নিউ ইয়র্কে প্রবাসীকে পুলিশি হয়রানি, মানহানি মামলা
যন্ত্রশিল্পী পার্থ গুপ্ত ও ব্যবসায়ী শাহনাওয়াজ
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ভুয়া অস্ত্র মামলা দিয়ে হয়রানি করায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজের বিরুদ্ধে আড়াই মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২১ কোটি ৫২ লাখ ৫০ হাজার টাকা) ক্ষতিপূরণ চেয়ে মানহানি মামলা করেছেন প্রবাসী যন্ত্রশিল্পী পার্থ গুপ্ত।
প্রবাসী যন্ত্রশিল্পীর ফেসবুকের ছবিতে ফটোশপের মাধ্যমে পিস্তলের ছবি বসিয়ে পুলিশি হয়রানি ও প্রতারণার দায়ে গত সোমবার (৩১ জানুয়ারি) নিউ ইয়র্কের কুইন্স কাউন্টি ফৌজদারি আদালতে ভুক্তভোগী যন্ত্রশিল্পীর আইনজীবী মিয়ালি এ ম্যাকেলিলি ওই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন।
দায়ের করা মামলায় পার্থ গুপ্ত সামাজিক ও মানসিকভাবে হেয় প্রতিপন্নসহ দেড় যুগের শিল্পী জীবনের সুনাম চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে উল্লেখ করে তার ব্যবসার সাবেক অংশীদার হোম কেয়ার ও ইন্সুরেন্স ব্যবসায়ী শাহনাওয়াজ, তার প্রতিষ্ঠান গোল্ডেন হোম কেয়ার, এনওয়াই আটো ইন্সুরেন্স, স্ত্রী আমেনা নাওয়াজ, সহযোগী মোস্তফা অনিক রাজ ও জন অ্যান্ড জেন ডোর নামে আড়াই মিলিয়ন ডলারের (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২১ কোটি ২৫ লাখ) ক্ষতিপূরণ দাবি করে মানহানি মামলা দায়ের করেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, নিউ ইয়র্ক প্রবাসী যন্ত্রশিল্পী পার্থ গুপ্তের ফেসবুক থেকে ছবি নিয়ে ফটোশপের মাধ্যমে ছবির পাশে পিস্তল বসিয়ে গত বছর ১০ সেপ্টেম্বর রাত ১টা ২৯ মিনিটে নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের জ্যাকসন হাইটসের নর্দার্ন ব্লুভার্ড-১১৫ এলাকার পুলিশের কাছে জীবননাশের মিথ্যা অভিযোগ করেন তার ব্যবসার অংশীদার হোম কেয়ার ও ইন্সুরেন্স ব্যবসায়ী শাহনাওয়াজ। যৌথভাবে ব্যবসা পরিচালনার সময় পার্থ গুপ্তের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে ৫ হাজার ডলার তুলে আর ফেরত দেননি শাহনাওয়াজ। গত বছর ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দু'জনের মধ্য দ্বন্দ্ব ও মনোমালিন্য দেখা দিলে তার অফিসে একটি সালিশি বৈঠক বসে। সেখানে সুরাহা না হওয়ায় পার্থ তার বাসায় ফেরার জন্য গাড়িতে বসেন। এমন সময় শাহনাওয়াজের সহযোগী মোস্তফা অনি রাজ এসে তাকে নানা ধরনের হুমকি প্রদর্শন করে জোরপূর্বক সালিশের কাগজে স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা চালায়।
পার্থ গুপ্তের বিরুদ্ধে শাহনাওয়াজ পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, পার্থ গুপ্ত তাকে জীবননাশের (হত্যা) হুমকি দিয়ে তার ফোনে লিখিত বার্তা পাঠিয়েছেন এবং একটি অনুষ্ঠানের পর পিস্তল দেখিয়ে গুলি করার হুমকি দিয়েছেন। এর সমর্থনে ফটোশপে তৈরিকৃত পার্থ গুপ্তর ছবির পাশে তার বিছানায় পিস্তলযুক্ত ছবি পুলিশকে দেখান তিনি।
এর দুই মাস আগে ২৯ আগস্ট জ্যাকসন হাইটসের ৭৬-৩৭ স্ট্রিটের ওপর বাংলাদেশিদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত একটি পথমেলায় তার গোল্ডেন এজ হোম কেয়ারের সাবেক অংশীদার ব্যবসায়ী ও জনপ্রিয় যন্ত্রশিল্পী পার্থ গুপ্তসহ কয়েকজন মিলে সন্ধ্যা ৬টা/সাড়ে ৬টার দিকে তাকে মারধর করেন। এ সময় তার জীবননাশের উদ্দেশে তারা বিপজ্জনক যন্ত্র (পিস্তল, রিভলভার, রাইফেল, শর্টগান কিংবা মেশিনগান) প্রদর্শন করেন (মামলার ডকেট নম্বর-‘সিআর-০২০৫৬০-২১ কিউএন’)। তার জীবনের নিরাপত্তার জন্য তিনি পুলিশের সাহায্য চান। পুলিশের কাছে তার প্রাণনাশের হুমকি সংক্রান্ত অভিযোগ করেন। তার অভিযোগের সূত্র ধরে গত বছর ৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের নর্দার্ন ব্লুভার্ড-১১৫ এলাকার পুলিশ কর্মকর্তা টেলর স্কালা পার্থকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ স্টেশনে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানান। ফোন পেয়ে পার্থ গুপ্ত স্বেচ্ছায় পুলিশ স্টেশনে গেলে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত পর্যন্ত তাকে আটক রাখেন পুলিশ।
পরদিন ৫ অক্টোবর পার্থ গুপ্তকে নিকটস্থ ফৌজদারি আদালতে পাঠালে বিজ্ঞ বিচারক পার্থ গুপ্তের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। মামলার বাদী শাহনাওয়াজের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখারও নির্দেশ দেন আদালত।
নিউ ইয়র্কের হোম কেয়ার ও ইন্সুরেন্স ব্যবসায়ী শাহনাওয়াজ তার দায়ের করা অভিযোগের সত্যতা প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ায় নিউ ইয়র্কের কুইন্স কাউন্টি ফৌজদারি আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মেরি এল বেজারানো দীর্ঘ পাঁচমাস পর গত ১২ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টায় ভার্চ্যুয়ালি প্রথম শুনানিতেই সাজানো ও পরিকল্পিত উক্ত মামলাটি (সিআর-০২০৫৬০-২১ কিউএন) খারিজ করেন। একই সাথে ব্যবসায়ী ও যন্ত্রশিল্পী পার্থ গুপ্তকে নির্দোষ বলে উল্লেখ করেন আদালত।
মামলার বিবরণে আরও উল্লেখ করা হয় হোম কেয়ার ব্যবসায় কর্মচারীদের ‘বেতন সুরক্ষা কার্যক্রম’ বা পে-চেক প্রোটেকশন প্রোগ্রাম (পিপিপি)-এর জন্য কেন্দ্রীয় যুক্তরাষ্ট্র (ফেডারেল) সরকারের দেওয়া ঋণের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন নিউ ইয়র্কের হোম কেয়ার ব্যবসায়ী প্রতারক শাহনাওয়াজ। তিনি দু’টি হোম কেয়ার ব্যবসায় ১৪০ জন কর্মাচারী দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে ৫ লাখ ২৪ হাজার ৭২৯ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪ কোটি ৪৬ লাখ ১ হাজার ৯৬৫ টাকা) পে-চেক প্রোটেকশন প্রোগ্রাম (পিপিপি) ঋণ গ্রহণ করে দুই অংশীদার মিলে ভাগ করেছেন। কোম্পানির ব্যাংক হিসাব থেকে তারা নিজেদের ব্যাংক হিসাবে অর্থ স্তানান্তর করেছেন। বেঙ্গল হোম কেয়ার ইঙ্ক ও গোল্ডেন এজ হোম কেয়ারের অংশীদার ছিলেন পার্থ গুপ্ত। এ দু’টি প্রতিষ্ঠানের নামে পে-চেক প্রোটেকশন প্রোগ্রাম (পিপিপি)-এর জন্য কেন্দ্রীয় যুক্তরাষ্ট্র (ফেডারেল) সরকারের দেওয়া ঋণের অর্থের হিসাব চাওয়ায় অংশীদার শাহনাওয়াজের সাথে মনোমালিন্য দেখা দেয়। আর এই সুযোগে তাকে হেনস্থা করতে পাঁচমাস আগে অর্থাৎ গত বছর ১০ সেপ্টেম্বর রাত ১টা ২৯ মিনিটে তার ব্যবসার অংশীদার হোম কেয়ার ও ইন্সুরেন্স ব্যবসায়ী শাহনাওয়াজ নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের জ্যাকসন হাইটসের নর্দার্ন ব্লুভার্ড-১১৫ এলাকার পুলিশের কাছে জীবন নাশের হুমকির অভিযোগ দায়ের করেন।
আরএ/