আন্দোলন হোক না হোক শেখ হাসিনাকে যেতেই হবে: গয়েশ্বয়
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, 'কথা পরিষ্কার আমরা এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না। আন্দোলন হোক আর না হোক শেখ হাসিনাকে যেতেই হবে।'
তিনি বলেন, 'আমরা ঘুমিয়ে থাকি বা রাস্তায় না নামি, আর যেনতেনভাবে নির্বাচন করার সক্ষমতা শেখ হাসিনার নেই। তার সাথে আলাপের কিছু নেই। প্রতিদিনই তো আলাপ হচ্ছে। উনি পদত্যাগ করলেই তো পারে। তবে তিনি পদত্যাগ করলেই নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে সেটারও গ্যারান্টি নেই। সেজন্য পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করতে হবে এবং সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। তারপর যে সরকার হবে তারাই সিদ্ধান্ত নিবে নির্বাচন কিভাবে হবে। আগে সরকারের পদত্যাগ নিশ্চিত করি তারপর নির্বাচনকালীন সরকারের নাম ঠিক করা যাবে। আগে সন্তান ভূমিষ্ঠ হোক। পরে নাম ঠিক করা হবে।'
বুধবার (১১ মে) একসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে 'বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে জাতীয় ঐক্য ও অবৈধ সরকারের পদত্যাগ আজ সময়ের দাবি” শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল।
গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, 'আজকে চারিদিকে অনেক ধরনের ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশের আকাঙ্খিত ঘটনা এখনো ঘটেনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমাদের আগ্রহ ছিল না। নানাভাবে চাপ দেওয়া শুরু হয়। পরে খালেদা জিয়া ভাবলেন ক্ষমতায় কে আসবে আসুক কিন্তু দেশকে বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়াটা বন্ধ হবে। তবে সেটি হয়নি। সে সময় আমি প্রথম দুই নেত্রীর মুক্তি চাই। আওয়ামী লীগের নেতারা কিন্তু শেখ হাসিনার মুক্তি চায় নাই।'
তিনি বলেন, 'আমাদের নেতা তারেক রহমান শেখ মুজিবুর রহমানের মাজারে গিয়ে ছিলেন। অথচ আজকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজার থাকবে কি না সেটা নিয়ে টানাটানি।'
শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, জনগণের মনে যে ক্ষোভ সেটারই প্রতিফলন ঘটেছে। রাজা পাকসের পরিবারের দমন পীড়ন ও লুটের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে সেখানকার মানুষ। তেমনই বাংলাদেশের অবস্থা। এখানেও চলছে লুটপাট আর ক্ষমতার অপব্যবহার। আজকে মাথাপ্রতি গড় আয়ের কথা বলছেন। কিন্তু মাথাপ্রতি ব্যয়ের কথা বলছেন না কেন? আগামীতে ঋণের সুদের টাকা পরিশোধ করতে গেলে বুঝা যাবে কি হবে? এখন চালের সের ১০০ টাকা হলে ২ বছর পর চালের সের হবে ৩০০ টাকা। গণতন্ত্র তো উন্নয়নের বাধা না। বরং জনগণকে নিয়ে করেন। দেশে দুর্নীতি কিন্তু শতভাগ হচ্ছে। ১ টাকার জিনিস ৫ গুন বাড়ানো হচ্ছে। পদ্মা সেতুর দুই পাশে জমি অধিগ্রহণ করার নামে কতো টাকা লুট করা হয়েছে খোঁজ নিলেই জানা যাবে।'
গয়েশ্বর বলেন, 'সরকারের পতন হলে আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিবে। রাষ্ট্র সংস্কার কিভাবে করা যায়। আগে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামি। রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে আমাদের খালেদা জিয়া ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন।'
খালেদা জিয়ার সাজা আইনসিদ্ধ না। এটা শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। তা না হলে হাজী সেলিম কেমনে বিদেশ যায়? এ বিষয়ে দলের আইনজীবীরা রিট পিটিশন দায়ের না করায় উষ্মা প্রকাশ করেন গয়েশ্বর।
আইনজীবীদের সমালোচনা করে বিএনপি এ নেতা বলেন, 'সুপ্রিমকোর্ট বার নির্বাচনের ফল লুট করলো আপনারা কলম বিরতি করলেন না একদিনের জন্য? কেন? আপনারা স্বরাষ্ট্র সচিবকে আদালতে হাজির করেন।'
নির্বাচনে অংশ না নিলে বিএনপি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, 'আগে নিজেরা সামলান। শ্রীলঙ্কার ওয়াসার এমডিকে দেখেছেন কিভাবে বেঁধে পঁচা পানি খাইয়েছে! এখানে কী হবে সেটা ভাবেন?
গণঅধিকার পরিষদ আন্দোলনের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, 'আমরা শেখ হাসিনা ওয়াজেদের অধীনে কোন নির্বাচনে যাব না। সুতরাং শেখ হাসিনার উচিত শ্রীলংকার দিকে তাকানো। না হলে হেলিকপ্টারে চড়ার সময়ও পাবে না। আমরা যখন দেশের আসল স্বাধীনতা ভোগ করব আমি দোয়া করি ততদিন আপনারা (মুক্তিযোদ্ধা) বেঁচে থাকেন। ইতিহাস বিকৃত করে অথচ মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃত দেয় না। শুধু একজন লোকই দেশ স্বাধীন করেছে বলে প্রচার করেছে! অন্যদের অবদান মুছে ফেলে তাদেরকে বঞ্চিত করা জাতির জন্য লজ্জাজনক।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনবিচ্ছিন্ন দল। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে এই দানবকে সরাতে হবে। এটা খুব জরুরি। সম্মিলিতভাবে এই দানব সরকারের পদত্যাগ ও পতন ঘটাতে চাই। এটাই এখন মূল লক্ষ্য; নির্বাচন পরে। আজকে অনেক আলেম ওলামাদের জেলে রাখা হয়েছে। আমাদের উচিত মজলুমদের জন্য কিছু করা।
সভাপতির বক্তব্যে ইশতিয়াক আজিজ উলফাত বলেন, আমাদের দিন এসে গেছে। এখন কত তাড়াতাড়ি এই জোচ্চোর ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরাতে পারি ততই মঙ্গল। তবে ঘরে বসে থাকলে কিন্তু কিছুই হবেনা। অবিলম্বে সরকার পতনের কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে নেমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে। সেখানে মুক্তিযোদ্ধারা আবারো মাঠে থাকবে। মুক্তিযুদ্ধ কখনো শেষ হয়না। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আবারো মুক্তিযুদ্ধ করতে হবে।
মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমদ খানের পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক জয়নুল আবেদীন, গণ-অধিকার পরিষদের ড. রেজা কিবরিয়া, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু সহ মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতারা।
এমএইচ/এএস