হঠাৎ এলো বৃষ্টি
আজকে বাড়ি থেকে বের হতেই মন চাইছিল না। ইচ্ছে ছিল সারাটা দিন বাসায় বসে বসে অতীত স্মৃতি মন্থনে ব্যস্ত থাকব। অনেকে বিভিন্ন উৎসব পালন করলেও আমারটা ভিন্ন রকমের। কারো জন্মবার্ষিকী, মৃত্যবার্ষিকী কিংবা বিবাহবার্ষিকী হয় কিন্তু আমার জন্য বিরহবার্ষিকী। তাই এই দিনটা একান্তই নিজের মতো করে কাটাই। কিন্তু সেই সুযোগে কোনোভাবেই কাজে লাগানোর ফুরসত পেলাম না রহমান ভাইয়ের জন্য। ভোর থেকে ফোন দিয়ে জ্বালিয়ে মারল দেখা করার জন্য, কী এক জরুরি কথা আছে। সারা রাতের আয়েশের ঘুম হয় ভোরে অথচ সেই ঘুম হারাম করে উঠতে হবে। এমনিতেই অনেক দেরি করে ঘুমিয়েছি।
মনের মধ্যে জেগে থাকা অতৃপ্ত ভালোবাসা আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। কেন যে বোকার মতো বৃষ্টিকে মন থেকে মুছে ফেলতে পারি না। সে তো দিব্যি ওর স্বামীর সংসারে সুখেই দিন কাটাচ্ছে। তবে আমার মনে অহেতুক কষ্ট পুষে রাখার মানে হয় না। যদিও ওর সেরকম দোষ ছিল না। সে বার বার আমাকে বিয়ে করার জন্য চাপ দিত, এমনকি বিয়ের আগের রাতে আমাকে নিয়ে পালিয়ে যাবে বলে সব ছেড়ে ছুড়ে চলেও এসেছিল। কিন্তু আমি তাকে ধরে রাখতে পারিনি ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। যদিওবা তেমন বেশি কিছু তার প্রত্যাশা ছিল না। তারপরও তখন আমি একেবারেই বেকার অবস্থায়, কোনো আয় রোজগার ছিল না, পালিয়ে বিয়ে করে কোথায় রাখব, কী খাওয়াব?
বৃষ্টি আমাকে অনেক অনুরোধ করেছিল আমি তা প্রত্যাখ্যান করে পাঠিয়ে দিয়েছি। যাওয়ার সময় আমাকে বলেছিল, ‘দেখবে, সারাজীবন তুমি আমার জন্য কষ্ট পাবে।’ সত্যিই মেয়েটার কথার দাম ছিল বলতে হয়। ওর বিয়ের পাঁচ বছর পার হলো তবু বিন্দুমাত্র ভুলতে পারিনি আর পারব না এ জীবনে। নিজে বিয়েটাও করলাম না ওর স্মৃতি আঁকড়ে ধরে রয়েছি। আর অন্য কোনো মেয়ে আমার মনে আসন গাঁড়তে সক্ষম হয়নি। কাউকে মনে ধরলে হয়তো বা কোনো চিন্তা-ভাবনা করা যেত। তবে সে রকম মিষ্টি মনের কারো সাথে সম্পর্ক স্থাপনের অবকাশ পেলে মন্দ হতো না বৈকি। আর নরম উষ্ণ স্পর্শের ছোঁয়া পেতে কার না ভালো লাগে?
সকাল থেকেই মেঘাচ্ছন্ন হয়ে আছে। আকাশ ভেঙে অঝর ধারায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে তো থামার নামমাত্র নেই। দৌড়ে গিয়ে কোনোমতে ঠাঁই নেওয়া একটা দোকানে দাঁড়িয়েছি কিন্তু ফুটো টিনের চালে পানি রোধ হচ্ছে না। এদিকে ঝড়ো বৃষ্টির ঝাপটায় নিজেকে শুকনো রাখার উপায় নেই। শরীরের অধিকাংশই ভিজে গেছে। এমনিতেই শীত তার উপরে ভেজা পোশাকে অস্বস্তি লাগছে। পেছন দিকে যে আর একটু সরে দাঁড়াব সেই সৌভাগ্যটাও হচ্ছে না। পাশেই গা ঘেঁষে একটি মেয়ে জড়োসড়ো হয়ে দাঁতে দাঁত লাগিয়ে কাঠঠোকরার শব্দে করে কাঁপছে। আঁড়িভাবে চেয়ে দেখি, অসম্ভব সুন্দরি ও বেশ লম্বা; যেন সদ্য বেড়ে উঠা লকলকে লাউ গাছের ডগা।
কঁচি শসার মতো টসটসে অপরূপ সৌন্দর্যের কারুকার্যে গড়া দেহখানি মনে হয় আমাকে আলগুছিয়ে উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে। শরীরে ল্যাপটানো ভেজা কাপড়ে অদ্ভুত আকর্ষণীয়, যেন চোখ ফেরানো দুস্কর। দুরুদুরু কাঁপা লিপস্টিক লাগানো ঠোঁটের ফাঁকে পানির আছড়ে পড়া ফোটা আনন্দে নাচানাচি করছে। মৌচাকে নাড়া দিলে যেভাবে টপটপিয়ে মধু ঝরে ঠিক তেমনি তার ঠোঁট বেয়ে নির্গত হচ্ছে হীরার মতো চকচকে গাঢ় টাটকা রস। ইচ্ছে করছিল ওগুলোর ফোঁটা মাটিতে পড়ার আগেই পরম অমৃত আয়েশে চেটেপুটে খেয়ে ফেলি। এমন এক চঞ্চলতা দোলা দিয়ে চরম উন্মাদনায় নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি অজানা স্বপ্নের কোরিডরে। কখন বৃষ্টি থেমে গেছে টের পাইনি। মেয়েটিও হঠাৎ কোথায় উধাও হয়ে গেল, এদিক ওদিক কোনো খোঁজ পেলাম না।
আখতারুল ইসলাম খোন্দকার: মোহনপুর, রাজশাহী
এসএন