অলি আহমদ নেতৃত্বাধীন এলডিপিতে দল ছাড়ার হিড়িক
কর্নেল (অব.) অলি আহমদ নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) থেকে গণহারে পদত্যাগ করেছেন দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
বৃহস্পতিবার (১২ মে) ঢাকাপ্রকাশকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন এলডিপির সহ-সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করা ড. আবু জাফর সিদ্দিকী।
নতুন দল বা অন্য কারো সঙ্গে যুক্ত হবেন কিনা প্রশ্নের জবাবে ড. সিদ্দিকী জানান, পরবর্তী করণীয় বিষয়ে পদত্যাগকারী সব নেতাকর্মীরা বৃহস্পতিবার বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। নতুন দল গঠন করা না হলে, যে রাজনৈতিক দলে গণতন্ত্র চর্চা হয়, সেরকম দলে যুক্ত হবো।
পদত্যাগকারী অন্যান্য নেতারা হলেন— এলডিপির উপদেষ্টা পুষ্টিবিদ ফরিদ আমিন, যুগ্ম মহাসচিব তমিজ উদ্দিন টিটু, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মো. ইব্রাহিম রওনক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটির সভাপতি এএসএম মহিউদ্দিন, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ড. আফজাল হোসেন মোর্শেদ, যুব বিষয়ক সম্পাদক শফিউল বারী রাজু, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক লস্কর হারুনুর রশিদ, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আফজাল হোসেন মন্ডল, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইমরান, গণতান্ত্রিক যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম বাবু, সদস্য সচিব মোহাম্মদ ফয়সাল ও যুগ্ম আহ্বায়ক ইমাম হোসেন পাঠান বিপ্লব, কাজী কামরুল হাসান, জাহাঙ্গীর আল সানি, হারুন অর রশিদ, ইউনুস বেপারী, রেজওয়ানুল ইফতেখারসহ ১০০ জন, গণতান্ত্রিক ওলামা দলের আহ্বায়ক হাফেজ মাওলানা বদরুদ্দোজা, সদস্য সচিব মাওলানা আবদুল হাই নোমান, যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা আসাদুল্লাহ, মাওলানা শিহাব উদ্দিন, মাওলানা আনোয়ার হোসাইনসহ ২৩ জন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল হকসহ ৭৪ জনসহ এলডিপির সাধারণ ২১ সদস্য।
পদত্যাগকারি নেতাদের অভিযোগ, ২০০৬ সালে কর্নেল অব. অলি আহমদের নেতৃত্বে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) আত্মপ্রকাশ করেছিল। এই দীর্ঘসময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যেমন উত্থান-পতন এসেছে, তেমনি পাল্লা দিয়ে ক্রমাগত ‘অবস্থান পরিবর্তন’ করে গেছেন দলের প্রেসিডেন্ট অলি আহমদ। রাজনৈতিকভাবে নিয়মিত বিরতিতে রাজনৈতিক অবস্থান পাল্টানোর কারণে ইতোমধ্যে দলের প্রতিষ্ঠালগ্নের জ্যেষ্ঠ নেতারা তার নেতৃত্ব ত্যাগ করেছেন। দুর্ভাগ্যক্রমে এই ধারা থেকে এলডিপির সভাপতি অলি আহমেদ সরে আসেননি, বরং দিনে-দিনে একটি সুপরিচিত রাজনৈতিক দলকে তিনি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এনে দাঁড় করিয়েছেন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক হয়ে গত ১০ বছর ধরে জোটবিরোধী কার্যক্রম করেছেন। অবস্থান নিয়েছেন জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও একটি বিশেষ দলের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা দেখা গেছে চরমমাত্রায়। যা এলডিপির রাজনৈতিক আদর্শ ও লক্ষ্যকে দলিত-মত্থিত করে ফেলেছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে এলডিপি একটি হাস্যকর প্রতিক্রিয়ায় পরিণত হয়েছে।
নেতারা আরও জানান, বাংলাদেশের সমস্ত রাজনৈতিক দল ও গণতন্ত্রপন্থী মানুষরা যখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একদলীয় শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে কার্যকর গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার সংগ্রামে সক্রিয়, তখনও অলি আহমদ তার নেতৃত্বের পুরো ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে এলডিপিকে একটি ‘রহস্যজনক রাজনৈতিক’ দল হিসেবে ব্যবহার করছেন। দল পরিচালনার ক্ষেত্রে অলি আহমদ ‘কর্তৃত্ববাদী ও আত্মঅহংকারে’ নিমগ্ন একজন মানুষ। অথচ, জাতীয়তাবাদী শক্তির আধার হিসেবে শত-শত তরুণ-যুবক ও রাজনীতিক তার নেতৃত্বের ছায়াতলে এসেছিলেন। কিন্তু দিন যত বয়েছে, তার পরিবর্তিত রূপ দেখে নেতাকর্মীরা হতাশ হয়েছেন, ভেঙে পড়েছেন। তিনি তার মনমত দলীয় পদ ব্যবহার করেছেন, বাটোয়ারা করেছেন। নিজের মনমত পদে বসিয়েছেন, পদ থেকে সরিয়েছেন।
একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের ন্যূনতম যে অঙ্গীকার থাকে, তা তিনি স্পষ্টরূপে দীর্ঘদিন ধরে ব্যত্যয় করে এসেছেন। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে নতুন একটি জোট গঠনের প্রচেষ্টা করছেন, যা স্পষ্টত জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রতি প্রশ্নবিদ্ধ অঙ্গুলিহেলনের নামান্তর। আমাদের আরও দুঃখিত করে, যখন দেখি তারই মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ পুলিশের মিথ্যা মামলায় কারাগারে, তখন তিনি প্রমোদভ্রমণে। একটি দলের সভাপতি হিসেবে এর চেয়ে ‘আত্ম অহমিকা’ আর কী হতে পারে। ফলশ্রুতিতে অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন এলডিপির নির্বাহী কমিটি ও দলটির অঙ্গ সংগঠনের কমিটি থেকে আমরা গণপদত্যাগ করছি। ভবিষ্যতে এই দলটির সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক থাকবে না। দলটির যেকোনো সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততা থাকবে না।
এমএইচ/আরএ/