সরকারের ইচ্ছার কাছে বিচার বিভাগ আত্মসমর্পিত: রিজভী
সরকার দেশের আইন-আদালত-বিচার-প্রশাসন সবকিছু দলীয়করণের ঘনকালো আলখেল্লায় ঢেকে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ‘আদিম বন্য শাসন চলছে দেশের প্রতিটি সেক্টরে। এখন ক্ষমতাসীনদের ভ্রষ্টাচারের প্রলয় নৃত্য চলছে চারদিকে। দেশে চলছে দুই আইন। আইন ও বিচারের চোখ কানা করে দিয়েছেন অবৈধ প্রধানমন্ত্রী। মুজিব কোটধারী আওয়ামী লীগার ও প্রধানমন্ত্রীর ছত্রছায়া প্রাপ্তরা দেশের সব আইন কানুনের ঊর্ধ্বে। আর বিএনপিসহ বিরোধীদল ও মতের মানুষের জন্য প্রতিহিংসামূলক ও গণভবনের ওহি দিয়ে চলছে বিচারিক সিদ্ধান্ত।’
রিজভী বলেন, ‘বিএনপির জন্য আদালতগুলোকে ক্যাঙ্গারু কোর্টে পরিণত করা হয়েছে। বিচারালয়গুলোকে ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছা পূরণের মেশিনে পরিণত করা হয়েছে। এটা এখন শেখ হাসিনার তথাকথিত ন্যায় বিচারের নতুন মডেল।’
বুধবার (৪ মে) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
'ক্ষমতাসীনরা হচ্ছে দেশের প্রথম শ্রেণির নাগরিক। তাদের জন্য দেশের কোনো আইন আদালত প্রযোজ্য নয়। বাকি সবাই দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। তারা আওয়ামী লীগের কৃপায় তাদের প্রজা হয়ে বসবাস করছে। আওয়ামী সীলমোহর গায়ে থাকলে ফাঁসির আসামিও নিষ্পাপ হয়ে যায়'- যোগ করেন বিএনপির এ নেতা।
তিনি বলেন, বিএনপি মনে করে, দেশের সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোনোভাবেই ধ্বংস হতে দেওয়া উচিত নয়। নির্বিঘ্নে হাজি সেলিমের বিদেশ পাড়ি দেওয়ার ঘটনায় এটাই প্রমাণিত হয়েছে, ক্ষমতাসীন দলের নেতা-মন্ত্রীদের কাছে আদালত অসহায়। র্যাব-পুলিশ যেভাবে বিরোধীদল-মতের মানুষের পেছনে লেগে আছে, দৃশ্যতঃ আদালতের ভূমিকাও প্রায় একই ধরনের। সরকারের মদদে আইন-বিচারের নির্মম প্রবঞ্চনা ও কপোটতার প্রতি জনগণ নীরব হৃদয়শূন্য থাকতে পারে না।
রিজভী বলেন, দুর্নীতির মামলায় সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি হাজী সেলিম ‘রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায়’ শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিমানবন্দর দিয়ে থাইল্যান্ড চলে গেছেন। দুর্নীতির মামলায় হাজী সেলিম আত্মসমর্পণ না করেই দেশ ছেড়েছেন।
তিনি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন, কয়দিন আগে হাজী সেলিম তার অফিসে গিয়ে দেখা করেছিলেন। হাজী সেলিমের আগেও এক্সিম ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা হত্যা চেষ্টা মামলার আসামি, জয়নুল হক সিকদারের দুই ছেলে সিকদার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রন হক সিকদার ও তার ভাই দিপু হক সিকদার রোগী সেজে ২০২০ সালের ২৫ মে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ব্যাংকক যান। বিষয়টি তখন ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়।'
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, অথচ দেশের চারবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গুরুতর অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়াকে কথিত দুর্নীতির ‘মিথ্যে মামলায়’ বন্দি রেখে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ঠেলে দেওয়ার পরও বিদেশে তার চিকিৎসার জন্য অনুমতি দেওয়া হয় না।’
রুহুল কবির বলেন, খালেদা জিয়ার পরিবার ও চিকিৎসকরা খালেদা জিয়াকে বাইরে পাঠানোর দাবি জানালে, আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীরা চিৎকার করে বলেছেন, দণ্ডিত আসামির দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। অথচ হাজি সেলিমের জন্য সেই সুযোগ কীভাবে হলো?
রিজভী বলেন, ‘১৪ বছর আগে বিচারিক আদালতে হাজি সেলিম দণ্ডিত হলেও এখন পর্যন্ত একদিনও জেল খাটতে হয়নি। আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিচার শেষ হওয়ার আগেই তাকে জোর করে জেলে রাখা হয়েছে। কিন্তু সন্ত্রাস, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বহু অপকর্মের হোতা হাজি সেলিমের মামলাটি হলো অবৈধ সম্পদ অর্জনের যা সুস্পষ্ট সত্য ঘটনা।’
এসএন