বুধবার, ২ এপ্রিল ২০২৫ | ১৯ চৈত্র ১৪৩১
Dhaka Prokash

১৫ লাখ অভিবাসী নেবে কানাডা, আবেদন করবেন যেভাবে

ছবি: সংগৃহীত

অন্যতম অভিবাসন-বান্ধব দেশ কানাডা আগামী তিন বছরে কমপক্ষে ১৫ লাখ অভিবাসী নেবে । স্থানীয় সময় বুধবার (১ নভেম্বর) এ সংক্রান্ত নতুন একটি পরিকল্পনা ঘোষণা করে দেশটির সরকার। দেশটির অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রী ম্যাক মিলার জানিয়েছেন করোনাভাইরাস মহামারির প্রকোপ কাটিয়ে ওঠার পর তীব্র কর্মী সঙ্কট মোকাবিলায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) তিনি আগামী তিন বছরে অর্থাৎ ২০২৪ থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে কয় ধাপে এই রেকর্ড সংখ্যক অভিবাসী নেওয়া হবে তা বিস্তারিত জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, লক্ষ্যমাত্রা পূরণে চলতি বছর কানাডা তার বর্তমান অভিবাসন নীতিতে আর কোন পরিবর্তন আনবে না। তবে আগামী তিন বছরকে সামনে রেখে নতুন অভিবাসন নীতি ঘোষণা করা হবে।

বর্তমান অভিবাসন পরিকল্পনা অনুয়াযী, চলতি বছর চার লাখ ৬৫ হাজার অভিবাসী নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে কানাডার। তবে আগামী বছর নতুন করে চার লাখ ৮৫ হাজার অভিবাসী নেবে অটোয়া। আর পরবর্তী দুই বছরে ৫ লাখ করে মোট ১০ লাখ অভিবাসী নেবে কানাডা।

উত্তর আমেরিকার দেশটির অভিবাসনবিষয়ক সরকারি ওয়েবসাইট ‘ইমিগ্রেশন কানাডা’র (ওয়েব সাইট https://www.immigration.ca/canadas-immigration-levels-plan-targets-nearly-1-5-million-newcomers-in-2024-2026/) তথ্য থেকে জানা গেছে, ২০২৪ সালে অর্থনৈতিক শ্রেণির (ইকোনমিক ক্লাস গ্রো) অধীনে দুই লাখ ৮১ হাজার ১৩৫ অভিবাসী নেবে দেশটি। আর পরবর্তী দুই বছর ২০২৫ ও ২০২৬ সালে এই ক্যাটাগরিতে নেওয়া অভিবাসীর সংখ্যা বছরপ্রতি তিন লাখ এক হাজার ২৫০ জনে উন্নীত করা হবে।

আগামী বছর পারিবারিক শ্রেণীতে (ফ্যামিলি ক্লাস) এক লাখ ১৪ হাজার অভিবাসী নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কানাডা, যা বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার ২৪ শতাংশ। ২০২৫ ও ২০২৬ সালে এই সংখ্যা বছরপ্রতি হবে এক লাখ ১৮ হাজার।

শরণার্থী ও সুরক্ষিত ব্যক্তি ক্যাটাগরিতে (রিফিউজি) চলতি বছর ৭৬ হাজার ৩০৫ জন শরণার্থী নিচ্ছে কানাডা। ২০২৪ সালে এই ক্যাটাগরিতে ৭৬ হাজার ১১৫ শরণার্থী নেওয়া হবে। আর ২০২৫ ও ২০২৬ সালে প্রতি বছর ৭২ হাজার ৭৫০ জন শরণার্থী নেবে অটোয়া।

আবার, ২০২৪ সালে মানবিক ক্যাটাগরিতে ১৩ হাজার ৭৫০ জন অভিবাসী নেবে কানাডা। আর ২০২৫ ও ২০২৬ সালে এই ক্যাটাগরিতে অভিবাসন অনুমোদনের সংখ্যা ১৬ লাভ করা হবে (প্রতিবছর ৮ হাজার)।

অভিবাসনবিষয়ক নতুন লেভেল প্ল্যানে এক্সপ্রেস এন্ট্রি ও পিএনপির (প্রভিন্সিয়াল নমিনি প্রোগ্রাম) আওতা বাড়াবে অটোয়া। ২০২৪ সালে এক্সপ্রেস এন্ট্রির মাধ্যমে এক লাখ ১০ হাজার ৭৭০ জনকে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দেবে দেশটির ফেডারেল সরকার। ২০২৫-২০২৬ সালে এই সংখ্যা বছরপ্রতি ১ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ জনে উন্নীত করা হবে।

এদিকে, প্রাদেশিকভাবে (পিএনপি) ২০২৪ সালের জন্য কানাডার লক্ষ্যমাত্রা হলো ১ লাখ ১০ হাজার। তবে ২০২৫-২০২৬ সালে এই ক্যাটাগরিতে প্রতি বছর ১ লাখ ২০ হাজার অভিবাসী কানাডায় স্থায়ী হওয়ার সুযোগ পাবে। অন্যদিকে, ২০২৪ সালে ফ্যামিলি রিইউনিফেকেশন বা ফ্যামিলি ক্লাস স্পন্সরশিপ (স্বামী-স্ত্রী, পার্টনার ও সন্তানের জন্য স্পন্সরশিপ) প্রোগ্রামের আওতায় ৮২ হাজার অভিবাসী নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে কানাডা। আর ২০২৫-২০২৬ সালে এই ক্যাটাগরিতে প্রতি বছর ৮৪ হাজার জন্য অভিবাসন নেবে উত্তর আমেরিকার এ দেশ। আবার বাবা-মা, দাদা-দাদির জন্য পিজিপি প্রোগ্রামের আওতায় ২০২৪ সালের মধ্যে ৩২ হাজার অভিবাসী নেবে কানাডা। পরবর্তী দুই বছরেও এই সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকবে।

কানাডার ফেডারেল সিস্টেমের বাইরে থাকা কুইবেক প্রদেশও শনিবার (৪ অক্টোবর) অভিবাসন পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। ফরাসি ভাষা অধ্যুষিত এ প্রদেশ ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে তারা ১ লাখ অভিবাসী নেবে। কুইবেক কানাডার একমাত্র প্রদেশ, যাদের এককভাবে স্থায়ী অভিবাসী নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।

অভিবাসীদের দেশ কানাডায় প্রতিবছর গড়ে তিন থেকে চার লাখ মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে এসে বসবাস করেন। কেউ আসেন সরাসরি পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি ভিসা নিয়ে, কেউ শিক্ষার্থী হিসেবে পড়তে এসে পড়াশোনা শেষ করে চাকরি নিয়ে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি নিয়ে এই দেশে থেকে যান। অনেকে নিজ দেশে বিভিন্ন সমস্যার কারণে রিফিউজি হিসেবে কানাডায় নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। কেউ ভিজিট ভিসায় এসে চলে যান। আর অনেকে আসেন ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে। ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে কয়েক বছর কাজ করার পর তারা নাগরিকত্ব লাভ করে।

উন্নত জীবনযাপন, চাকরি বা পড়াশুনার জন্য কানাডা বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় দেশ। জীবন মানের বিবেচনায় কানাডা অবস্থান শীর্ষ তিনে। কানাডা বিশ্বের অভিবাসিদের এক নম্বর পছন্দনীয় দেশ হিসেবে এরই মধ্যে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। আয়তনের তুলনায় দেশটিতে জনসংখ্যা কম এবং রাজনৈতিক বন্ধুত্বপূর্ণ সংস্কৃতির কারণে সেখানে বসবাসকারীরা নিরাপদ ও সুখী জীবনযাপন করেন। এজন্য পৃথিবীর বহু দেশ থেকে মানুষ কানাডা যাওয়ার চেষ্টা করে। দেশটিতে বর্তমানে ৩ কোটি ৮২ লাখ মানুষ বসবাস করে। যাদের মাথাপিছু আয় ৫২ হাজার ৮০ ডলার। দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) হচ্ছে প্রায় ২ হাজার বিলিয়ন ডলার।

উন্নত বিশ্বের দেশ থেকেও অনেক মানুষ কানাডায় অভিবাসী হওয়ার স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন পূরণে অনেক সময় অবৈধ উপায় অবলম্বন করে নানা হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হয়। তবে অবৈধ পথে না গিয়ে বৈধভাবে কানাডা যাওয়ার নানা উপায় রয়েছে। বৈধভাবে বাংলাদেশিদেরও কানাডা যাওয়ার বিভিন্ন সুযোগ রয়েছে। কানাডা যাওয়ার সহজ ১০ উপায়ের অন্যতম হচ্ছে এক্সপ্রেস এন্ট্রি প্রোগ্রাম। নতুন অভিবাসীদের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সব থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্থায়ীভাবে কানাডায় বসবাসের জন্য একটি পথ হলো এক্সপ্রেস এন্ট্রি প্রোগ্রাম। এটি একটি সহজ প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আপনি কানাডায় অভিবাসন ও কানাডার স্থায়ী বাসিন্দা হতে পারেন।

কানাডার অভিবাসন নীতিমালায় একটি কার্যকর উপায় হচ্ছে পরিবারের সদস্যের আমন্ত্রণে সেখানে যাওয়া যাকে বলে ফ্যামিলি রিইউনিফেকেশন বা ফ্যামিলি ক্লাস স্পন্সরশিপ। এর মাধ্যমে পরিবারের সদস্যরা স্থায়ীভাবে বসবাসের আমন্ত্রণ জানাতে পারে।

অনেক অভিবাসনপ্রত্যাশী ওয়ার্ক ভিসায় আবেদন করে কানাডায় চাকরির অফার নিয়ে যান। এই ক্ষেত্রে তাকে লেবার মার্কেট ইম্প্যাক্ট এসেসমেন্ট (এলএমআইএ) এর আওতায় আবেদন জমা দিতে হবে। এটি অপেক্ষাকৃত কঠিন প্রক্রিয়া। তবে এর মাধ্যমে কানাডায় স্থায়ী বাসিন্দা হওয়া সহজ হয়।

কানাডায় অভিবাসী হওয়ার ক্ষেত্রে পিএনপি এখন জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কানাডার প্রদেশ যেমন আলবার্টা, অন্টারিও, ব্রিটিশ কলাম্বিয়াসহ অন্যান্য প্রদেশের নিজস্ব অভিবাসন নীতিমালা রয়েছে। ফেডারেল নীতিমালার চেয়ে এই পদ্ধতিতে অনেক দ্রুত অভিবাসী হওয়া যায়। তবে এ ক্ষেত্রে কানাডায় যাওয়ার পর তাকে ওই নির্দিষ্ট প্রদেশেই বসবাস করতে হবে।

১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী যুবকরা ইন্টারন্যাশনাল এক্সপেরিয়েন্স কানাডা (আইইসি) এর আওতায় চাকুরির অফার লেটার ছাড়াই কানাডা যেতে পারে। তবে এই সুবিধা যেকোনো দেশের নাগরিকের জন্য নয়। কানাডায় দক্ষ কর্মী নেয়ার জন্য বিশেষ ভিসার সুবিধা চালু রয়েছে। ৩৪৭টি পেশায় এই জনবল নিয়ে থাকে কানাডা। এর মধ্যে রয়েছে, হেয়ার স্টাইলিস্ট (নরসুন্দর), বিক্রয় কর্মী এবং প্রশাসনিক সহকারী।

কানাডা যাওয়া আরেকটি সহজ প্রক্রিয়া স্ট্যাডি ভিসা। তবে এজন্য আপনাকে কানাডার কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি প্রক্রিয়া আগেই সেরে ফেলতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি সেখানে চাকুরি করতে পারবেন শুধুমাত্র যে স্টেটে আপনি পড়ালেখা করছেন সেই স্টেটে। এই সুযোগ পৃথিবীর সব দেশের জন্য রয়েছে।

ভ্রমণ ভিসায় কানাডা যাওয়া সহজ। তবে ভিসা পাওয়া একটু কঠিন। ছুটি কাটাতে বা ভ্রমণ করতে যারা কানাডা যেতে চান তাদের ভিসা দিয়ে থাকে।

কানাডা সরকার আগামী এক বছরে ইকোনমিক প্রোগ্রাম মোট ১ লাখ ৯১ হাজার ৬০০ অভিবাসী নেবে।

কারো যদি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকে এবং তিনি কানাডায় ব্যবসা শুরু করতে চায় তাহলে কানাডা যাওয়া তার জন্য সহজ। তবে কেউ যদি কানাডায় ব্যবসা করতে না চায় তবে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কানাডার কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের চুক্তি থাকে তবে কানাডায় যেতে পারবেন।

Header Ad
Header Ad

সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ড. ইউনূসের মন্তব্যে ভারতীয় রাজনীতিবিদদের তীব্র প্রতিক্রিয়া

সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ড. ইউনূসের মন্তব্যে ভারতীয় রাজনীতিবিদদের তীব্র প্রতিক্রিয়া। ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি চীন সফরে গিয়ে এক বক্তৃতায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যকে (সেভেন সিস্টার্স) স্থলবেষ্টিত বলে উল্লেখ করেন এবং বাংলাদেশকে এ অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের অভিভাবক হিসেবে বর্ণনা করেন।

ড. ইউনূস তার বক্তব্যে বলেন, ভারতের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত সাতটি রাজ্য সম্পূর্ণরূপে স্থলবেষ্টিত। সমুদ্রের সঙ্গে তাদের কোনো সরাসরি সংযোগ নেই। ফলে বাংলাদেশ এই অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের একমাত্র প্রবেশদ্বার এবং অভিভাবক হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে।

তার এই মন্তব্য ভারতের রাজনৈতিক নেতা ও কূটনীতিকদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যকে অনেক ভারতীয় রাজনীতিবিদ হতাশাজনক এবং নিরাপত্তার জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন।

ভারতের আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা মন্তব্য করেছেন, ড. ইউনূসের বক্তব্য ভারতের ‘চিকেনস নেক’ করিডোরের দুর্বলতা নিয়ে পাকিস্তান ও চীনের দীর্ঘদিনের প্রচারণাকে উসকে দিতে পারে। তিনি আরও বলেন, উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের সংযোগ আরও জোরদার করতে শক্তিশালী রেল ও সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি।

ত্রিপুরার আদিবাসী দল টিপ্রা মোথার নেতা প্রদ্যোত মানিক্য বলেন, ‘১৯৪৭ সালে চট্টগ্রাম ভারতের অংশ হলে আজ এ সমস্যা হতো না। আমাদের বাংলাদেশের পরিবর্তে নিজস্ব সমুদ্রবন্দর প্রয়োজন।’

বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বীণা সিক্রি বলেন, ‘উত্তর-পূর্ব ভারতের সমুদ্র প্রবেশাধিকার নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ইতোমধ্যেই চুক্তি রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের মন্তব্য অত্যন্ত হতাশাজনক এবং তিনি এ ধরনের মন্তব্য করার অধিকার রাখেন না।’

ড. ইউনূসের বক্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন একাধিক কংগ্রেস নেতা। কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা পবন খেরা মন্তব্য করেছেন, ‘বাংলাদেশের এ ধরনের অবস্থান উত্তর-পূর্ব ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।’

Header Ad
Header Ad

মিয়ানমারের ভূমিকম্পে এক ইমামের ১৭০ স্বজনের মৃত্যু

সাবেক ইমাম সোয়ে নেই ওও। ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র ঈদুল ফিতর আসন্ন। বিদায় নিচ্ছে রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস রমজান। শেষ জুমার নামাজ আদায় করতে মুসলমানদের মধ্যে আগ্রহ ছিল চরমে। কিন্তু কে জানত, এই জুমাই শত শত মুসল্লির জীবনের শেষ জুমা হয়ে উঠবে!

গত ২৮ মার্চ, শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৫১ মিনিটে মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে। সাগাইং অঞ্চলের পাঁচটি মসজিদে তখন নামাজ আদায় করছিলেন অসংখ্য মুসল্লি। শক্তিশালী ভূমিকম্পে তিনটি মসজিদ ধসে পড়ে, যার মধ্যে অন্যতম ছিল মায়োমা মসজিদ। এই মসজিদে নামাজরত প্রায় সবাই প্রাণ হারান।

মায়োমা মসজিদের সাবেক ইমাম সোয়ে নাই ওও তখন মিয়ানমার-থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী শহর মায়ে সোতে অবস্থান করছিলেন। সেখানেও তিনি ভূমিকম্প অনুভব করেন, তবে বুঝতে পারেননি কী পরিমাণ বিপর্যয় তার অপেক্ষায় রয়েছে।

সোয়ে নাই ওও একসময় মিয়ানমারের ইমাম ছিলেন, তবে ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশ ছেড়ে থাইল্যান্ডে পালিয়ে যান এবং বর্তমানে একটি মানবাধিকার সংস্থায় কাজ করছেন। ভূমিকম্পের পরের দিনগুলোতে একের পর এক শোকসংবাদ পেতে থাকেন তিনি। এখন পর্যন্ত তিনি জানতে পেরেছেন, তার প্রায় ১৭০ জন আত্মীয়, বন্ধু ও প্রাক্তন মুসল্লি মারা গেছেন। তাদের বেশিরভাগই মসজিদে অবস্থান করছিলেন, অনেকেই মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সোয়ে নাই ওও বিবিসিকে বলেন, ‘আমি প্রাণ হারানো সব মানুষের কথা ভাবছি। তাদের শিশুদের কথা ভাবছি... এই শোক সহ্য করা অসম্ভব।’

সাগাইং অঞ্চল মূলত বৌদ্ধ মন্দিরের জন্য পরিচিত হলেও এখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলমান দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন। নানা নিপীড়ন ও নির্যাতন সত্ত্বেও তারা এ অঞ্চলে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছেন।

মিয়ানমারের জান্তা সরকারের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভূমিকম্পের সময় মসজিদে নামাজরত অবস্থায় প্রায় ৫০০ মুসলমান মারা গেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মসজিদ সংলগ্ন মায়োমা স্ট্রিট ও শহরতলি। ভূমিকম্পে বহু ভবন ধসে পড়েছে, রাস্তাঘাট বিধ্বস্ত হয়েছে।

এই ভূমিকম্পে মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সাগাইং ও মান্দালয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উদ্ধারকর্মীরা এখনো ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করছেন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দেশটির জান্তা সরকার জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৭১৯ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন ৪৪১ জন এবং আহত হয়েছেন ৪ হাজার ৫২১ জন। জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং এক টেলিভিশন ভাষণে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, নিহতের সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

মিয়ানমারের ভূমিকম্পটি ছিল ৭ দশমিক ৭ মাত্রার। এর কেন্দ্রস্থল ছিল মান্দালয় শহর থেকে ১৭.২ কিলোমিটার দূরে এবং ভূ-পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে। প্রথম কম্পনের ১২ মিনিট পর ৬ দশমিক ৪ মাত্রার আফটারশক হয়, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।

এই বিধ্বংসী ভূমিকম্পে দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। উদ্ধারকর্মীরা নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও অনেকের আটকে থাকার আশঙ্কা রয়েছে।

Header Ad
Header Ad

ঈদের আনন্দে যমুনার দুর্গম চরে গ্রাম-বাংলার ঘুড়ি উৎসব, আনন্দে মেতে উঠে বিনোদনপ্রেমীরা!

টাঙ্গাইলের গোপালপুর নলিন এলাকায় যমুনার দুর্গম চরে ঈদ উপলক্ষে ঘুড়ি উৎসব। ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

আবহমান গ্রাম-বাংলা থেকে হারাতে বসেছে শৈশবের চিরচেনা ঘুড়ি উড়ানো উৎসব। আর সেই হারানো ঐতিহ্যকে ফেরাতে ও বর্তমান প্রজন্মের সামনে ঘুড়ি উড়ানোর উৎসবকে তুলে ধরতে ‘এসো উড়াই ঘুড়ি, বাংলার ঐতিহ্য লালন করি’- এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদ উদযাপন উপলক্ষে টাঙ্গাইলের গোপালপুরে ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (০১ এপ্রিল) বিকালে উপজেলার নলিন বাজারের পাশে যমুনার ধূ-ধূ বালুচরে মুক্তিযোদ্ধা নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উদ্যোগে এবং স্থানীয় সেচ্ছাসেবী আমরা গোপালপুরবাসী ফেসবুক গ্রুপ ও শুভশক্তি বাংলাদেশের সহযোগিতায় ঘুড়ি উৎসব পালন করা হয়।

এই ঘুড়ি উৎসবে নানা শ্রেণি পেশার মানুষসহ স্কুল পড়ুয়া শিশু শিক্ষার্থী নানা রঙয়ের, নানা বর্ণের রঙিন ঘুড়ি নিয়ে বালুময় চরে বিকাল বেলা সমবেত হয়। পরে একে একে ঘুড়ি উড়ানো ও ঘুড়ির সুতা কাটাকাটি খেলা শুরু হয়। তারপর সন্ধ্যায় বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে বাউল গানের আড্ডায় মেতে ওঠে বিনোদনপ্রেমিরা।

 

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

ঘুড়ি উড়াতে আসা স্কুল শিক্ষার্থী আসফিয়া জান্নাত আদরিতা বলেন- ছোট বেলা শহরে থাকি, এবার পরিবার সঙ্গে ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে এসেছি। এর আগে কখনো ঘুড়ি দেখেনি বা ঘুড়ি উড়ানো হয়নি। এবারই প্রথম ঘুড়ি উড়ানো উৎসবে এসেছি এবং উড়িয়েছি। এখানে এসে সত্যিই ভাল লাগছে।

মুক্তিযোদ্ধা নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের
শিক্ষার্থীরা জানান, কয়েক বছর ধরে আমাদের স্কুল থেকে চরাঞ্চলে ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করছে আসছে। আমরা কয়েক দিন ধরে নানা রঙয়ের বিভিন্ন ঘুড়ি তৈরি করেছি। নদীর পাড়ে বিকাল বেলা এমন উৎসবে অনেক আমাদের অনেক সহপাঠিরা তাদের মা-বাবা নিয়ে আনন্দ উপভোগ করছেন।

ঘুড়ি উৎসবে অংশ নেওয়া স্কুল শিক্ষিকা শামীমা ইয়াসমিন বলেন, কর্ম ব্যবস্ততার কারণে যমুনা চরাঞ্চলে আসার সুযোগ হয় না। বসন্ত বরণ উপলক্ষে গতবারের ন্যায় এবারো ময়না আপার ডাকে ঘুড়ি উৎসব উদযাপনে পরিবার নিয়ে অংশ গ্রহণ করেছি। চরাঞ্চলের এমন উৎসবে আসতে পেরে খুব ভাল লাগছে।

 

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

মুক্তিযোদ্ধা নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ঘুড়ি উৎসব আয়োজক আঞ্জু আনোয়ারা ময়না বলেন, গ্রাম-বাংলা ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে ২০১৯ সাল থেকে স্কুলের শিশু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিয়ে বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে ঘুড়ি উৎসব পালন করে আসছি। এরই ন্যায় এবার ঈদের পর এই আয়োজন করা হয়েছে। বিগত বছরের তুলনায় এ বছর লোকজনের উপস্থিত বেড়েছে। প্রতিবছরই এমন ঘুড়ি উৎসব উদযাপন করা হবে।

গোপালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন বলেন, ছোট বেলা আমি নিজেও ঘুড়ি উড়িয়েছি, এটিতে আলাদা একটি আনন্দ আছে। আমি মনে করি বাঙালির এই ঘুড়ি উড়ানোর মধ্যে দিয়ে সংস্কৃতির যে একটা অতীত সম্বৃদ্ধির অতীতকে স্মরণ করে থাকে। এটি একটি বিশুদ্ধ প্রতিযোগিতা। এমন আয়োজনে অংশ নিতে পেরে ভালো লাগছে।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নাজমুল হাসান বলেন, ঘুড়ি উৎসব আমাদের প্রাণের একটি উৎসব। এমন পরিবেশে বর্ণিল এই রঙিন ঘুড়ি উৎসব কখনো দেখার সুযোগ হয়নি। দীর্ঘদিন পর এভ ঘুড়ি উৎসবে প্রাণ ফিরেছে সেই শৈশবে। ঈদ আনন্দের দ্বিতীয় দিনে বর্ণিল রঙিন রঙের ছটায় ঘুড়ি হাতে নিয়ে নীল আকাশে উড়িয়েছি। উৎসবে পরিবার নিয়ে অংশ নিতে পেরে আমি আনন্দিত।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ড. ইউনূসের মন্তব্যে ভারতীয় রাজনীতিবিদদের তীব্র প্রতিক্রিয়া
মিয়ানমারের ভূমিকম্পে এক ইমামের ১৭০ স্বজনের মৃত্যু
ঈদের আনন্দে যমুনার দুর্গম চরে গ্রাম-বাংলার ঘুড়ি উৎসব, আনন্দে মেতে উঠে বিনোদনপ্রেমীরা!
ইমামকে ঘোড়ার গাড়িতে রাজকীয় বিদায়, দেওয়া হলো ৯ লাখ টাকার সংবর্ধনা
লন্ডনে একসঙ্গে দেখা গেলো সাবেক চার আওয়ামী মন্ত্রীকে
ঢাকায় ফিরছে ঈদযাত্রীরা, অনেকে ছুটছেন শহরের বাইরে
চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় আবারও সড়ক দুর্ঘটনা, নিহত ৭
বিটিভিতে আজ প্রচারিত হবে ঈদের বিশেষ ‘ইত্যাদি’
ঈদের ছুটিতে ফাঁকা ঢাকা, নেই যানজটের চিরচেনা দৃশ্য
মাদারীপুরে তিন মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ৪, আহত ২
থানায় জিডি করলেন ভোক্তা অধিকারের জব্বার মন্ডল
রাশিয়া আমাদের চিরকালের বন্ধু, কখনো শত্রু নয়: চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান খালেদা জিয়ার
দ্বিতীয় দফায় মিয়ানমারে ত্রাণ সহায়তা পাঠালো বাংলাদেশ
ভারতে প্রশিক্ষণ প্লেন বিধ্বস্ত, পাইলট আহত
এপ্রিলে ঢাকায় আসছে আইএমএফ প্রতিনিধি দল
জাপানে মেগা ভূমিকম্পের শঙ্কা, প্রাণহানি হতে পারে ৩ লাখ
জুলাই কন্যাদের সম্মানজনক পুরস্কার নিয়ে যা জানাল যুক্তরাষ্ট্র
দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের সম্ভাবনা
শান্তিপূর্ণ ঈদ উদযাপনে সেনাবাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা