ইমোতে প্রতারণা: যেভাবে হাতিয়ে নেয়া হয় প্রবাসীদের অর্থ
প্রথমে নিজেদের মধ্যে জানাশোনা, তারপর ধীরে ধীরে প্রণয়ের দিয়ে এগোতে থাকে শামছুল-ইরিনার সম্পর্ক। এভাবে বেশ কয়েক দিন আলাপ হওয়ার পর নিজেদের মধ্যে ঘনিষ্টতা গড়ে ওঠে। একে ওপরের বাড়ি; এমনকি পরিবার সম্পর্কেও নানা গল্প নিজেদের মধ্যে বিনিময় করেন।
দিন গড়িয়ে মাস, শামছুল-ইরিনার সম্পর্ক পৌঁছে গেছে বিয়ের দারপ্রান্তে। কিছুদিনের মধ্যে দেশে ফিরবেন শামছুল। এরইমধ্যে ইরিনা একদিন শামছুলের ইমো অ্যাকাউন্টের ওয়ান টাইম পাচওয়ার্ড (ওটিপি) চেয়ে বসেন। প্রথমে শামছুল অস্বীকৃতি জানালেও পরবর্তীতে ইরিনার আবদার রক্ষায় দিয়ে দেন ওটিপি। এরপরই শামছুলের জীবনে নেমে আসে কালো মেঘ। শেষ হতে শুরু করে গচ্ছিত অর্থ।
ওটিপি পাওয়ার পর শামছুলের ইমো অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ইরিনা। এরপর ওই অ্যাকাউন্ট থেকে শামছুল সেজে ৪০ জনকে ম্যাসেজ পাঠান। বাবা অসুস্থ্য বলে দেশে থাকা বেশ কিছু বন্ধু বান্ধবের কাছে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ধার চান। শামছুলের বিপদে এগিয়ে আসেন ৩২ জন। ওই ম্যাসেজে সাড়া দিয়ে বিকাশ নম্বার চেয়ে টাকা পাঠাতে থাকেন তারা। সবশেষে শামছুল জানতে পারেন ইরিনা আসলে নারী নয়, পুরুষ। তিনি প্রতারিত হয়েছেন।
এমন প্রতারণার কবলে শুধু শামছুলই নন, পড়েছেন তার পরিচিত অনেকেই। প্রবাসীদের অভিযোগের ভিত্তিতে এমন একটি চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাদের মতে, প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় সহজ হয়েছে যোগাযোগ। কথা বলার মাধ্যম হিসেবে যুক্ত হয়েছে ইমো, হোয়াটসঅ্যাপসহ বেশ কিছু অ্যাপ। করোনাকালে এসব অ্যাপের সুবিধা ভোগ করেছে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ। আবার একই সময়ে এসব অ্যাপ ব্যবহার করে সংঘটিত হয়েছে নানা ধরণের প্রতারণা। এসব প্রতারণার মূল টার্গেটে পরিণত হয়েছেন প্রবাসীরা।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, শুধু নারী সেজেই নয়, অনেক ক্ষেত্রে প্রবাসীদের ইমো অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর সেখান থেকে স্পর্শকাতর বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও নিজেদের কবজায় নিয়ে নেন। পরে এসব ছবি ও ভিডিও দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে আদায় করা হয় মোটা অংকের অর্থ।
গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান জানান, মধ্যপ্রাচ্যে থাকা প্রবাসীদের কাছ থেকে ইমো ব্যবহার করে প্রতারণা করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্রটি। অর্থ আদায়ের ক্ষেত্রে বিকাশ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হতো। সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- হুসাইন আলী, সুমন আলী, তরিকুল ইসলাম, শান্ত আলী, সাদ্দাম হোসেন। পরবর্তীতেও এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
এনএইচ/