নিউ ইয়র্কে ‘লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ’ নামে রাস্তা
'লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ' নামে রাস্তার পুন:নামকরণের রুপকার স্থানীয় কাউন্সিলম্যান জেমস এফ জিনারো।
যুক্তরাষ্ট্রের জ্যামাইকা এলাকার হিলসাইড এভিনিউ থেকে হোমলন এভিনিউ পর্যন্ত ‘লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ’ নামকরণে নগর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের খবরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে আনন্দের বন্যা বইছে। আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে জ্যামাইকায় নতুন পুন:নামকরণের রাস্তাটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে।
'লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ' নামে রাস্তার পুন:নামকরণের রুপকার স্থানীয় কাউন্সিলম্যান জেমস এফ জিনারো। রাস্তার পুন:নামকরণের উদ্যোগ নেওয়ায় তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন নিউ ইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনবহুল নিউ ইয়র্ক সিটিতে অভিবাসী বাংলাদেশিদের একটি বৃহৎ সমাজ গড়ে উঠেছে। শুধু নিউ ইয়র্ক শহরেই দু’লক্ষাধিক বাংলাদেশি বসবাস করছেন। বহুজাতিক এ নগরীর কুইন্স কাউন্টি গোটা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বৃহত্তম কাউন্টি। কুইন্সের ৪৭ শতাংশ বাসিন্দাই অভিবাসী। বাংলাদেশি অভিবাসীদের একটি বড় অংশের বসবাস কুইন্সের জ্যামাইকায়।
নিউ ইয়র্ক সিটির কুইন্সে নতুন এই নামকরণ হবে ‘লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ’। নিউ ইয়র্ক সিটির পাঁচটি বরো বা পৌরসভার মধ্যে কুইন্সের জ্যামাইকা অন্যতম। যদিও অপর দুই বরো ব্রুকলিন ও ব্রঙ্কসেও বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি বাস করেন। ব্রঙ্কসে ইতোমধ্যেই একটি সড়কের নামকরণ ‘বাংলা বাজার’ করা হয়েছে। অনুরূপ প্রক্রিয়া চলছে ব্রুকলিনেও। তবে কুইন্সের জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউ'র সাটফিন থেকে শুরু করে কুইন্স ভিলেজসহ আশপাশের এলাকায় বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি বসবাস করছেন।
গত বছর ডিসেম্বর মাসে ‘লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ’ সংক্রান্ত বিলটি পাস হয়। এই বিল পাশে স্থানীয় কাউন্সিলম্যান জেমস এফ জিনারোর এ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। প্রথমেই বাংলাদেশ বা দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নামে জ্যামাইকায় একটি রাস্তার নামকরণ করার দাবি ওঠে। সেই দাবির লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় কাউন্সিলম্যান জিম এফ জিনারোর মাধ্যমে কুইন্স বরো হল ও সিটি প্রশাসনের কাছে বিভিন্ন পর্যায়ে লবিং চলছিল। প্রবাসীদের পক্ষ থেকে পৃথক দু’টি গ্রুপ স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীরোত্তমের নামে একটি রাস্তার নামকরণের দাবি তোলেন। অপর একটি মহল ‘বাংলাদেশ’ নামে রাস্তার নামকরণের দাবি করেন যাতে কোনো রাজনৈতিক বিভেদ সৃষ্টি না হয়। পরিশেষে ‘লিটন বাংলদেশ এভিনিউ’ নামকরণ চূড়ান্ত করা হয়। বিলের নম্বর আইএনটি ২৪৭৭-২০২১। সিটি কাউন্সিলে বিলটি উত্থাপন করেন স্থানীয় কাউন্সিল ডিষ্ট্রিক্ট-২৪ এর কাউন্সিলম্যান জেমস এফ জিনারো।
বাংলাদেশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ স্থায়ীভাবে বাস করছেন জ্যামাইকা এলাকায়। জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারকে কেন্দ্র করে সেখানে বিস্তৃতি ঘটেছে বাংলাদেশি অভিবাসীদের। গড়ে উঠেছে একটি চমৎকার প্রতিবেশ ও পরিবেশ। স্থানীয় হিলসাইড এভিনিউতে সাটফিনের ১৪৪ স্ট্রিট থেকে ১৭৫ স্ট্রিট পর্যন্ত বিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশিদের ব্যবসায় বাণিজ্য। এলাকাটি এখন এক টুকরো বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। আর এই এক টুকরো বাংলাদেশকেই আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে নিউ ইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষ। জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউও ১৪৪ স্ট্রিট থেকে বাংলাদেশি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্র বিন্দুকে ‘লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ’ নামকরণ করা হচ্ছে। বিশেষ করে ১৬৯ স্ট্রিট, হোমলন স্ট্রিট ও হিলসাইড এভিনিউর সংযোগস্থলটি প্রাধান্য পাচ্ছে এই নামকরণের কেন্দ্র হিসেবে। এর আগে জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের সামনে ১৬৮ স্ট্রিটটির নামকরণ করা হয় ‘জেএমসি ওয়ে।’
উল্লেখ্য, সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে সিটির ১৯৯টি রাস্তার নাম বিশিষ্ট ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও দেশের নামে পুন:নামকরণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের মধ্যে ‘লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ’ও রয়েছে।
আরএ/