ভোলার ৪ আসনে আওয়ামী লীগের পাঁচ নতুনের গুঞ্জন
ভোলার রাজনীতিতে নতুন রাজনৈতিক নেতাদের মনোনয়ন প্রত্যাশা ঘনিভুত। ভোলার ৪টি আসনে আওয়ামী লীগের নতুন ৫ জন মনোনয়ন প্রত্যাশির নাম শুনা যাচ্ছে আওয়ামী রাজনীতির মাঠে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো বাকি প্রায় এক বছর। এরই মধ্যে ভোলায় শুরু হয়েছে বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশিদের নড়াচড়া। তবে স্বাধীনতার পর থেকে ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের অভিভাবক হিসেবে খ্যাত জননেতা তোফায়েল আহাম্মেদ।
এক সময়ে দলটির সব কয়টি জয় পেতে, দলকে সুসংগঠিতসহ তৃণমূল পর্যন্ত শক্তিশালী করার অগ্রভুমিকা রেখেছেন তিনি। তোফায়েল আহাম্মেদ ভোলা-১ সদর আসন থেকে পাঁচবার এবং ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখান) আসন থেকে দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আগামী নির্বাচনেও তিনি ভোলা সদর আসনে একক প্রার্থী হবেন বলে জানিয়েছেন জেলার আওয়ামী নেতা-কর্মীরা।
আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে দলের জেলা শাখার সভাপতি ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা, ঢাকা মহানগর (উত্তর) আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মাহাবুবুর রহমান হিরণ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক ছাত্র নেতা হেমায়েত উদ্দিন হিমুর নামও আলোচনায় ভাষছে। তবে সাবেক ছাত্র নেতা হেমায়েত উদ্দিন হিমু বলেন আমি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোলা ১ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশি ছিলাম, আমার নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বর্তমান সাংসদ তোফায়েল আহাম্মেদের সমর্থন করে নৌকার বিজয়ে প্রচার প্রচারণায় অংশ নেই। তবে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাননীয় নেত্রীর একান্ত বিবেচনা ও নির্দেশনায় আমি ভোলা -১ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি।
তবে নেত্রীর নির্দেশনা ও আশির্বাদে আমি নেতা হিসেবে নয় আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে থাকতে চাই। তবে মনোনয়নের বিষয়ে নেত্রীর নির্দেশনা আমি মেনে নিবো ইনশাআল্লাহ। আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা-কর্মীরা বলছেন, তোফায়েল আহম্মেদ বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকার পর এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন মূলককাজ করেছেন।
তিনি তাঁর নিজ নির্বাচনী এলাকায় এসে দলীয় ও জাতীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিদর্শন করেন। এ ছাড়া দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ কারণে দলের এ বর্ষীয়ান নেতা আগামী নির্বাচনেও ভোলা-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে লালিত সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান তাকে কনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে মাত্র ২৬ বছর বয়সে ১৯৭০ সালে প্রথম মনোনয়ন দেন। ১৯৭০ এর নির্বাচনে তিনি এমএলএ নির্বাচিত হয়েছেন। সেই থেকেই তোফায়েল আহাম্মেদের হাত ধরে বিজয়ের ধারা শুরু হয়েছে ভোলার আওয়ামী রাজনীতিতে ।
এর পর প্রার্থী হন ১৯৭৩, ১৯৭৯, ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে। এর মধ্যে ১৯৭০, ১৯৭৩, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ভোলা-১ আসন থেকে জয় লাভ করেন দলটির এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে ভোলা-২ আসন (দৌলতখান-বোরহানউদ্দিন) থেকেও নির্বাচিত হন।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী তোফায়েল আহমেদ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোলা-১ আসন থেকে নির্বাচন করার আশা ব্যাক্ত করেন দলটির জেলা ও উপজেলার নেতা কর্মীরা। আওয়ামী লীগ ভোলা-১ আসন থেকে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিবেন বলে জানিয়েছেন দলটির নেতা কর্মীরা।
অতীতে জেলার একাধিক আসনে তিনি ভোটের লড়াইয়ে নামলেও এবার শেষ বয়সে ভোলা-১ আসনকেই বেছে নিবেন বলে জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীগন । অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোলার তিনটি আসন থেকে দাঁড়িয়ে তিনটিতেই পরাজিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রবীণ এই নেতা। তবে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভোলা-২ আসন থেকে নির্বাচন করেন।
২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পান ভোলা-১ আসনে। এবারও এখান থেকেই তার ভোটের প্রস্তুতি থাকবে বলে জানিয়েছেন নেতা কর্মীরা। জনগণের মধ্যে প্রবীণ রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। ভোলার উন্নয়নের চিত্র পাল্টে দিতে যে কয়জন রাজনৈতিক ব্যাক্তি অবদান রেখেছেন তোফায়েল আহাম্মেদ তাদেরই অন্যতম একজন। আর এ কারণে ভোটের ময়দানে তিনি রয়েছেন শক্তিশালী অবস্থানে।
সূত্রে আরও জানা গেছে, দ্বীপজেলা ভোলার অন্যতম প্রধান সমস্যা নদীভাঙন রোধে গত ৫ বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে তোফায়েল আহমেদের প্রচেষ্টায়। ইতিমধ্যে ইলিশা ও রাজাপুরে নদীভাঙন রোধে সিসি ব্লকের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ভোলা-বরিশাল সড়ক পথে যাতায়াতের জন্য তেঁতুলিয়া নদীর ওপর নির্মাণ হবে সেতু। এরইমধ্যে যাচাই হয়েছে সম্ভাব্যতা। আর এসব উদ্যোগের সুফল পাওয়ার আশা করছে আওয়ামী লীগ।
অন্যদিকে ভোলার অপর ৩টি আসনের ভোলা ২ (বোরহানউদ্দিন -দৌলতখাঁন) তিনি হচ্ছেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের ভাইয়ের ছেলে আলী আজম মুকুল (এমপি)। যিনি জনপ্রিয়তা প্রমাণে সফল হওয়ায় দ্বিতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ভোলা ২ আসনে আলি আযম মুকুল দুই বারের সংসদ সদস্য থেকে তার নির্বাচনি এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তবে বর্তমানে ভোলা -২ আসনে বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ এর সহোদর ভাই আশিকুর রহমান শান্ত ওএর নাম শুনা যাচ্ছে।
একইভাবে তৃতীয়বারের মতো মনোনয়ন প্রত্যাশি ভোলা-৩ আসনের বর্তমান সাংসদ আলহাজ্ব নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশায় বিবিএস ক্যাবলসের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আবু নোমান এর নাম এখন এলাকায় শোনা যাচ্ছে। ইতি মধ্যে ভোলা -৩ (লালমোহন তজুমদ্দিন) এলাকায় ইঞ্জিনিয়ার আবু নোমান সামাজিক কর্মকান্ড সহ স্থানীয় নেতা কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
ইঞ্জিনিয়ার আবু নোমান বলেন, আমি ছাত্র জীবনে রুয়েট আওয়ামী লীগের ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম এবং কর্ম জীবনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছি থাকবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা চাইলে আমি ভোলা -৩ আসনে মনোনয়ন প্রাপ্ত হলে ভোটের মাঠে লড়ে জয় সুনিশ্চিত করবো ইনশাআল্লাহ। তবে ভোলা -৩ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশায় মেজর জশিমের নাম ও শোনা যাচ্ছে।
(অবঃ)মেজর জসিম ঢাকা প্রকাশকে বলেন আমি ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে ভোলা ৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছি অনাকাঙ্ক্ষিত কারনে উক্ত আসনে ২০১০ সালে উপনির্বাচনে আমি মনোনীত না হলে বর্তমান সাংসদ নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এর সাঙ্গে আওয়ামী লিগের একজন কর্মী হয়ে কাজ করেছিলাম।
আমি আশাকরি মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে যোগ্য বিবেচনা করে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোলা ৩ আসনে মনোনীত করলে আবারও নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করতে পারবো ইনশাআল্লাহ। তবে আওয়ামীলীগ আমাকে মনোনয়ন না দিলেও দলের সাথে আছি এবং বাকিটা জীবন আওয়ামী লীগের সাথে থাকবো ।
ভোলা-৪ আসনে বর্তমান বন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব (এমপি)। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে সাবেক সচিব মেজবাহ উদ্দিন এর নাম ও এখন আলোচনায় ভাষছে। তবে উন্নয়নমুলুক কর্মকান্ড ও জনপ্রিয়তায় আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এগিয়ে ।
এএজেড