ভারত দেশকে অস্থিতিশীল করতে চক্রান্ত করছে: ফয়জুল করীম
ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম বলেছেন, 'ভারত দেশকে অস্থিতিশীল করতে চক্রান্ত করতেছে, আর যারা তাদের দালাল হয়ে এদেশে কাজ করছেন আমাদের তাদের চিহ্নিত করতে হবে। কারণ ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে আলাদা একমাত্র রেখা হচ্ছে আলেম-ওলামা ও ইসলাম।’
শনিবার (২৮ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ আয়োজিত নাগরিক মতবিনিময় সভা প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
প্রয়োজনে ফতোয়া ভোট উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'যারা ভারতের দালাল হয়ে ইসলাম, এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও আলেম-ওলামাদের বিপক্ষে গিয়ে পক্ষপাতিত্ব করছেন তাদের জানাজার নামাজ পড়ানো যাবে না এবং কোনো মুসলমানের কবরস্থানে তাদের দাফন করা যাবে না এই মর্মে ফতোয়া ভোট হওয়া উচিত।'
ইসলাম বিরোধী সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ফয়জুল করিম বলেন, 'আমরা যদি মরার জন্য ঐক্যবদ্ধ হই তাহলে কেউ মরবো না, কেউ আমাদের কোনো কিছু করতে পারবে না কিন্তু বেঁচে থাকার জন্য যদি বিচ্ছিন্নভাবে নিজে নিজে বেঁচে থাকতে চাই তাহলে কেউ বেঁচে থাকতে পারবো না। তাই আসুন দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব-ভূখন্ড, ঈমান ও ইসলামের স্বাধীনতা রক্ষায় সবাই ঐক্যবদ্ধ হই।'
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আব্দুল লতিফ মাসুম বলেছেন, '২০২৩ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসলামী শক্তিকে স্তব্ধ করে তাদের পক্ষে নিতে আলেম-ওলামাদের নিয়ে নানা কৌশলে এগোচ্ছে সরকার।'
ইসলামি শক্তিকে এক হতে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'আলেম- ওলামাদের একটি অংশকে ক্রয় করেই তো তাদের পক্ষে তথাকথিত জননী আখ্যা পেয়েছেন আজকের প্রধানমন্ত্রী।'
খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমীর মুজিবুর রহমান হামিদী বলেছেন, 'গণ কমিশনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে- এই দেশের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা। যারা এই কাজটা করেছেন তারা সবাই ইসলাম বিদ্বেষী মহল। তবে এ বিষয়ে আমাদের শ্বেতপত্রের প্রয়োজন নেই। আমাদের কাজ হচ্ছে যারা গণ কমিশনের তালিকা তৈরি করেছেন তাদের অপকর্ম প্রকাশ করা। কারণ এদের মোকাবিলা করতে না পারলে ইসলামের ক্ষতি হবে। এদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে, প্রয়োজনে প্রতিরোধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।'
হেফাজত ইসলামের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেছেন, 'ঈমানি রক্ষায় জীবনের পরোয়া করিনা। মুসলমানদের অন্তরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমাদের মধ্যে আদর্শিক ঐক্য হতে হবে। যদি থাকতো তাহলে আজকে যেখানে আলেম-ওলামা ও ইসলামের উপর কটাক্ষ করা হচ্ছে, তখন এতগুলো ইসলামি দল তারা কোথায়?'
তিনি বলেন, 'আলেম ওলামা আজ দুঃসময় পার করছে। বিনা বিচারে তাদের অনেকে জেলখানায় বন্দি। তারা যাতে জেলখানা থেকে মুক্তি না পারে সে জন্য বিভিন্ন রকমের ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। কারণ দেশ, জাতি ও ইসলামের পক্ষে বিদেশি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একমাত্র সোচ্চার ভূমিকা পালন করছেন আলেম ওলামারাই।'
দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মন্তব্য করে এই নেতা বলেন, ভবিষ্যৎ রাজনীতির স্বার্থে যে কোনো শর্তে ক্ষমতায় যেতে চাই মর্মে হয়ত কেউ কেউ ব্ল্যাংক চেক দিয়ে রেখেছেন।
'আমরা ঐক্য ধরে রাখতে পারিনি, ব্যর্থ হয়েছি। কুচক্রী মহলের প্ররোচনায় না পড়ে আমরা যদি সুন্দরভাবে সরকারের সঙ্গে সেদিন রফাদফা করতে পারতাম তাহলে আজকের এই নাস্তিক মহল আলেম-ওলামাদের নিয়ে মিথ্যা তথ্য ও বিভ্রান্তমূলক তালিকা তৈরি করতে পারত না।'
আর ধোঁকা খাইতে রাজী না, পরীক্ষিত নেতৃত্বে এই দেশে যারা ইসলাম ও জাতির দুশমন তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। স্বাধীনতার পর থেকে গড়ে ওঠা অতীত ইসলামি আন্দোলনের সফলতা ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী দিনে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন মিজানুর রহমান চৌধুরী।
জাতীয় গণতান্ত্রিক দলের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, ' দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সম্পর্কে আমি যতটুকু জানি তারা একটি তদন্তকারী প্রতিষ্ঠান, তাদের কাছে অভিযোগ করাই যায়। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তারা এই বিষয়টি আমলে নেয়নি। আমার বক্তব্য হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে অনেক কিছু বলা হয়, কিন্তু দুদিন পর তা পাল্টে যায়। কাজেই এখন বলেছে আমলে নেয়নি দুইদিন পরে আমলে নিতেই হবে।
তিনি বলেন, আলেম-ওলামা ও মাদ্রাসার তালিকায় গণ কমিশন কর্তৃক ঘোষিত শ্বেতপত্রে অনেক তথ্য উপাত্ত ভুল রয়েছে। ভুল তথ্য যদি অফিসিয়ালি পাবলিক ফোরামে জমা দিয়ে থাকেন সেই বিবেচনায় প্রত্যেকটি কোর্টে মামলা করা যেতে পারে। আমি আশা রাখবো ১১৬ জন আলেম ওলামা এবং ১০০০ মাদ্রাসার লিস্ট অফিসিয়ালি ভাবে দুদকে দিয়েছেন, তারমানে অফিসিয়ালি মানহানি করা হয়েছে, তাই অফিশিয়ালি ভাবে প্রত্যেক কোর্টে মামলা করা যেতে পারে। গত ১৩ বছরে আমাদের বর্তমান সরকার পরিচয় করে দিয়েছেন যে, আপনি যদি তাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন তাহলে ১০ জেলায় ভিন্ন ১০ কোটে ১০ মামলা করা যাবে। তখন প্রতিনিয়ত মামলার দেখানোর জন্য দৌঁড়াবেন কাজেই তারা যদি মামলা করতে পারে তাহলে দেশ ও জাতির কাছে যারা সমৃদ্ধ যারা সম্মানিত আলেম ওলামা তাদের কেউ যদি এইভাবে মানহানি করা হয়, তাহলে নিশ্চয় অধিকার আছে তাদের বিরুদ্ধেও মামলা করা।
ববি হাজ্জাজ বলেন, 'গণ কমিশন বলেন সরকারি দল বলেন বা কোনো হাইকমিশনের নাম বলেন তারা যা করছে তাতে ইসলামের কোনো ক্ষতি হবে না। ১৪শ বছরেও কেউ ইসলামের ক্ষতি করতে পারেনি। ইসলামের ক্ষতি নিয়ে বেশি চিন্তা আমাদের না করলেও চলবে এর প্রটেক্টর আল্লাহ আছেন। আমাদের চিন্তা আগে করা উচিত আমাদের দেশ ও জাতিকে নিয়ে তাদের যদি সুন্দরভাবে বাঁচাতে পারি তাহলে ইসলামপ্রিয় ১৮ কোটি জনগণ তাদের প্রটেকশন এমনিতেই পাবে।'
আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন- অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, প্রফেসর মাওলানা মিজানুর রহমান, প্রফেসর আব্দুল লতিফ মাছুম, ববি হাজ্জাজ, গৌতম দাস, দিদারুল আলম, এস এম সানোয়ার হোসেন চেয়ারম্যান, মাওলানা নাজমুল হক, মাওলানা রুহুল আমীন (সাইমুম সাদী) মাওলানা ইউনুস ঢালী, সভাপতি, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ।
এমএইচ/আরএ/