এই সেই মেয়ে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরে বড় নিঃস্ব হয়ে গেলাম । নেই বলতে, কেউ নেই , আছে বলতে শুধু এইটুকুই আছে । আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র । এটা আমার অহংকার । এটা আমার গর্ব । যে অহংকার এবং গর্বে আমার পা মাটিতে পরে না । নিজের আত্মসম্মান এবং গর্বের জন্য বিসর্জন হতে থাকে বন্ধুত্বের সম্পর্ক । চারদিকে হৃদয়ের বন্ধন । যেন কালিঘাটের শ্মশানের মত পুড়ে ছাড়খার হয়ে যায় । সে যাইহোক । তবুও তো আমি আমার নিজ রাজ্যে; প্রজা বিহীন এক রাজা । যে রাজ্যে দরকার; এখন একটি রানি । রানির অনুসন্ধানে, ওপেন করলাম । কয়েকটি ফেসবুক আইডি । অনেক রমণীকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালাম । শুধুমাত্র তাদেরকেই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালাম । যে সকল রমণী । কেবল মাত্র । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী । আমি রাজা আমার রানিও হওয়া চাই জুতসই । অনেক রমণীর সাথে; কথাবার্তা হয় ফেসবুকে । কিন্তু মনের মত হয় না । দেখতে পেত্নি । কিন্তু ফেসবুকে এ যেন বিশ্ব সুন্দরী কেউ মেক-আপ সুন্দরী, কেউবা পার্লার সুন্দরী । কেউ খাটো কেউবা হ্যাংলা কেউ আবার মুটকো । কেউ শুধু সাদা ধবধবে । কিন্তু ভাবখানা সবার এ যেন ঐশ্বর্য রায় ।
মনের মতো; কেউ হলো না ।
অবশেষে নিজের জেলার একটা মেয়েকে খুঁজে পেলাম । পাবনা শহরের অনান্ত বাজার । ওর বাড়ি । ভারি মিষ্টি একটা মেয়ে । আমার সাথে মানাক বা না মানাক তাতে কী! মেয়েটির চাওয়া পাওয়া চলন বলন কথা বার্তা এ যেন আমার জন্যই । আমার চাহিদার প্রতিচ্ছবি ও । প্রথমে বন্ধু হিসেবে এগোতে থাকলাম । ইশারা ইঙ্গিতে বোঝানোর চেষ্টা করলাম । আমার মনে হতো আমার ইশারার সাড়াও দিচ্ছে মেয়েটি । ও আমাকে খুব ভালোবাসে । এভাবেই চলতে থাকলো কিছু দিন ।
হঠাৎ ঈদের ছুটি । বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ । সবাই বাড়ি যাচ্ছে । আমিও যাবো । ঐ মেয়েটিও যাবে । দুই জন এক সাথে বাড়িতে রওনা হলাম । পথে অনেক কথা হলো । ভালোবাসার কথা । প্রেম প্রীতির কথা । সুখে থাকার কথা । জীবন যুদ্ধে জয়ের কথা । ভবিষ্যতের কথা । চাকরি বাকরির কথা ,ক্যারিয়ারের কথা, স্বচ্ছলতার কথা ,অর্থনীতির কথা, সংসারের কথা, বন্ধু বান্ধবীর কথা, দেশের কথা , রাজনীতির কথা । সাথে অনেক অকথা , কুকথাও হলো । কুকথার মধ্যে জীবন স্যারের কুকথা । তার ছাত্রীদের সাথে নাইট যাপনের অকথা । সেলিম স্যারের কুদৃষ্টি । বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যারদের ক্ষমতার অপব্যবহার । তাদের হিংসুটি জীবন যাপন । দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের গাল ভরা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি । কবি সাহিত্যিকদের চাটুকারি , সাংবাদিকদের ভুয়া মিথ্যা চাটুকারি নৃশংস সংবাদ প্রচার । তসলিমা নাসরিনের একঘেয়েমি । রাষ্ট্রপতির পুতুল তুল্য ক্ষমতা । প্রধানমন্ত্রীর কর্মকাণ্ড , মন্ত্রীদের পাগলামি । চিকিৎসকদের ডাকাতি । ধর্ম ব্যবসায়ীদের কলা-কৌশল । ধর্মের অপব্যবহার , হুজুরদের ভণ্ডামি । মানবতার পরাজয় । এনজিও এর কারসাজি । চাকুরিজীবীদের দুর্নীতি । ঘুষ ও সুদখোরদের ফাঁপর বাজি । দুর্নীতি দমন কমিশনের হৃদয়ে ভগ্নো রোগ । বিরোধী দলের গালগল্প । আরো কত কী ।
অনেক কথাই হলো । এ যেন মুক্ত চিন্তার বিশাল ফুটবল মাঠ । যেখানে সক্রেটিস, প্লেটো, এরিস্টোটল, এডাম লি, রটারডামের ইরামাস, জ্যাকুয়েস বারজান, জন ডান, পেরিয়্যান্ডার (খ্রীষ্টপূর্ব ৭ম শতাব্দী), সোলোন (খ্রীষ্টপূর্ব ৬৩৮-৫৫৮), থেলিস (খ্রীষ্টপূর্ব ৬৩৫-৫৪৩), এনাক্সিম্যানডার (খ্রীষ্টপূর্ব ৬১০-৫৪৭), এনাক্সাগোরাস, চাণক্য, আল-কিন্দি, শিবলী নোমানী, আল ফারাবী, পার্মেনিদিস, এলেয়ার জিনো, টমাস আকুইনাস, ইবন সিনা, কনফুসিয়াস, রনে দেকার্ত, গেয়র্গ ভিলহেল্ম ফ্রিডরিখ হেগেল, ইমানুয়েল কান্ট, সারেন কিয়েরকেগর, ফ্রিড্রিশ নিচে, প্লেটো, জঁ-পল সার্ত্র্, লুডভিগ ভিটগেনস্টাইন, ফ্রান্সিস বেকন, জর্জ বার্কলি, বারুখ স্পিনোজা, গটফ্রিড লাইবনিৎস, কার্ল পপার, বারট্রান্ড রাসেল, আলফ্রেড নর্থ হোয়াইটহেড, গট্লব ফ্রেগে, জন স্টুয়ার্ট মিল, খানবাহাদুর আহছানউল্লাহ, মোহম্মদ বরকতুল্লাহ, আরজ আলী মাতুব্বর, আবুল হাশিম, দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, সাইদুর রহমান ও আহমদ শরীফ সহ আরো অনেকেই এক সাথে মুক্তি চিন্তার ক্রীড়ায় মেতে উঠবে । ক্রীড়া মাঝে সবার হাতে এ যেন প্যানজি ফুল । দ্রৌপদীর স্বয়ম্বর সভা ।
ঈদ উপলক্ষে । আমি নিমন্ত্রণ করলাম ওকে; আমার বাসায় এসো । ও আমাকে বললো । ওরে পাগল । তা কী সম্ভব । আমি যেতে পারবো না ।
আমি বললাম । তাহলে আমাকে........
ডিএসএস/