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোটের ফলাফল দেখতে যান। সেখানে ভোটে ফলাফলকে কেন্দ্র করে দু'পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ গুলি ছুড়লে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শিশু সুরাইয়া আক্তারের মৃত্যু হয়।
এসজি/