ঘোষণার অপেক্ষায় যুবদলের নতুন কমিটি
রাজপথ আন্দোলনে বিএনপির ‘ভ্যানগার্ড’ খ্যাত ঐতিহ্য থাকার পরও অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও নেতৃত্ব স্থবিরতায় জাতীয়তাবাদী যুবদল। আগামী দিনে সরকার পতন আন্দোলন বিবেচনায় সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে যুবদলকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। ধারাবাহিকতায় যুবদলের কমিটির সবকিছু চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন যে কোনো কমিটি ঘোষণার অপেক্ষায় সংগঠনটির পদ প্রত্যাশী নেতা-কর্মীরা। মেয়াদোর্ত্তীণ কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ নয়, বরং নতুন নেতৃত্বে নতুন কমিটি চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া সমাপ্ত করা হয়েছে। তবে নতুন কমিটি হলেও প্রথমে আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানিয়েছে যুবদলের দায়িত্বশীল নেতারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নেতৃত্ব ধরে রাখতে ৩৫১ সদস্য বিশিষ্ট একটি খসড়া কমিটির তালিকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে জমা দেয় যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটি। কিন্তু বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি আস্থাহীনতায় নতুন কমিটি গঠনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে যুবদলের কমিটিকে নিয়ে দুই কৌশলে বিএনপির হাইকমান্ড। একদিকে বর্তমান সভাপতি সাইফুল আলম নিবরকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়ে যাওয়া, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে সভাপতি পদে নিয়ে আসা। অন্যদিকে নিরব-টুকু দুইজনকেই সরিয়ে সংগঠনের ভেতর কিংবা বাইরে থাকা সাবেক ছাত্রনেতাদের অগ্রাধিকার দিয়ে যুবদলের নতুন কমিটি ও নেতৃত্ব নির্বাচিত করে চমক দেওয়া হতে পারে বলেও জানা গেছে।
বর্তমান আংশিক কমিটিকে পূর্নাঙ্গ নাকি নতুন কমিটি এই বিষয়ে জানতে চাইলে যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুল আলম নিরব ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘নতুন কমিটি চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি, সেই কমিটির ঘোষণা আসতে পারে যে কোনো সময়।’
২০১৭ সালে ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার নির্দেশনায় প্রেস বিজ্ঞপ্তি সাইফুল আলম নিরবকে সভাপতি ও সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করে (০৩) বছরের জন্য ‘সুপার-ফাইভ’ কমিটির অনুমোদন হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা ছিলেন সিনিয়র সহ-সভাপতি মোর্ত্তাজুল করিম বাদরু, সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান। সেই কমিটির নেতারা নির্ধারিত তিন বছরের জায়গায় পাঁচ বছর অতিক্রম করছেন। যদিও ২০২০ সালে ৭ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা হয়। ১১ ফেব্রুয়ারি ১১টি সাংগঠনিক টিম গঠন করেছে। তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটির মুখ দেখেনি যুবদল।
সম্প্রতি কমিটির ‘সুপার ফাইভ’কে বাদ দিয়ে যুবদলের প্রত্যেক সহ-সভাপতি ও যুগ্ম-সম্পাদকের সঙ্গে ‘ওয়ান টু ওয়ান’ কথা বলেছেন তারেক রহমান। এ সময় তিনি প্রত্যেকের কাছ থেকে নতুন কমিটি নাকি পূর্ণাঙ্গ কমিটি চায় এ বিষয়ে মতামত নেওয়া হয়। সেই আলোচনায় নতুন কমিটির পক্ষে মত দেন যুবদল নেতারা। পরবর্তীতে তাদের মতামতে ভিত্তিতে নতুন কমিটি গঠন চূড়ান্ত করা হবে বলেও যুবদল নেতাদের জানান তারেক রহমান।
সংশ্লিষ্টদের মতে, নতুন কমিটিতে বর্তমান সভাপতি থাকছেন না এটা এক প্রকার ‘নিশ্চিত’। তবে শীর্ষ নেতৃত্বে আলোচনায় রয়েছেন যুবদলের সভাপতি পদে আলোচনায় মোর্ত্তাজুল করিম বাদরু, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, নুরুল ইসলাম নয়ন, মামুন হাসান, সাধারণ সম্পাদক পদে যুবদলের দফতর সম্পাদক কামরুজ্জামান দুলাল, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রাজীব আহসান, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান মিন্টু, যুবদল নেতা শরিফ উদ্দিন জুয়েল, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার, সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি মহিদুল ইসলাম হিরো নাম আলোচনায় রয়েছে।
এদিকে বিএনপির একটি দায়িত্বশীল সূত্র মতে- যুবদলের কমিটিতে সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু কে রাখা হলে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব কিংবা আকরামুল হাসান মিন্টু-কে দায়িত্ব দেওয়া হলে সংগঠন সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হবে। কারণ ছাত্রনেতাদের মধ্যে কেবল মাত্র টুকু-হাবিব-মিন্টুদের সারাদেশে নিজস্বকর্মী বাহিনী রয়েছে যা অন্য কোনো সাবেক ছাত্রনেতাদের নেই।
যুবদল সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘মূল্যায়ণ সবাই চায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঠিক করবেন নতুন কমিটি কবে, কখন ঘোষণা করা হবে এবং সেই কমিটির নেতৃত্বে কে বা কারা থাকছে।’
প্রসঙ্গত, প্রতিষ্ঠার চার দশক পেরিয়ে গেলেও এ পর্যন্ত কমিটি হয়েছে মাত্র ৬টি। সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি হয়েছে ৩টি। বাকিগুলো প্রেস রিলিজের মাধ্যমে করা হয়েছে।
এএজেড