বিরোধীদের মোকাবিলায় সাংগঠনিক শক্তি বাড়াচ্ছে আওয়ামী লীগ
হঠাৎ করে উত্তপ্ত রাজনীতির মাঠ। বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলসহ তাদের অন্যান্য সহযোগী সংগঠন মাঠ গরম করে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে মরিয়া। প্রতিদিনই কোনো না কোনো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকছে বিএনপি ও মিত্র দলগুলো।
অন্যদিকে বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করার ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনগুলোও প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপিসহ তাদের মিত্রদের ষড়যন্ত্র রাজপথেই মোকাবিলা করার। এজন্য সংগঠনের সব স্তর শক্তিশালী করা হচ্ছে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি এখনও প্রায় দেড় বছর। এরমধ্যেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনীতির মাঠ। বিএনপিও এর অঙ্গ সংগঠনগুলোর বিভিন্ন কর্মসূচিতে নেতারা সরকারবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন। সরকারের নানান কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে শীর্ষ নেতারাও পাল্টা বক্তব্য দিচ্ছেন।
রাজনীতির মাঠ গরম হয়ে উঠাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে দীর্ঘ দিন নিরব থাকার পর রাজনৈতিক দলগুলো সরব হচ্ছে। এতে বোঝা যাচ্ছে সবাই ভেতরে ভেতরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সরকারের পক্ষ থেকেও ছাড় দেওয়ার মানসিকতা দেখা যাচ্ছে। তবে রাজনীতির নামে উগ্রতা দেখালে কঠোর জবাব দিতে পিছপা হবে না ক্ষমতাসীনরা। তারা রাজপথের বিরোধী শক্তিকে আইনি প্রক্রিয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে চায়। সম্প্রতি ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের মধ্যে ঘটে যাওয়া সংঘর্ষকে রাজনৈতিক সংঘাত হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা। তবে এ সংঘাত বাড়তে দিলে ভবিষতে আরও খারাপ বার্তা আসতে পারে রাজনৈতিক অঙ্গনে- এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এদিকে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল উপলক্ষে দলকে শক্তিশালী করার প্রত্যয় নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সভা হচ্ছে। ওয়ার্ড থেকে শুরু করে ইউনিয়ন উপজেলা, জেলা সম্মেলনের মাধ্যমে ক্লিন ইমেজের নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। এক্ষেত্রে দলের হাই কমান্ডের নির্দেশ- কোনোভাবেই বিতর্কিত কেউ যেন দলের নেতৃত্বে আসতে না পারে। সে ব্যাপারে কঠোর কেন্দ্রীয় নেতারাও।
বিএনপির কথার জবাব দেওয়ার মাধ্যমেই নিজেদের সক্ষমতারও পরীক্ষা দিতে চায় আওয়ামী লীগ। দলের নেতারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে বিএনপি ও ছাত্রদল নেতারা যেসব বক্তব্য দিয়েছেন ও দিচ্ছেন, এগুলো রাজনৈতিক ভাষা নয়। ‘পঁচাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’ এমন স্লোগানের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এর প্রতিবাদে ৪ জুন সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ করবে ৮ জুন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ১০ জুন সমাবেশ করবে। মহিলা আওয়ামী লীগ ১ জুন সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। ২ জুন যুব মহিলা লীগ সমাবেশ করেছে। ৪ জুন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ। একই দিন কৃষক লীগেরও বিক্ষোভ সমাবেশ ছিল।
দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সংগঠিত হওয়ার জন্য প্রতিদিনই বিভিন্ন পর্যায়ে মিটিং হচ্ছে। তবে এ মুহূর্তে প্রধান লক্ষ্য ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং ২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন ঘিরে বৃহৎ কর্মসূচি। সেখানে কয়েক লাখ মানুষের একটা সমাবেশ প্রত্যাশা করছে আওয়ামী লীগ।
সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, নির্ধারিত সময়ের ভেতরে আমাদের সাংগঠনের তৃণমূল পর্যায়ে দলকে গোছানো, সম্মেলন করা এবং যে জেলাগুলো বাকি আছে সেগুলো আমরা সম্পন্ন করার কাজ ইতোমধ্যে শুরু করেছি। এটা আমরা শেষ করতে পারব। তৃণমূলকে গুছিয়েই আমরা সম্মেলনে আগাব।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সম্মেলন নির্ধারিত সময়ের আগেই হওয়ার কথা। তার আগে নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ত করা, তৃণমূলের সঙ্গে সাধারণ মানুষ খেটে খাওয়া মানুষ নতুন ভোটারদের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী করার ঐতিহ্যগতভাবে আওয়ামী লীগ যেভাবে এগিয়েছে সেই ধারা সমন্বিত রাখা আমাদের দলের নেতা-কর্মীরা সর্বস্তরে এ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
এসএম/এনএইচবি/এসএন