ছাত্র সংগঠনকে সন্ত্রাসী বাহিনীতে পরিণত করেছে সরকার: নুর
গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেছেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্ট সরকার নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখতে সরকারি দলের সহযোগী ছাত্র সংগঠনকে একটি সন্ত্রাসী বাহিনীতে পরিণত করেছে। ফলে ১৩ বছর ধরে ভিন্ন রাজনৈতিক মতের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে অবস্থান তো দূরের কথা, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাঠ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ এমনকি পরীক্ষা পর্যন্ত দেওয়ার সুযোগ পায় না।
মঙ্গলবার (৩১ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডাকসুর সাবেক নেতাদের উদ্যোগে 'শিক্ষা বাঁচাও, শিক্ষাঙ্গন বাঁচাও' শীর্ষক ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে নুর।
তিনি বলেন, সরকারি দলের সন্ত্রাসী ছাত্র সংগঠন চর দখলের মত করে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় দখল করে রেখেছে। ভিন্নমত পোষণ এমনকি কেবলমাত্র সরকারি দল বা তাদের সহযোগী সংগঠনের কর্মসূচিতে অংশ না নেওয়ায় নির্মম শারীরিক নির্যাতন, হল থেকে বের করে দেওয়া এমনকি পিটিয়ে মেরে ফেলার ঘটনা ঘটেছে বারংবার। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের দলদাস নির্লজ্জ প্রশাসন বরাবরই নির্লিপ্ত থেকেছে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে নুর বলেন, দেশের ধ্বংসপ্রায় শিক্ষা ব্যবস্থা এবং শিক্ষাঙ্গনের নৈরাজ্যমূলক অবস্থার প্রেক্ষিতে আমরা ডাকসুর সাবেক নেতারা আজ এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছি। বিগত ১৩ বছর ধরে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এবং শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করার চেষ্টা করে যাচ্ছে বর্তমান ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকার। নিজেদের ফ্যাসিবাদী শাসন টিকিয়ে রাখতে তারা দেশকে মেধাহীন করার সকল ব্যবস্থা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা থেকে শুরু করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস এখন একটি স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এসব ঘটনায় ক্ষমতাসীন দল এবং এর সহযোগী ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের নাম প্রমাণসহ ওঠে আসার পরও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। উপরন্তু প্রমাণিত সত্যকে অস্বীকার করা হয়েছে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে।
নুর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সরকারের আজ্ঞাবহ দাসে পরিণত হয়েছে। জাতির মনন গঠনের কারিগর শিক্ষকদের দলদাসে পরিণত করা হয়েছে। যে সকল সম্মানিত শিক্ষকরা নিরপেক্ষভাবে সত্যিকারের শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি এবং শিক্ষাদানের চেষ্টা করছেন তাদের বিভিন্নভাবে লাঞ্চিত করা হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে।
তিনি বলেন, গত ২৪ এবং ২৬ মে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে সরকারি দলের সন্ত্রাসী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। তারা মধ্যযুগীয় কায়দায় নিষ্ঠুরভাবে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের রাস্তায় ফেলে পিটিয়েছে। এমনকি তারা কাপুরুষোচিতভাবে নারী শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বর হামলা চালিয়েছে। নারী শিক্ষার্থীদের ওপর এমন নির্মম হামলার ঘটনা পাকিস্তান আমলেও কখনো ঘটেনি। হামলার শিকার এসব বিরোধী ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় আইসিইউতে রয়েছেন। নারী শিক্ষার্থীদের হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এই হামলায় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্রের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছে যা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ছবি এবং ভিডিওসহ উঠে এসেছে। এই হামলায় জড়িতদের নাম-পরিচয়, হামলা এবং আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ছবি, ভিডিও সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হলেও দলদাস বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এমনকি ঘটনার বিষয়ে জানেন না বলেও মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অযোগ্য উপাচার্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এই ঘটনায় হামলার শিকার ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলকে দায়ী করে মামলাও করেছেন।
দেশের সকল শিক্ষাঙ্গন আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এমন অভিযোগ করে সাবেক ভিপি নুর বলেন, শিক্ষাব্যবস্থা এবং শিক্ষাঙ্গনকে বাঁচানো শুধুমাত্র ছাত্র সংগঠন বা রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব নয়। এই দায়িত্ব সবার। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এবং শিক্ষাঙ্গনকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে আমরা ডাকসুর সাবেক নেতারা দেশের সকল ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক, পেশাজীবী, ডাকসুসহ দেশের সকল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক-বর্তমান ছাত্র সংসদ নেতারা, সাবেক-বর্তমান ছাত্র নেতাসহ দেশের সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, দেশ আজ এক চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। ফ্যাসিবাদী সরকার দেশের সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে, জনগণের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছে, মানুষের বাকস্বাধীনতা হরণ করেছে, শিক্ষাব্যবস্থা এবং শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ ধ্বংস করেছে। তারা গুম, খুন, হামলা, মামলা বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন, নিপীড়নের মাধ্যমে বিরোধী মতকে দমন করে একটি একনায়কতান্ত্রিক স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে। কিন্তু দেশের জনগণ বিশেষ করে ছাত্র সমাজ বরাবরই রুখে দাঁড়িয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ডাকসুর সাবেক ভিপি আ স ম আব্দুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, আমান উল্লাহ আমান, জি এস খায়রুল কবির খোকন, এ জি এস নাজিমউদ্দিন আলম উপস্থিত ছিলেন।
এমএইচ/এসজি/