ইসলামে ক্ষমার মাহাত্ম্য
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন ক্ষমার মূর্তপ্রতীক। তিনি মানুষকে ক্ষমা করতেন এবং ক্ষমা করতে ভালোবাসতেন। মাক্কি জীবনে দীর্ঘ ১৩ বছর কাফির-মুশরিকরা বহু কষ্ট দেয় তাঁকে। সাহাবায়ে-কেরামের উপর অমানুষিক নির্যাতন-নিপীড়ন চালায়। তাঁকে নিজ মাতৃভূমি থেকে বহিষ্কার করে দেয়। অথচ দীর্ঘ ১০ বছর পর যখন বিজয়ী বেশে মক্কায় প্রবেশ করেন, তখন সবাইকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে বলেন, ‘আজ কারও উপর আমার কোনো অভিযোগ নেই। আমি সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছি।’
অন্যকে ক্ষমা এবং অন্যের ভুলের প্রতি সহনশীলতা প্রদর্শন করে সদাচরণ করা ছিল রাসূলের (সা.) সুন্নত ও আদর্শ। হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলের (সা.) সঙ্গে হাঁটছিলাম। তাঁর গায়ে জড়ানো ছিল ইয়েমেনি মোটা চাদর। এক বেদুইন কোত্থেকে এসে বলা-কওয়া নেই, হুট করে চাদরে সজোরে মারল টান। চাদরের ঘষায় রাসুলের (সা.) কাঁধে নগদে দাগ বসে গেল। লোকটি কর্কশকণ্ঠে বলল, আল্লাহর যে মাল তোমার কাছে আছে তা থেকে আমাকে কিছু দিতে বলেন। রাসুল (সা.) লোকটির দিকে ফিরে তাকালেন এবং মুচকি হাসলেন। এরপর তাকে কিছু সম্পদ দেওয়ার আদেশ করলেন।’ (বুখারি: ৩১৪৯)
রাসুলের (সা.) ক্ষমাশীল আচরণের প্রশংসা রাব্বুল আলামিন চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন পবিত্র কোরআনে। বলেছেন–‘রবের দয়ায় আপনি তাদের প্রতি বিনম্র থেকেছেন। আপনি যদি কঠোর মনের হতেন, তা হলে এরা সবাই আপনার থেকে দূরে সরে যেত। সুতরাং তাদের ক্ষমা করুন, তাদের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করুন।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৫৯)
একই আদর্শের দেখা মেলে অন্য নবী-রাসুলদের জীবনেও। হজরত নূহ (আ.) তার কওমের লোকদের থেকে ৯৫০ বছর ধরে কষ্টের শিকার হয়েছিলেন। এত কষ্টের পরও কোনোদিন প্রতিশোধ নেননি। সব ক্রোধ-কষ্ট হজম করেছেন। সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছেন সাদামনে। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-কে নমরুদ আগুনে ফেলেছে। ক্ষুধার্ত সিংহের সামনে নিক্ষেপ করেছে। আরও কত-শত জ্বালা-যন্ত্রণা দিয়েছে! কিন্তু তিনি কোনো প্রতিশোধ নেননি। সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। হজরত মুসা (আ.)-এর উম্মতরা পুরোটা জীবন বহু কষ্ট দিয়েছে তাঁকে। বিভিন্ন বিষয়ে তাকে মনসিক চাপে পড়তে হয়েছে উম্মতের কারণে। অথচ তিনি সর্বদা ক্ষমাশীলতার পরিচয় দিয়েছেন।
কাউকে ক্ষমা করে দিলে নবীদের সুন্নত যেমন পালন হয়, তেমনি ক্ষমাশীল বান্দা রাব্বুল আলামিনের ভালোবাসার পাত্র হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। তাঁদের উদ্দেশে আল কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা সুসময়ে ও দুঃসময়ে সম্পদ ব্যয় করে এবং ক্রোধ সংবরণ করে ও মানুষকে ক্ষমা করে; আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৩৪)
মানুষ মাত্রই ভুল। মানবজীবনে নানা ঝামেলায় জড়িয়ে, জেনে না জেনে, ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় অপরের মনে কষ্ট দিয়ে থাকি আমরা। এ অবস্থায় আমাদের জন্য করণীয় হচ্ছে, অন্যায়কারীর অপরাধকে ক্ষমা করে দেওয়া। তা হলে নবীদের সুন্নত আদায় হবে। আবার পরকালে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহর দরবারে ক্ষমা পাওয়ার আশাটুকুও দৃঢ় হবে।
এসএ/