নির্বাচন কমিশনের ডাকে না’তে অনড় বিএনপি
নির্বাচন কমিশন নয়, বিএনপির ভাবনা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা। তাই নির্বাচন কমিশন ও তাদের কোনো বিষয় নিয়ে বিএনপির কোনো আগ্রহ নেই। বিএনপির মূল কথা হচ্ছে- আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন কোনো নির্বাচন কমিশনের পক্ষে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়, এটা প্রমাণিত। বিএনপির নেতারা মনে করছে- নির্বাচন করে সরকার, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কোনো কার্যকর ক্ষমতা বা ভূমিকা নেই। সেটা বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির ডাকা সংলাপের আহ্বানে সাড়া দেয়নি দলটি। বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে এমনটাই উঠে এসেছে।
সকল রাজনৈতিক দল বিশেষত প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলকে অচিরেই সংলাপে আহ্বান জানানো হবে, বিএনপি তাতে অংশ নেবে কী জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন তাদের আজ্ঞাবহ হয়। সরকারে আওয়ামী লীগ থাকলে সেখানে নির্বাচন কোনোভাবেই নিরপেক্ষ হবে না এটা সর্বজনীন সত্য। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সর্বক্ষেত্রে দলীয়করণ হয়েছে। যাঁরা নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ পেয়েছেন, সরকার তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিয়ে ছিল। অনুগত বলেই তাঁদের নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এদিকে শেখ হাসিনা সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘এর বাইরে আমরা এক চুলও নড়ব না। এখানে এটা মেনেই আসতে হবে। কমিশন নিরপেক্ষ থাকলে নির্বাচনও নিরপেক্ষ হবে।’ রবিবার (২২ মে) বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মৎস্যজীবী লীগের ১৯তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এ কথা বলেন।
বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার সর্বোচ্চ আদালত জাদুঘরে পাঠিয়েছেন। বিএনপি সেই সরকারের দাবি করে। পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে সরকারের যে দায়িত্ব, ভারতে ও অন্যান্য দেশে যেভাবে নির্বাচন হয় সেভাবেই নির্বাচন হবে।’
নির্বাচন কিন্তু শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে হবে না। নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। শেখ হাসিনা সরকার কমিশনকে সহযোগিতা করবে একটা অবাধ নিরপেক্ষ ফ্রি ফেয়ার ক্রেডিবল ইলেকশন অনুষ্ঠানে। এটাই নিয়ম। এটাই নিয়ম। এর বাইরে আমরা এক চুলও নড়ব না। এখানে এটা মেনেই আসতে হবে, যোগ করেন তিনি।
কমিশন নিরপেক্ষ থাকলে নির্বাচনও নিরপেক্ষ হবে। আইন শৃঙ্খলা থেকে শুরু করে সেনাবাহিনী নির্বাচনের সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট সেই অফিসাররা, পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনী যারাই দায়িত্ব পালন করে তারা কিন্তু থাকবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটি অপর আরেক সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিএনপির ঘোষণা করেছে বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। এ কারণে এই নির্বাচন কমিশন গঠনের সময় যে সিলেকশন কমিটির নামে নাটক হয়েছে সেখানে বিএনপির অংশ নেয়নি। আমরা জানি না এই নির্বাচন কমিশন কারা? আমরা তাদের কোনো ভাবেই দাম দেই না। আমরা তাদের কোনো ভাবেই স্বীকৃতি দেই না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যে নির্বাচন চাই-সেটি হবে এ দেশে শেখ হাসিনার পদত্যাগ বা পতন, সংসদ বাতিল এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি নির্বাচন। ওই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার যখন একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করবে সেই নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আমরা বিএনপি কথা বলব।’
এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট- সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। ওই সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। তার অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলে তাতে আমরাসহ সব দল অংশগ্রহণ করব।’
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, সব মেশিনারিজ সরকারের হাতে। তাই আসল চোরকে সরাতে না পারলে সহযোগী চোরদের নিয়ে আলোচনা করে তো কোনো লাভ নেই। একটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ব্যতীত এ জাতীয় নির্বাচন কমিশন এবং তাদের সঙ্গে আলোচনা করে কোনো লাভ নেই। কারণ, এখন যা হচ্ছে, তা লোক দেখানো।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, কেউ যদি মনে করে আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার অধীনে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাহলে এটা ভুল চিন্তা করবে। আওয়ামী লীগের কর্মী সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই কমিশনের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে সঙ সাজার জন্য, এটা যদি কেউ ভাবে তাহলে ভুল ভাববে। আমরা শুধু যে নির্বাচনে যাব না এই পর্যায়ে থাকবো এটা ভাবা ঠিক হবে না। আমরা মুক্তিযুদ্ধের দল, স্বাধীনতার ঘোষকের দল, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের দল। এই দল অন্যায়ের সাথে কখনো আপস করে না। অনেকেই ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে গিয়ে ছিল। তাতে বিএনপি'র কিছু যায় আসে নাই। বিএনপি এরশাদের সাথে আপোষ করে নাই।
এমএইচ/এএজেড