স্কুলের প্রেম
বৃষ্টির দিনে বন্ধুদের সঙ্গে স্কুলের বারান্দায় আড্ডায় মেতেছিলাম সেদিন। ঠাণ্ডা হাওয়া বারান্দায় থাকায় হাই বেঞ্চের উপর বসে হঠাৎচোখে পড়ে নীল জামা সাদা সেলোয়ার পরা আর লাল রঙের ছাতা নিয়ে ঝুম বৃষ্টি ভেজা দিনে সবুজ ঘাসের উপর কালো নুপুর পরা এক রমণী।
আড্ডা থেকে কিছুটা অমনোযোগী হয়ে সে শ্যামলা বর্ণের মেয়েটিকে দেখার চেষ্ঠা করছি বার বার। ছাতার জন্য চেহারা দেখা যাচ্ছে না। বন্ধুদের নিয়ে যেখানে আড্ডা দিচ্ছি ঠিক সে জাগয় দিয়ে ওঠার সময় ছাতা নামানোর সঙ্গে এক পরীকে দেখলাম স্কুলের প্রাঙ্গণে। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম আর দেখালাম। স্কুলে বার্ষিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করায় সিনিয়ার জুনিয়ার সবাই আমাকে চিনে। আমিও অনেককে চিনি। কিন্তু এই পরীতো আমার চেনা ডিকশনারিতে নেই।
এগুলো চিন্তা করতে করতে মেয়েটা কোন ক্লাসে গেল তা দেখার কথা আমার মনে নাই। তার প্রথম দেখাতে আমায় ব্যাকুল করে দিয়েছে। আমি মাথা থেকে সে পরীকে নামাতে পারছি না। হুটকরে পেছন দিয়ে গণিতের পলাশ স্যার বেত দিয়ে করল আঘাত। এত বড় সাহস তোর আমি সামনে দিয়ে দু’বার হেঁটে গেলাম তুই তাকালিও না। সঙ্গে কজন বন্ধু ছিল ওরা যে কোথায় রেখে চলে গেছে আমি জানি না। স্কুল জীবনের বন্ধুরা তো এমনি। আমি স্যারের বেতের আঘাত খেয়েছি ঠিক কিন্তু ব্যাথা পাইনি। কারণ, আমার মাথায় তো পরী ঘুরছে।
সঙ্গে ছিল যে বন্ধুরা তাদের মারার জন্য যাওয়ার আগে ওরা বলছে ‘মামা’ তোরে ডাকছি কিন্তু স্যার চলে আসাতে আমরা রেখে চলে আসছি। আমি বললাম বাদ দে। ওই মেয়েটাকে আমি চিনি না কেন? কোন ক্লাসে পড়ে। কোনো এক বন্ধু বলে উঠল ও ‘তানজিন’ অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। আমাদের ক্লাশমেট সাবিনার বোন। সাবিনার বোন? ‘কি বলস দেখি নাইতো’। সারা দিন রাত পড়া লেখা খেলা-ধুলা করছি ঠিক, কিন্তু তাকে মন থেকে ফেলতে পারছি না। প্রতিদিন স্কুলে যাচ্ছি তারে খোঁজ করতেছি, দেখতেছি, অন্য রকম ভালোবাসে ফেলেছি। এবাবে একমাস চলে গেল। হুট করে শুনলাম তাজউদ্দিন স্যারের প্রাইভেট কোচিংয়ে সে ভর্তি হয়েছে। দেরি না করে পরের দিন আমিও ভর্তি হয়ে গেলাম। এভাবে তাকে দেখে যাচ্ছি। তখন আমি দশম শ্রেণির টেস্ট পরীক্ষা দেবো।
পড়ালেখা কি আর আছে? আমিতো আছি প্রেমের সাগরে। তার বান্ধবী আমাকে লক্ষ্য করল। একদিন আমাকে জিজ্ঞেস করে বসল। আমি চুপ করে বসে আছি। এরপর বললাম ‘হুম’ পছন্দ করি। বান্ধবীর মুখের কথা আমি চিন্তাও করি না। সেও আমাকে পছন্দ করে। আপনার সংস্কৃতি অনুষ্ঠান দেখার জন্য সে প্রতিদিন রিহার্সেল এবং ২৬ মার্চ দেখেছে জ্ব¦র নিয়ে। শুনে আমিতো মহা খুশি। তারপর ওর মাধ্যমে প্রস্তাব দিলাম। সে ভেবে জানাবে বলল, এরপর আবার জিজ্ঞেস করলাম, সে ভেবে জানাবে বলল। কিছুদিন পর আবার জিজ্ঞেস করলাম। তার উত্তর ছিল স্কুলে প্রেম করা সম্ভব নয়, কলেজে উঠলে চিন্তা করবে। এরপর আমি কলেজে উঠলাম। স্কুলের সামনে প্রথম অনেক দিন গেলাম। কিন্তু তাকে খুজে পাওয়া গেল না। এখন আমি বিবিএ এবং এমএ শেষ করে চাকরি করছি কিন্তু সে প্রথম দিনের মেয়েটিকে এখনো ভালোবাসি।
সমাজ পরিবারের ভয়ে তখনকার স্কুল জীবনটা ছিল পরিপাটি। অল্প বয়সে অনেক কিছু করতে চাইলেও শিক্ষক মা বাবার ভয়ে কিছু করা সম্ভব হতো না। আধুনিকতার ছোঁয়া থাকলেও তা অপব্যবহার করা সম্ভব ছিল না। নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত স্কুল জীবনের ভালোবাসার বন্ধুকে কখনো ভোলা যায় না।
মো. হামিদুর রহমান, বৈশাখী টিভি, মহাখালী ঢাকা