'প্রয়াত নেতাদের আদর্শ অনুসরণ করেই সংগঠন এগিয়ে যাবে, সেটাই চাই'
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ যেহেতু জনগণের সংগঠন, আর সাজেদা চৌধুরীর মতো অসংখ্য নিবেদিত নেতাকর্মীরা এই সংগঠনের হাল ধরে ছিল বলেই চরম দুঃসময়েও এই সংগঠন কখনও দিক হারায়নি। নীতি আদর্শ নিয়ে এগিয়ে নিয়ে গেছে। আশাকরি আমাদের যারা নেতৃবৃন্দ আছেন তারা কিন্তু প্রয়াত নেতাদের আদর্শ মাথায় রেখেই সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন সেটাই আমি চাই।
রবিবার (৩০ অক্টোবর) রাতে সংসদ অধিবেশনে প্রয়াত সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী ও শেখ এ্যানি রহমানের উপর আনিত শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ নেতা একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগে যে অবদান রেখে গেছেন তা ভুলার নয়। চরম দুর্দিনে আওয়ামী লীগের হাল ধরা এবং এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করেছেন। বার বারই আওয়ামী লীগের উপর আঘাত এসেছে। পাকিস্তানের সময় মুক্তিযুদ্ধের সময় আওয়ামী লীগের উপরই আঘাত এসেছে। সাজেদা চৌধুরী নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করেছেন। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে ক্যাম্পের নেতৃত্বে যেমন ছিলেন তেমন মুক্তিযোদ্ধাদেরও সংগঠিত করেছেন, খোঁজখবর নিয়েছেন। স্বাধীনতার সংগ্রামে যেমন তার অবদান রয়েছে। আমাদের জাতীয় জীবনেও তার অবদান রয়েছে।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর তো আমাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর উপর অকথ্য নির্যাতন নেমে আসে। সাজেদ চৌধুরীও এর শিকার। জিয়াউর রহমান তাকে গ্রেপ্তার করে। তার অপারেশন হয়েছিল গায়ে জ্বর ছিল এই অবস্থায় জিয়াউর রহমান তাকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠায়। মতিয়া চৌধুরীকেও গ্রেপ্তার করে। তিনিও অসুস্থ ছিলেন। তাদেরকে ডিভিশনও দেয়নি। সাধারণ কয়েদির মতো জেলে ফেলে রাখে। এদেশের প্রত্যেকটি আন্দোলন সংগ্রামে সাজেদা চৌধুরী সব সময় সামনে থাকতেন। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি দিল্লী গিয়েছিলেন আমার সঙ্গে দেখা করতে। আমরা তাকে ফুফু বলে ডাকতাম। জিয়াউর রহমান আইন করেছিল পার্টির রেজিস্ট্রেশনে কারও নাম দেওয়া যাবে না। কিন্তু এব্যাপারে সাজেদা চৌধুরী অটল ছিলেন। তিনি বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু ছাড়া পার্টি হয় না। আমাদের দলের মধ্যেও কারও কারও দ্বিধাদ্বন্দ ছিল, কিন্তু এব্যাপরে অটল ছিলেন সাজেদা চৌধুরী। বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে চেয়েছিল জিয়াউর রহমান, তাই এই আইন করেছিল।
সংসদ নেতা বলেন, আমি দেশে আসার পর তাকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছিলাম। সব কাজ তিনি সুচারুরূপে করতেন। আমরা ক্ষমতায় আসার পর তাকে বন ও পরিবেশ মন্ত্রী বানিয়েছিলাম। সুন্দরবন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হয়েছে এর অবদান সাজেদা চৌধুরীর। তিনি সুন্দরবনকে সাজিয়েছিলেন। তিনিও পুরস্কার পেয়েছিলেন। প্রায় দুই দশক ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্ত পরিবেশ ছিল। ৭৫ এর পর যে সংঘাত শুরু হয় সেই সংঘাতের হাত থেকে রক্ষার জন্য আমরা ক্ষমতায় এসে শান্তি চুক্তি করি। ১ হাজার ৮০০ অস্ত্রধারী আমার কাছে অস্ত্র সমার্পণ করে। কোথাও এটা দেখা যায় না। আমার প্রত্যেকটি কাজে তিনি সহযোগিতা করতেন। পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে তাকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। সংবিধান সংশোধনেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
সংসদ নেতা বলেন, ছাত্র রাজনীতি যখন করতাম তখন থেকেই তাকে চিনতাম। তিনি বেশি বয়সে লেখাপড়া করেন। তিনি একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী মুক্তিযোদ্ধা। তাকে হারিয়ে আওয়ামী লীগ একজন নিবেদিত প্রাণ নেতাকে হারালো। আমি আমার চলার পথে তাকে সব সময়ই পাই। ফুফু বলতাম। তিনি চলে যাওয়াতে শুধু আওয়ামী লীগের নয়, দেশেরও ক্ষতি হয়েছে। বয়স হয়েছে আমাদেরও চলে যেতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, একে একে সবাই ছেড়ে চলে যাচ্ছে। বয়স হয়ে গেছে যেতেই হবে। হয়তো আমিও একদিন চলে যাব। তবে যে যেটা করেছে আমাদেরতো স্মরণ করতেই হবে। জিয়াউর রহমানের অত্যাচার নির্যাতনের শিকার আমাদের আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মী। শুধু আওয়ামী লীগ কেন আমাদের বিরোধী দলের যারা আছে বিরোধী দলের নেতা যিনি, রওশন এরশাদ, জেনারেল এরশাদ, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু থেকে যারাই আছে তারা কিন্তু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। সাজেদা চৌধুরী বা মতিয়া চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে জিয়াউর রহমান ডিভিশন না দিয়ে ফেলে রেখেছে। ঠিক খালেদা জিয়া একই কাজ করেছিল। রওশন এরশাদ তিনি তো মাস্টার্স ডিগ্রি পাস। প্যানাল কোডে আছে মাস্টার ডিগ্রি পাস হলে ডিভিশন দিতে হয়। রওশনকে সেটা দেওয়া হয়নি। সাধারণ কয়েদিদের সাথে তাকে ফেলে রেখেছিল। একদম সাধারণ কয়েদিদের সাথে। আমরা তো তাও খালেদা জিয়াকে অসুস্থ বলে বাড়ি থাকার সুযোগ দিয়েছি। নির্বাহী আদেশে তার শাস্তি প্রাপ্তি স্থগিত রেখে বাসায় থাকার সুযোগ করে দিয়েছি। একটা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটা করা। একজন বয়ঃবৃদ্ধ মানুষ। খালেদা জিয়া কিন্তু সেটা করে নাই। বিমান বাহিনীর প্রধান জামাল উদ্দিন তাকে গ্রেফতার করে তার নামে একটা ঘড়ি চুরির মামলা দিয়ে কোন ডিভিশন না দিয়েমাত্র ২ টি কম্বল দিয়ে তাকে জেলখানায় পাঠিয়েছিল। এইভাবে মানুষকে তারা অত্যাচার করেছে নির্যাতন করেছে। জাতীয় পার্টি বোধ হয় সেই নির্যাতনের কথা ভুলেই গেছে এখন। ভুলে গেছে অনেকে সেটা।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ তো সবার আগে নির্যাতিত। জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, জেনারেল এরশাদ সবাই আওয়ামী লীগের উপর নির্যাতন করেছে।
আলোচনায় আরও অংশ নেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতি মন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মুহাম্মদ ফারুক খান, আ স ম ফিরোজ, বিরোধী দলীয় উপনেতা জিএম কাদের, বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশীদ, মসিউর রহমান রাঙ্গা, আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য শাজাহান খান, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, ওয়াসিকা আয়শা খান।
এসএম/এএস