তর্জনী ধরি অনামিকার লোভে
অফিস থেকে নেমে গেটের সামনে এসে ছোট একটা বিপদে পড়লাম। গেট লক করা। চাইলেও আমি খুলতে পারব না। এই অফিসে নতুন যোগদান করেছি। দু সপ্তাহ হয়েছে। টাইম এটেনডেন্স মেশিনে আমার এক্সেস এখনো পাইনি। আইটির জাভেদ ভাই সেটাপ দেবে দেবে করে এখনো দেননি। যে কারণে বিপদেই পড়লাম আরকি। একটু আগে তৃতীয় তলার রূপবতী ফারহার সঙ্গে হায় হ্যালো হয়েছে। তিনিও বের হয়ে গেছেন। তবে আমি নিশ্চিত তিনি খুব বেশি দূরে যাননি। পকেট থেকে ফোন বের করে ফোন দিলাম ফারহাকে।
অপর পাশ থেকে ভেসে আসা মিষ্টি কণ্ঠ আমাকে চুম্বকের মতো আর্কষণ করল।
- ভাইয়া আসসালামু আলাইকুম।
- ওলাইকুম আসসালাম। ফারহাপু আপনি কতদূরে গেছেন।
- এই তো বাইরের গেট থেকে বেরিয়ে মূল রাস্তায়। এবি ব্যাংকের বুথের সামনে।
- আপনার আঙুলটা আমার লাগত।
- সরি!
আমি জানি ফারহা আমার কথা স্পষ্ট শুনেছে। শুনে কিছুটা হতবাক হয়েছে।
- বললাম, আপনার হাতের তর্জনী আঙুলটা আমার লাগবে।
- ভাইয়া কী বলছেন এসব? আমি বুঝি নাই।
- আরে, আমি অফিসের ভেতরে আটকা পড়ে আছি। টাইম এটেনডেন্টস মেশিনে আমার ফিঙ্গারপ্রিন্ট এখনো অ্যাটাচ করা হয় নাই। যে কারণে আপনার আঙুল আমার দরকার।
- সরি ভাইয়া। আপনার রসিকতা বুঝতে পারি নাই। আমি আসতেছি।
তিন মিনিটের মধ্যে ফারহা এসে তার তর্জনী আঙুল দিয়ে মেশিনে টাচ করেই আমাকে উদ্ধার করল। এরপর আমরা দুজন একসাথে হাঁটতে হাঁটতে মূল গেট পার হয়ে রাস্তায় চলে এলাম। তাকে রিকশায় তুলে দিয়ে আমি আমার গন্তব্যের দিকে পা বাড়াই।
ফারহার সাথে আমার প্রথম দেখা ফাউন্ডেশন ট্রেনিং-এ। ফাউন্ডেশন ট্রেনিং-এ সাধারণত চাকরির শুরুতে হয়। কোনো প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি, তথ্য উপাত্ত, ইতিহাস, মিশন, ভিশন, গোল, মূল্যবোধ ফাউন্ডেশন ট্রেনিং-এ জানানো হয়। এই ট্রেনিংটা হওয়ার সময়ও ভাবিনি আমার মনের মিশন, ভিশন, গোলও এখানে লুকিয়ে ছিল। খোলাসা করে বলি। এই প্রতিষ্ঠানে যোগদানের তিন দিনের মাথায় তিন দিনের একটা ফাউন্ডেশন ট্রেনিং শুরু হয়। সেই ট্রেনিং-এ দুইজন ফ্যাসিলিটেটর এর একজন হলো ফারহা। প্রথম দিন দেখেই আমার ভালো লেগেছে তা আমি বলব না। সবাই বলে প্রথম দেখাতেই ভালো লেগেছে। প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়েছি। আমি বলব ট্রেনিং এর তৃতীয় দিন থেকে ফারহার প্রতি আমার ভালো লাগা তৈরি হয়েছে। সেই ভালোলাগার মধ্যে আমার মনের ভিশন মিশন গোল লুকিয়ে ছিল তা বুঝেছি আরও একটু দেরিতে।
সেই আঙুল চাওয়ার ঘটনার মধ্য দিয়ে ফারহার সাথে আমার একটা ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। ভালো সম্পর্কের পাশাপাশি আমার ভালোলাগাটাও বাড়তে থাকে ধীরে ধীরে। একই বিল্ডিং-এ বসার কারণে আমরা প্রতি কর্মদিবসে এক সাথে লাঞ্চ করি। ডাইনিং-এ আমি আগে গেলে তাকে কল অথবা টেক্সট করি। ফারহা আগে গেলে সেও আমাকে কল অথবা টেক্সট করে। এরপর একসাথে হই। একই টেবিলে খেতে থাকি। মাঝে মাঝে অফিস শেষে আমরা ফুচকা খেতে বাইরে যাই। চা পান করতেও বাইরে যাই।
একদিনের ঘটনা। আরএএমসি শপিং কমপ্লেক্সে একদিন আমরা চা পান করতে গেলাম। চা পান শেষে কাপটা হাতে নিয়ে ফারহা এদিক ওদিক ঘুরাচ্ছিল। ঘুরাচ্ছিল আর হেসে হেসে আমার সাথে গল্প চালিয়ে যাচ্ছিল। আকস্মিকভাবে কাপটা নিচে পড়ে ভেঙে গেল। সেটা তুলতে গিয়ে ফারহার ডান হাতের তর্জনী আঙুলটা কেটে গেল। দরদরিয়ে রক্ত বের হওয়া শুরু করল। আমি সঙ্গে সঙ্গে ওকে বসিয়ে লিফট দিয়ে নিচ থেকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য স্যাভলন আর ওয়ানটাইম টেপ নিয়ে এলাম। স্যাভলন পানি দিয়ে ওর হাতটা ধুয়ে দিলাম। এরপর তর্জনী আঙুলটা ধরে ফেললাম। ধরে টেপ লাগিয়ে দিলাম। এরপর বললাম, অনামিকাটা কাটা যায় নাই তো? এই বলেই তর্জনী আঙুলটা ধরে এদিক ওদিক করে দেখলাম। না অনামিকা আঙুলটা অক্ষতই আছে।
এরপর রসিকতা করে বললাম, তর্জনী আঙুল তো আহত। কালকে অ্যাটেনডেন্স করবেন কীভাবে?
- আপনার আঙুল দিয়ে। হিঃ হিঃ হিঃ
তখনো ফারহার তর্জনীটা আমি ধরেই রেখেছিলাম। ছাড়তেই মন চাচ্ছিল না।
ফারহা বলল, আঙুল এখন ছেড়ে দিতে পারেন।
আঙুল ছেড়ে দিতে দিতে বললাম, তর্জনী ধরে রেখেছি অনামিকার লোভে?
ফারহা জিজ্ঞেস করে, মানে কী?
বললাম, মানের কোনো মানে নাই।
এরপর একই রিকশায় তাকে নামিয়ে দিতে গেলাম কেরানীপাড়ায়। রিকশা থেকে নামার আগে আগে ফারহাকে বললাম। আঙুলের যত্ন নিয়েন।
ফারহা বলল, কোনটার? তর্জনী নাকি অনামিকার?
- আপাতত আহতটার নেন। আর অনামিকাটার বিশেষ যত্ন নেন।
- কেন? বিশেষ যত্ন কেন?
- আপনার অনামিকাটা সাজানোর লোভ করতেছি। যদি সাজানোর সুযোগ দেন। তবে - - -।
কথা শেষ করার আগেই ফারহা রিকশা থেকে নামল। যেতে যেতে বলল, দেখি বিশেষ যত্ন নেওয়া যায় কি না!
মোকাদ্দেস-এ-রাব্বী: হারাগাছ, রংপুর।
এসএন