সিলেটে বাড়ছে জরায়ু ক্যান্সার, নেই থেরাপি
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সম্প্রতি সিলেট বিভাগে স্তন ক্যান্সার রোগী বাড়ছে। কিন্তু সেই অনুপাতে নেই থেরাপির জন্য 'ব্রাকি' যন্ত্র। যে কারণে একটি থেরাপির জন্য সিলেট থেকে যেতে হয় ঢাকায়।
সিলেট বিভাগে কোটি মানুষের সরকারিভাবে উচ্চ চিকিৎসার একমাত্র ভরসা ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ক্যান্সারের ক্ষেত্রে সরকারিভাবে এ প্রতিষ্ঠানের কোনো বিকল্প নেই। অথচ এ হাসপাতালে ক্যান্সার চিকিৎসায় রয়েছে নানা সংকট। রেডিও থেরাপি যন্ত্র একটি হওয়ায় একবার থেরাপি নিতে হলে রোগীকে অপেক্ষা করতে হয় অন্তত ২ থেকে ৩ মাস।
এদিকে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় জানান,
সিলেট বিভাগে প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি ক্যান্সারের রোগী রয়েছেন। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থ বছরে হাসপাতালটির ক্যান্সার ইউনিটে ইতোমধ্যে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৭৫১ জন। একই অর্থবছরে কেমো থেরাপি নিয়েছেন ১০৮৯ জন। তবে এসব রোগীর জন্য নির্ধারিত শয্যা মাত্র ২৬ টি। যার ১২টি পুরুষ আর ১৪টি শয্যা নারীদের জন্য। সে ক্ষেত্রেচিকিৎসা দিতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় সংশ্লিষ্টদের।
সরকারিভাবে রেডিও থেরাপির জন্য ওসমানীতে মাত্র একটি ‘কোবাল-৬০’ যন্ত্র রয়েছে। এই মেশিনটি ইতোমধ্যে ৩৬ হাজার ৬ শত ২১ বার ব্যবহৃত হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা যায়, সবচেয়ে বেশি হেড অ্যান্ড নোজ ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী। যাদের বয়স ৪০ থেকে ৭০। এরপরের অবস্থানে রয়েছে স্তন ও জরায়ু ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।
সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়ে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সরদার বনিউল আহমেদ বলেন, ‘সীমাবদ্ধতা আছে, তবুও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সে ক্ষেত্রে ওসমানী হাসপাতালের অভ্যন্তরের বিশেষায়িত ক্যান্সার হাসপাতাল হলে সকল সমস্যা দূর হবে বলে আশা করছি।’
সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, ‘ক্যান্সার রোগীদের সমস্যার কথা বিবেচনায় সিলেটে নতুন ভবন হচ্ছে। সেখানে অত্যাধুনিক যন্ত্র স্থাপনের মাধ্যমে ক্যান্সারের চিকিৎসা দেওয়া হবে। একই যন্ত্রে সকল থেরাপি দেওয়া যাবে। এতে আলাদা ইউনিট থাকবে। ফলে একদিকে যেমন সেবার মান বাড়বে সেই সঙ্গে প্রতিটি থেরাপিতে মাত্র পাঁচ থেকে সাত মিনিট সময় লাগায় সিরিয়াল পেতে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হবে।’
সরেজমিনে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে দেখা যায় বিশেষায়িত এ ক্যান্সার হাসপাতালের কাজ চলছে। বর্তমানে এর ফাইলিং কাজ চলমান। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভবনটি নির্মাণ কাজ করছে গণপূর্ত বিভাগ। চলতি বছরের আগস্ট মাসের ১৮ তারিখ থেকে নির্মাণ কাজ শুরু হওয়া ভবনের কাজ শেষ হবে ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর। মোট ৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ ভবনে থাকবে ক্যান্সার রোগীদের জন্য নির্ধারিত ১০০ শয্যা। সেই সঙ্গে একই ভবনে যুক্ত হচ্ছে কিডনি রোগীদের ডায়ালাসিসের জন্য ৫০ শয্যা ও হৃদরোগীদের জন্য ৫০ শয্যা চিকিৎসা সেবা। সব মিলে ২০০ শয্যার ১৫ তলা নতুন ভবনে সিলেটে সরকারিভাবে চিকিৎসা ক্ষেত্রে এক অভাবনীয় মাত্রা যোগ করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে নির্মাণাধীন ক্যান্সার হাসপাতালটি ওসমানী মেডিকেল কলেজের আওতায় দেওয়া হচ্ছে নাকি স্বতন্ত্র কোনো প্রতিষ্ঠান হবে তা এখনও অনিশ্চিত।
সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মাহবুবুল আলম বলেন, ‘নির্মাণাধীন ক্যান্সার হাসপাতালটি যদি ওসমানী হাসপাতালের বর্ধিতকরণ হয়ে থাকে তাহলে আমাদের পক্ষ থেকে জনবল চাহিদা তৈরি করা হবে। নাহলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিজেরাই নির্ধারণ করবে। তবে হাসপাতালটি হলে সিলেট বিভাগে ক্যান্সারের চিকিৎসায় নতুন এক মাত্রা যোগ হবে।’
এসইউ/এএন