'বিনিয়োগের জন্য দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ সর্বোত্তম'
বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোত্তম স্থান বলে মন্তব্য করেছেন স্পেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সরওয়ার মাহমুদ। এ দেশে অফুরন্ত সম্ভাবনা থাকায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে আহ্বান জানান তিনি।
মঙ্গলবার (১৪ জুন) মাদ্রিদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে মাদ্রিদ চেম্বার অব কমার্স, ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড সার্ভিসের যৌথ ব্যবস্থাপনায় নগরীর চেম্বার ভবনে প্রথম অর্থনৈতিক কূটনৈতিক সপ্তাহের কর্মসূচির অংশ হিসেবে সেমিনারে রাষ্ট্রদূত এ আহ্বান জানান।
দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর রেদোয়ান আহমেদের সঞ্চালনায় সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন মাদ্রিদ চেম্বার অব কমার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট আগুস্তো কাস্তানিয়াদা।
রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারওয়ার মাহমুদ বলেন, স্পেন বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য। স্বল্পোন্নত শ্রেণি থেকে উত্তরণের পর আজকের বাংলাদেশ ২০৩১ সালের মধ্যে একটি উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালে একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার অভীষ্ট লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে।
"যা উন্নয়ন-অর্থনীতিতে বাংলাদেশ ‘বিস্ময়ের এক বিস্ময়’। চলতি অর্থবছরে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার প্রবৃদ্ধি অর্জনে দূতাবাস দৃশ্যমান সাফল্য অর্জন করেছে। মাদ্রিদ ও বার্সেলোনায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় রপ্তানিপণ্যের বাজার সম্প্রসারণ ও বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনাকে তুলে ধরতে দূতাবাস স্পেনীয় উদ্যোক্তাদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ জাগিয়েছে।"
রাষ্ট্রদূত বলেন, স্পেনে বাংলাদেশের রপ্তানিপণ্যের ৯৫ শতাংশই তৈরি পোশাক। স্পেনে তৈরি পোশাক ছাড়াও বাংলাদেশের রপ্তানিপণ্যের বৈচিত্র্য বৃদ্ধির অবারিত সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থনৈতিক কূটনীতিকে আরও বেগবান করতে দূতাবাসের নানামুখী সৃজনশীল প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।
সেমিনারে কি-নোট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিআইডিএ) আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্প্রসারণ অনুবিভাগের মহাপরিচালক শাহ মোহাম্মদ মাহবুব।
তিনি আর্থ-সামাজিক প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশের অর্জিত বিস্ময়কর অগ্রগতি সব দেশের জন্যই এক প্রেরণাদায়ী উদাহরণ বলে উল্লেখ করেন। খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশকে বলা হয় ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ড্রেসমেকার’।
পুরো বিশ্বে আইটি ফ্রিল্যান্সার সরবরাহের দিক থেকে বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তম, সবজি উৎপাদনে দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং মৎস্যসম্পদ উৎপাদনে তৃতীয় বৃহত্তম। দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মানদণ্ডে বাংলাদেশ শীর্ষস্থানীয় (৭.২৫ শতাংশ)।
‘বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমানে প্রায় ৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। দেশটির জনগোষ্ঠীর শতকরা ৬০ ভাগই তরুণ। অবকাঠামো উন্নয়ন, ভোক্তা ব্যয় ও সার্ভিস সেক্টরে প্রবৃদ্ধি, বর্ধিষ্ণু নগরায়ন ও শিল্পায়ন এবং ডিজিটাল কানেক্টিভিটির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভাবিত অগ্রগতি অর্জন করেছে।’
বাংলাদেশের ১০১টি ইকোনমি জোন ও ৩৯টি হাই-টেক পার্কে বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ ও সরকার ঘোষিত আকর্ষণীয় প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধা গ্রহণের জন্য স্পেনীয় উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান স্পেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সরওয়ার মাহমুদ।
ঢাকা থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্যে বিআইডিএর নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে স্পেনীয় উদ্যোক্তাদের সাদর আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবে বিআইডিএ।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন স্পেন-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট নুরিয়া লোপেজ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ অফুরন্ত বাণিজ্য সম্ভাবনার দেশ। দেশটি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক জনমানসে ও গণমাধ্যমে যে অনভিপ্রেত নেতিবাচক প্রচারণা রয়েছে, তা নিরসনে বাংলাদেশে ব্র্যান্ডিং কার্যক্রম জোরদার করা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার সাথে ঢাকার ফ্লাইট কানেক্টিভিটির ওপর আলোচনা করেন কাতার এয়ারওয়েজের করপোরেট সেলস প্রতিনিধি পাবলো লামাস।
সেমিনারে বাংলাদেশের ওপর বিডা-নির্মিত একটি তথ্যবহুল প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। এছাড়া, সেমিনারে দূতাবাসের কমার্শিয়াল উইং এর ব্যবস্থাপনায় প্রকাশিত বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট হ্যান্ডবুক এর স্প্যানিশ ভার্শন Manual de Inversión en Bangladesh: Guía para Inversores, উন্মোচন করা হয়।
স্পেনের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিবৃন্দের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সেমিনারটি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। সেমিনারটি অনলাইনে জুম প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারিত হয় এবং সেখানেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যবসায়ী অংশগ্রহণ করেন।
কবির আল মাহমুদ, স্পেন থেকে