স্মৃতি
বিকেল বেলা চেয়ার নিয়ে বসে আছি বাড়ির বাইরের আঙ্গিনায়। হঠাৎ দেখি স্কুল পড়ুয়া ছেলে মেয়ে বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে হাতে হাত রেখে প্রেমালাপ করে যাচ্ছে। এই দৃশ্য দেখে মনে পড়ে গেলো আমার কলেজ জীবনের সেই ১৯৮৮ সালের স্মৃতির কথা। সেই সময় প্রেম করতে হৃদয় গহিনে নাড়া দিলেও লাগতো বড় ভয়, লোক সমাজে কি জানি কি কয়।
মনের অজান্তে বলে ফেললাম ওগো প্রেয়সী আজও মনে পড়ে তোমার কথা,তোমার কথা মনে করে পাচ্ছি সারা জীবন ব্যথা। পাশেই বসা ছিল আমার বড় এক চাচাতো ভাইয়ের নাতি নাম আসাদ।সেও কলেজে পড়ে, বলছে ও কবি দাদু তোমার কথা শুনেছি আমি চমকে উঠলাম কি বলতে কি বলে ফেললাম বললাম- না ও কিছু না। কবি দাদু আমি কিন্তু শুনেছি তুমিও নিশ্চয় বয়সকালে প্রেম করেছিলে। দাদা সত্যি বলতো তুমি কি কখনও প্রেম করনি। আমার সেই স্মৃতির কথা মনে করে চোখ যেনো ছলছল করে চোখের কোণায় পানি ভাসছে।
বললাম হ্যাঁ দাদুভাই।
বললো কোথায় আর ওই মেয়েটির নাম কি ছিল।
রূপালী - যেমন নাম তেমন ছিল রূপে গুণে ভরপুর আর সে পড়তো দশম শ্রেণিতে।আমি কলেজের হোস্টেলে থাকতাম।আমার রুমমেট ছিল তিনজন।
হঠাৎ একদিন কাজের বুয়া আসেনি আর ঐ দিন ছিল শুক্রবার কলেজ বন্ধ থাকায় রুমমেট সবাই বাড়ি গিয়েছিল। তাই আমি নিজেই রান্নার কাজে ব্যস্ত এমন সময় মেয়েটি পাশে দিয়ে যাচ্ছে আমার চোখে চোখ পড়তেই ও নিজে থেকেই বলে ফেললো আপনাদের কাজের বুয়া আসেনি।ইতস্ততঃ হয়ে বললাম না আসে নি। আপনি কি রান্না করতে পারেন? বললাম একটু একটু।মেয়েটি ছিল সরলমনা বলল দেন আমি রান্না করে দিচ্ছি। আমি বললাম না না ও জোর করে রান্না করে দিচ্ছে এমন সময় ওর ছোট বোন শিউলি এসে বলল আপু তোমাকে আম্মু খুঁজছে। রূপালী বলল আমি যে এখানে আসছি তা মাকে বলোনা প্লীজ লক্ষী বোনটি একথা বলে মুচকি হাসি দিয়ে রূপালী তার বোনকে নিয়ে চলে গেলো। দুই বোন মিলে পরের দিন আবার আসলো শিউলি পড়ে পঞ্চম শ্রেণীতে একটি অংক করার উছিলায়। দুই বোন মিলে রান্না করে দিয়ে চলে যাওয়ার সময় বাই বাই বলে বিদায় জানালো, ওর চাহনি, মুচকি হাসে ও রূপের ঝলকানি যেন আমার মনে ভাসতে লাগলো কিছুই ভালো লাগছে না। দেখলাম নাতি আসাদ মনোযোগে শুনতেছে এমন সময় আমার মেয়ে জুঁই ডাকছে আব্বু আম্মু তোমাকে বাসায় আসতে বললো নাতিকে বললাম বাকি কথা আরেক দিন।
আমার গৃহিণী বলল এতক্ষণ আসাদের সাথে কি কথা হলো,বললাম খোশগল্প গিন্নি বললো ও আচ্ছা।
ঠিক পরেরদিন আসাদ ওই জায়গায় আসলো আমার স্মৃতিময় কথা শুনতে, কবি দাদু বাকি কথা কর না শুরু। শোনো দুই দিন পর রুপালী স্কুলে যাচ্ছে সাথে ওর ছোট বোন শিউলিও। জানালার পাশে দিয়ে যাওয়ার সময় একটি গোলাপ ফুল ছুঁড়ে দিয়ে হাত ও চোখের ভাষায় বলে গেলো ভালোবাসি।একদিন বিকেল বেলা ওর এক উপজাতি বান্ধবী নাম রেবা ও ছোট বোন শিউলিকে নিয়ে বেড়াতে এসে পানি খাওয়ার উছিলায় সবাই ঘরে ঢুকলো। বন্ধুরা ইতিমধ্যে বুঝে গেছে তাই সুযোগ দিয়ে ওরা বেড়াতে বাইরে চলে গেলো। রূপালী শিউলীকে বলল তুমি বাড়ি যাও মা আবার খোঁজবে তাই শিউলী মুচকি হেসে বাই বাই বলে চলে গেলো। চানাচুর বাদাম খেতে খেতে গল্প রেবা বললো আপনাদের দু'জনকে বেশ মানিয়েছে তাই আপনাদের ভালোবাসা চিরস্থায়ী হোক।আমি বললাম আমরাতো গরীব মানুষ। রূপালী বলল কে গরীব আর কে ধনী গায়ে তো লেখা নাই আমি তোমাকে ভালোবাসি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না আমি তখন বললাম আই লাভ ইউ টু।
এভাবে চললো মাস তিনেক শীতের শেষে বসন্তের আগমন মনটা করছে উড়ো উড়ো বিকেলে চেয়ার নিয়ে বসে রূপালীদের বাসার দিকে তাকিয়ে আছি। পিছন থেকে শিউলী এসে দুচোখ ধরে দুলাভাই বলে সম্বোধন করে বলল মা আপনাকে এখন আমার সাথে যেতে বলছে।
আমি যেনো বিস্মিত মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি আমতা আমতা করে না না বললাম শিউলী নাছোড়বান্দা কিছুতেই ছাড়লো না। গিয়ে দেখলাম ডাইনিং টেবিলে নাস্তা ও ফলের সমারোহ তার মা আসলো সালাম দিয়ে আন্টি বলে ডাকলাম নাস্তা খাওয়ার ফাঁকে ফ্যামিলিতে কে কে আছে বিভিন্ন জিঙ্গাসাবাদ করলো এক পর্যায়ে আন্টি বললো দেখ বাবা আমাদের বড় ছেলে নেই তুমি আজ থেকে আমার ছেলে হয়ে থাকবে আর রূপালীকে আমি তোমার হাতে তুলে দিতে চাই। বললাম আন্টি আমি তো বর্তমানে বেকার তাই কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে তাছাড়া রুপালি এস,এস,সি পাস করুক আর দেখি আমি কিছু করতে পারি কিনা। আন্টি বলল আর নয় আন্টি বলো মা, লজ্জায় যেনো লাল হয়ে গেলাম সামনে ছিল শিউলী ব্যাচকি দিল। ঠিক আছে মা আজ আসি। এখন বন্ধু মহল সবাই জানে আমি হলাম এই বাড়ীর জামাই। ভালো কিছু রান্না হলে প্রায়ই বাসা থেকে শিউলী দিয়ে যায় আর মাঝে মধ্যে রূপালীও নিয়ে আসতো। ফাইনাল পরীক্ষা আরেক দিকে বিয়ের জন্য চলছে পিরাপিরি কি করবো ভেবে উঠতে পারছিনা সম্পর্কে যেনো চলছে টানাপোড়নের খেলা না পারছি সইতে না পারছি কইতে। ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি আসলাম আর ওদিকে জানতে পারলাম রূপালীর বিয়ের পাকা কথা ছেলে নাকি কাপড়ের ব্যাবসা করে।
রূপালীর একটি চিঠি আদৌ বুকের ভিতর কান্নার ঝড় বয়ে বেড়ায়। চিঠি পাঠিয়েছিল রক্তের ছাপ দিয়ে বলে ছিল আমাকে বাঁচাও তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না, তুমি রাজি থাকলে আমি তোমার সাথে পালিয়ে যাবো তার ওই আকুতি আমার চোখের পানি ছলছল করে বের হয়েছিল কিন্তু কি করব বেকার। বাপের আর্থিক অবস্থাও ভালো ছিল না।সবে ইন্টার মিডিয়েট পরীক্ষা দিয়েছি কিছুদিন পর রিজাল্ট হলো পাশও করলাম।জানতে পারলাম রূপালীর বিয়ে হয়ে গেছে তাই হৃদয়টা যেনো পাথর হয়ে গেলো - মনমরা কিছুই ভালো লাগেনা শেরপুর সরকারি কলেজে বি,এ ভর্তি হলাম পাস করলাম সরকারি চাকরি হলো সেই চট্টগ্রামে পোস্টিং প্রায় তিন চার মাস পরপর বাড়ি আসতাম বুঝলে নাতি। তখন ছিল রেডিওর যুগ বিরহের গান শুনতাম আর মাঝে মধ্যে কবিতা লিখে সময় পার করতাম আর এখনকার মতন মোবাইল ছিলনা বাবা চিঠি লিখতো সাত/ আট দিন পরে পেতাম আমি লিখলেও সেভাবেই পেত আর তীর্থের কাকের মতন চেয়ে থাকতাম কবে আসবে চিঠি এই অপেক্ষাটাও যেনো অনেক আনন্দের ছিল।
যাই হোক বাড়ি আসলাম পঁচানব্বই সালের মে মাসে বাবা আর মামা মিলে পঁচিশে মে বৃহস্পতিবার নয়আনী বাজার শেরপুর টাউনে তোমার দাদীর সাথে বিয়ে ঠিক করে এসে আমাকে বললেন মেয়ে দেখতে যাব। যাওয়ার সময় বন্ধু সম্রাটকে পেলাম নিউমার্কেট মোড়ে ওরে বললাম চল বন্ধু মেয়ে দেখতে যাব ও এমনিতেই রাজি হয়ে গেলো।
গিয়ে দেখলাম বিয়ের সমস্ত ব্যবস্থা করেই তারা আমাকে মেয়ে দেখার কথা বলে নিয়ে আসছে কারণ আমি বিয়ের বাপারে উদাসীন ছিলাম।
এখানে মজার ব্যাপার কি জানো বিয়ের পর জানতে পারলাম তোমার দাদীও নাকি কলেজ থেকে ফেরার পথে ওর এক বান্ধবীর নিকট জেনেছিল তোর বিয়ে তুই কোথায় থেকে আসলি ও বলেছিল কি বলিস আমার বিয়ে আর আমি জানতাম না।
তোমার দাদী চিঠি দিত সাত/ আট দিন পরে পেতাম যেনো সেই চিঠির মধ্যে ভালোবাসার নিবেদন, মনে হতো না মাছুমা আমার স্ত্রী মনে হতো এক যুগের প্রেমিকা।
এখনতো মোবাইলের যুগ চিঠির প্রয়োজন নেই বললেই চলে কপোত কপোতির কথ হয় দিবারাত্রি।
আজকে তোমাদের চিঠির দিন শেষ,
মোবাইল নেমে সুখে আছ বেশ।
ডিএসএস/