ফোবানার বিলুপ্ত কমিটির শীর্ষ চারজনকে বহিষ্কার
ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন ইন নর্থ আমেরিকার (ফোবানা) বিলুপ্ত কমিটির চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি ও জয়েন্ট সেক্রেটারিকে সংগঠনটি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শীকাগোতে অনুষ্ঠিতব্য ৩৬তম ফোবানা সম্মেলন বাতিল ঘোষণা করে লস এঞ্জেলেসে সম্মেলনটি আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সম্প্রতি এক্সিকিউটিভ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়।
মঙ্গলবার (২১ জুন) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় সংগঠনটি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন ইন নর্থ আমেরিকা ফোবানার বিলুপ্ত কমিটির চেয়ারম্যান রেহান রেজা ও এক্সেকিউটিভ সেক্রেটারি মাসুদ রব চৌধুরীকে গুরুতর সাংগঠনিক অপকর্মের জন্য আজীবনের জন্য ফোবানা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সঙ্গে ভাইস চেয়ারম্যান এম মাওলা দিলু ও জয়েন্ট সেক্রেটারি নাহিদুল খান সাহেলকে নানা অনৈতিক ও অসাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের জন্য ফোবানা থেকে ৫ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। গত পহেলা জুন ফোবানার সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম এজিএম এর দুই তৃতীয়াংশ সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়।
একই সভায় ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শীকাগোতে অনুষ্ঠিতব্য ৩৬তম ফোবানা সম্মেলন বাতিল ঘোষণা করে লস এঞ্জেলেসে সম্মেলনটি আয়োজন করার সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান রেহান রেজার বিরুদ্ধে আনীত ও প্রমাণিত অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে, ২০১৯ সালে সব চেয়ারম্যানদের মতামত ও অনুরোধ উপেক্ষা করে রেহান রেজা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পরাজিত হওয়ার পর থেকে বিগত বছরগুলোতে ফোবানার ভেতর বিভক্তির সৃষ্টি, স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে জোট বেঁধে গত বছর মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সম্মেলন বানচালের ষড়যন্ত্র, সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে প্রচারণা, ফোবানার কার্যক্রম পরিচলানায় বাধা প্রদান, ফোবানাকে দুই ভাগ করার প্রকাশ্য ঘোষণা, চেয়ারম্যান সিলেক্ট হওয়ার পর থেকে ফোবানার ভেতর নোংরা গ্রুপিং সৃষ্টি করে ফোবানার পুরনো পরীক্ষিত নেতাদের ফোবানা থেকে বাদ দেয়ার ষড়যন্ত্র, অন্যায় ও অবৈধভাবে ফোবানা থেকে সদস্যদের বাদ দেয়া, উত্তর আমেরিকার জনপ্রিয় সংগঠগুলোকে বাদ দেয়ার নীলনকশা, ফোবানাকে করপোরেট সংগঠনে পরিণত করার অপচেষ্টা, চেয়ারম্যানের শপথ ভঙ্গ করে পরবর্তী নির্বাচনে এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা, চেয়ারম্যান হিসাবে সংগঠনকে নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে অসাধু এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারির প্রেসক্রিপশনে সংগঠন পরিচালনা করা, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা গিয়ে ফোবানার নাম ব্যবহার করে বেপোরোয়া চাঁদাবাজি, আদম ব্যবসাসহ বিভিন্ন অবৈধ ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হওয়া ও ফোবানার ভেতরে বাইরে কোন্দলের সৃষ্টি করে ফোবানাতে ভাঙন সৃষ্টিতে মদদ দেওয়া।
এ ছাড়া ২০১৯ সালে নিজের কোনো সংগঠন না থাকায় অন্য একটি সংগঠনকে নিয়ে এসে আরেক স্টেটের লোক দিয়ে জাল ভোটপ্রদান করে ধরা পড়েন রেজা। ২০১১ সালে নিউজার্সি সম্মেলনে কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে ফোবানার কর্মকর্তাদের না জানিয়ে রেহান রেজা অবৈধভাবে ফোবানার প্যাড জাল করে তৎকালীন পূর্তমন্ত্রী আবদুল মান্নানকে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়ে পরবর্তীতে আয়োজক কমিটির কাছে ধরা পড়লে কমিটির সদস্যদের বিরোধিতার মুখে মন্ত্রীকে অন্য ফোবানায় অতিথি হিসেবে প্রেরণ করা ও রাজউকের প্লটের জন্য তদবির করার মতো অভিযোগ তোলা হয় রেজার বিরুদ্ধে।
বিলুপ্ত করা এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি মাসুদ রব চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রমাণিত অভিযোগসমূহের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালতে সাজাভুক্ত আসামি হওয়া সত্ত্বেও তিনি এই তথ্য গোপন করে ফোবানার কোষাধ্যক্ষ ও সেক্রেটারি পদে নির্বাচন করেছেন। কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হওয়ার পরে বিগত তিন বছর ধারাবাহিকভাবে ফোবানার নির্বাহী কমিটির পাশাপাশি ফোবানার 'লাইক মাইন্ডেড গ্রুপ' নামে একটি গ্রুপ তৈরি করে অবৈধ ও অসাংগঠনিকভাবে ফোবানার প্যারালাল কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। এ ছাড়া তিনি ফোবানার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানসহ অধিকাংশ সাবেক চেয়ারম্যান ও সদস্যদের বিভিন্ন সময়ে অপমান-অপদস্ত করেছেন বলে অভিযোগ এসেছে। সেক্রেটারি থাকা অবস্থায় চেয়ারম্যানের রুলিং অমান্য করে নিজের খেয়ালখুশি মতো ফোবানার কার্যক্রম পরিচালনা, চেয়ারম্যানের অনুমতি ছাড়া ফোবানার ওয়েবসাইট ও সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে ফোবানার সব ক্রেডেন্সিয়াল হাইজ্যাক করা, অপছন্দের সংগঠন ও নেতাদের বাদ দেয়া ও ইমেইলে ব্লক করা, ফোবানার নির্বাহী কমিটির মিটিংয়ের তথ্যফাঁস করা যা অসাংগঠনিক ও সংবিধান পরিপন্থী, ভুয়া সংগঠন বানিয়ে ফোবানায় অন্তর্ভুক্তি করে দল ভারী করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার নীলনকশা করা , নিজের কোনো সংগঠন না থাকায় নিজের স্ত্রী ও শালার নামে ভুয়া সংগঠন বানিয়ে ফোবানায় অন্তর্ভুক্ত করা, সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাহী কমিটির সভায় সম্পূর্ণ অবৈধভাবে চেয়ারম্যানের রুলিং না থাকা সত্ত্বেও তিনজন সিনিয়র চেয়ারম্যানকে 'বি কোয়াইট' বলে ধমক দিয়ে মাইক বন্ধ করে মিটিং থেকে বের করে দেয়া ও পরবর্তী পর্যায়ে চেয়ারম্যানের অনুরোধ সত্ত্বেও তিনজন সিনিয়র চেয়ারম্যানের জুম মিটিংয়ে মাইক সংযোগ না দেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
বিলুপ্ত কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এম মওলা দিলুর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রীয় আদালতে সাজাভুক্ত কয়েক ব্যক্তিসহ নানা অপশক্তির ইশারায় ফোবানার সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে প্রচারণা, নির্বাহী কমিটির বিভিন্ন সভায় সিনিয়র নেতাদের নাম ধরে কটূক্তি করা। এ ছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সাব-কমিটির কর্মকর্তাদের অসাংগঠনিক পন্থায় এককভাবে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি জানিয়ে সাধারণ সদস্যদের কাছে ইমেইল প্রদানসহ নানা অপপ্রচারের অভিযোগে ভাইস চেয়ারম্যান দিলু মাওলাকে পাঁচ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
এ ছাড়াও যুগ্ম সম্পাদক নাহিদুল খান সাহেলের বিরুদ্ধে প্রমাণিত অভিযোগসমূহের মধ্যে রয়েছে, ২০২১ সালের ফোবানা সম্মেলনে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ পালনে বাধা প্রদান, কোনো সংগঠন না থাকা সত্ত্বেও অর্থের বিনিময়ে ২০১৮ সালে ফোবানা সম্মেলনের সদস্যসচিব হয়ে আজ পর্যন্ত ফোবানায় সংযুক্ত থাকা ও মেম্বারশিপ কমিটির চেয়ারম্যান পদ নিয়ে বৈধ সংগঠনগুলোকে ফোবানা থেকে বাদ দেওয়ার হুমকি, ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিতব্য ফোবানা সম্মেলন বাতিলের হুমকি, সম্প্রতিক সময়ে নির্বাহী কমিটির সভা পরিচালনা করতে গিয়ে সাবেক দুজন চেয়ারম্যানের মাইক বন্ধ করে ভার্চুয়াল সভা থেকে বের করে দেয়া, ফোবানা ইমেইল গ্রুপ ও মেসেঞ্জার গ্ৰুপে সিনিয়র নেতাদের কটাক্ষ করে বিভিন্ন উসকানিমূলক মেসেজ দেয়া ও ফোবানাকে করপোরেট সংগঠনে পরিণত করাসহ অসংখ্য অভিযোগে যুগ্ম সম্পাদক নাহিদুল খান সাহেলকে পাঁচ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
ফোবনা জানিয়েছে, ফোবানা নিয়ে বিভ্রান্তির কোন অবকাশ নেই। আইনগত ও সাংগঠনিকভাবে জনাব আতিকুর রহমান ও ড. রফিক খানের নেতৃত্বাধীন ফোবানাই হচ্ছে ফোবানার মূল সংগঠন।
আরএ/