বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের দাবি আইন ও সালিশ কেন্দ্রের
দেশে এখনও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটছে, যা মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থী। তাই এসব ঘটনা নিরপক্ষেভাবে তদন্ত করে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।
শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর আসাদগেট এলাকায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস-২০২১ উপলক্ষে মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে ১৮ দফা দাবি তুলে ধরেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের কর্মী ঝর্না খানম। এ ছাড়া বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবির ও পরিচালক (কর্মসূচি) নীনা গোস্বামী।
আবু আহমেদ ফয়জুল কবির বলেন, ‘আমাদের দেশে এখনও পর্যন্ত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন, হেফাজতে নির্যাতনের মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলো নিয়ে প্রতিবাদ করতে হচ্ছে। আমরা আশা করব, সরকার এই বিষয়গুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করবে এবং আমাদের দাবিগুলো মেনে নেবে। বাংলাদেশে কেন হেফাজতে নির্যাতন বা গুম-খুনের ঘটনা ঘটবে না? ইতিপূর্বে যারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বা যারা গুমের শিকার হয়েছেন, সেসব ঘটনার জন্য একটি তদন্ত কমিশন করে দায়ী ব্যক্তিদের প্রচলিত আইনের আওতায় নিয়ে এসে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। দেশে উন্নয়নের পাশাপাশি, আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের পাশাপাশি অবশ্যই মানবাধিকারের সূচকগুলো মাথায় রাখতে হবে।
নীনা গোস্বামী বলেন, ‘দেশে কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে না। মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে আমাদের পুরোপুরি ১৯৭২ সালের সংবিধানে ফিরে যেতে হবে। ৭২’ এর সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম বলে কিছু নেই। এই দেশে কেন গুম, খুনের মতো ঘটনা ঘটবে। অবিলম্বে গুম, খুন, হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ১৮ দফা দাবি তুলে ধরে ঝর্না খানম বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় বাহিনীর দ্বারা যে কোনো ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা, যেমন–বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এখতিয়ার বহির্ভূত আচরণ ইত্যাদির অভিযোগ উঠলে তা দ্রুততার সঙ্গে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করতে হবে এবং সম্পৃক্তদের যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে শাস্তি প্রদান করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ পর্যন্ত সংঘটিত সকল সকল গুম, অপহরণ ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ তদন্তে নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে আটক ও গ্রেফতারের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা সম্পূর্ণভাবে মেনে চলতে হবে। ব্যত্যয় ঘটলে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।’
দাবিগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে–
* নাগরিকদের মত প্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার ও মৌলিক মানবাধিকার যাতে খর্ব না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
* কোনো ধরনের সংকোচ, ভীতি কিংবা প্রতিহিংসার শিকার হওয়া ছাড়াই নাগরিকরা যাতে এ অধিকারসমূহ চর্চা করতে পারে, সে পরিবেশ তৈরির ওপর জোর দিতে হবে।
* গণমাধ্যম ও নাগরিকদের মত প্রকাশের অধিকারের সাথে সাংঘর্ষিক ডিজিটাল নিরাপত্তা আিইনে অংশীজনদের মামলা গ্রহণ না করার নির্দেশনা প্রদান করতে হবে।
* নাগরিকদের সমবেত হওয়ার অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। কোনোভাবেই এ অধিকার লঙ্ঘন করে শান্তিপূর্ণভাবে সমবেত জনগোষ্ঠীর ওপর বল প্রয়োগ করা যাবে না।
* নারীর সমানাধিকার নিশ্চিত করতে বিদ্যমান বৈষম্যমূলক আইনগুলোতে পরিবর্তন আনতে হবে। নারীর অধিকার সম্পর্কে সর্বস্তরের জনগণকে সচেতন করে তুলতে হবে।
* শিক্ষা কারিক্যুলামে সমমর্যাদা, সামানাধিকার, বৈষম্যহীনতা, বৈচিত্র্যতার প্রতি সম্মান প্রভৃকি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
* ধর্মীয় উত্তেজনা তৈরি করে কোনো সহিংসতার ঘটনা না ঘটে তার জন্য পর্যাপ্ত সর্তকতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িতদের সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
* ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিজ বিশ্বাস ও রীতি চর্চার অধিকার এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
* দেশে সুস্থ রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক চর্চা নিশ্চিত করার মাধ্যমে নাগরিকদের অধিকার ভোগের পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
এসএম/এসএ/