লিবিয়ায় নিখোঁজ সিলেটের ২৫ যুবক
নিজের ও পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য লিবিয়ায় গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন সিলেটের বিয়ানীবাজার, বড়লেখা ও কানাইঘাট উপজেলার ২৫ জন যুবক। এর মধ্যে আমিনুল ইসলাম নামক বিয়ানীবাজারের এক যুবকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও বাকিদের ভাগ্যে কী ঘটেছে কেউ জানে না।
প্রায় ৮-৯ মাস পূর্বে তাদেরকে ইউরোপে পাড়ি জমানোর উদ্দেশ্যে লিবিয়ায় নিয়ে যাওয়ার পর গত ৪ মাস থেকে তাদের সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তাদের পরিবারে এখন চলছে কান্নার মাতম।
এই ২৪ যুবকের সন্ধান ও আদম পাচারকারী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে বিয়ানীবাজার প্রেসক্লাব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নিখোঁজদের স্বজনরা।
নিখোঁজ যুবকদের পরিবারের পক্ষ থেকে বিরাজ উদ্দিন বলেন, প্রায় চার মাস থেকে তাদের সন্তানদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। তাদের মন বলছে ছেলেরা এখনো জীবিত আছে। তবে তারা হয়তো কোনো আদম পাচারকারী চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। অথবা কোনো কারাগারে হয়তো বন্দি আছেন। নিখোঁজ যুবকদের সন্ধানের জন্য তারা প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের অন্যান্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সহযোগিতা কামনা করেন।
সংবাদ সম্মেলন চলাকালে নিখোঁজ যুবকদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তারা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
উপস্থিত আতিকুর রহমান জানান, যুবকদের ইউরোপে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে একটি আদম বেপারী চক্র তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি ১০-১২ লাখ টাকা করে নিয়েছে। কিন্তু এখন তারা কোনো সন্ধান দিচ্ছে না। এক পর্যায়ে আদম বেপারীরা গা ঢাকা দেয়।
তারা জানান, লিবিয়ায় অবস্থান করা যুবকদের মধ্যে সম্প্রতি আমিনুল ইসলাম (২৪) নামক এক যুবক সেখানকার পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেলেও তার মরদেহ এখনো দেশে আসেনি। কোথায় আছে তাও কেউ জানে না।
আদম বেপারী চক্রের নাম পরিচয় সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করা হয়। এদের ব্যাপারে থানায় মামলা করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
নিখোঁজ যুবকদের মধ্যে ১৯ জন বিয়ানীবাজার, ৩ জন বড়লেখা, ২ জন জকিগঞ্জ ও ১ জন কানাইঘাট উপজেলার বাসিন্দা। নিখোঁজ যুবকরা হলেন:
বিয়ানীবাজার উপজেলার:
তানহারুল ইসলাম (২৩), পিতা আমিরুল ইসলাম, গ্রাম- পূর্ব লাউজারী,
আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩০), পিতা- আতিকুর রহমান, গ্রাম- পূর্ব লাউজারী,
হোসেন আহমদ (৩৫), পিতা- হাবীবুর রহমান, গ্রাম- খশিরবন্দ (হাতিটিলা),
রাজু আহমদ (২৬), পিতা- বিরাজ উদ্দিন, গ্রাম- খশির কোনাপাড়া,
কামরুজ্জামান রাহাত (২২), পিতা- আব্দুল কাইয়ুম, গ্রাম- খশিরবন্দ (হাতিটিলা),
এনামুল হক (১৯), পিতা- সামছুল হক, গ্রাম- ঘুঙ্গাদিয়া নয়াগাঁও,
আব্দুল আজিজ (৩২), পিতা- হাজী শের মিয়া, গ্রাম- পূর্ব লাউজারী,
আব্দুল্লাহ আল জুনেদ (২৬), পিতা- লিয়াকত আলী, গ্রাম- পূর্ব লাউজারী,
আরিফ আহমদ দুলাল (২৪), পিতা- আবুল হোসেন, গ্রাম- গড়রবন্দ,
আব্দুল করিম (২৫), পিতা- বারহাম আলী, গ্রাম- ঘুঙ্গাদিয়া নয়াগাঁও,
তোফায়েল আহমদ অজিত (২৪), পিতা- আবুল হোসেন, গ্রাম- খশিরবন্দ হাতিটিলা,
মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল ইমন (২২), পিতা- হাজী মো: মিন্নত আলী, গ্রাম- পূর্ব লাউজারী,
মোহাম্মদ আলী (২৭), পিতা- বিলাল উদ্দিন, গ্রাম- জলঢুপ,
কয়ছর আহমদ (২৬), পিতা- আরফত আলী, গ্রাম- গড়রবন্দ,
জাকারিয়া আহমদ (২১), পিতা- ইদ্রিছ আলী, গ্রাম- চারখাই,
জুনেদ আহমদ (২৩), পিতা- মাওলানা আছার উদ্দিন,
হোসাইন আহমদ (১৯), পিতা- সুরুজ আলী, গ্রাম- ঘুঙ্গাদিয়া নয়াগাঁও,
আব্দুল হক (২২), পিতা- বাহার উদ্দিন, গ্রাম- সারোপার,
বড়লেখা উপজেলার:
সাহেল আহমদ (২৪), পিতা- বাবুল হোসেন, গ্রাম- শাহবাজপুর,
জাকির হোসেন (২৪), পিতা- মো. নূর উদ্দিন, গ্রাম- হাকালুকি
আব্দুল হাছিব (২৬), পিতা- ওয়াইছ আলী, গ্রাম- শাহবাজপুর,
জকিগঞ্জ উপজেলার:
বকুল আহমদ (২৩), পিতা- মইন উদ্দিন, গ্রাম- লোহারমহল,
আবুল কাশেম আজহার (২৫), পিতা- আব্দুল কাদির, গ্রাম- লোহারমহল,
কানাইঘাট উপজেলার:
আব্দুর রহিম চৌধুরী (২৩), পিতা- আব্দুল মতিন চৌধুরী,
এ বিষয়ে বিয়ানীবাজার থানার (ওসি) হিল্লোল রায় জানান, এ বিষয়ে বিয়ানীবাজার থানায় কোন অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এপি/এএস