ঢাবি প্রো-ভিসির পদত্যাগে ৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম, দাবি না মানলে কঠোর কর্মসূচি
ঢাকা কলেজের শহিদ মিনারের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের পদত্যাগসহ ৬ দফা দাবিতে চার ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না করা হলে কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) ঢাকা কলেজের শহিদ মিনারের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ হুঁশিয়ারি দেন তারা।
গতকাল রবিবার নীলক্ষেত এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় আজ ফের সড়ক অবরোধের কথা থাকলেও জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে অবরোধ যাননি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মো. সজীব উদ্দিন বলেন, ‘আমরা এখান থেকে চার ঘণ্টার আলটিমেটাম দিচ্ছি। বিকেল ৪টার মধ্যে প্রো-ভিসি মামুনকে পদত্যাগ করতে হবে এবং ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী রাকিবের উপর যে নির্মমভাবে যেভাবে হামলা করা হয়েছে সেই হামলাকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। একইসঙ্গে এই সময়ের মধ্যে আমাদের যে ছয় দফা সেটি বাস্তবায়ন করতে হবে। যদি না আনা হয় চার ঘণ্টা পরে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা দিতে বাধ্য হবে।’
কি ধরণের কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তীতে কী কর্মসূচি হবে তা সবার সঙ্গে আলোচনা করে জানিয়ে দেওয়া হবে।’
এখন পর্যন্ত সাত কলেজের পঞ্চাশের অধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন ঢাকা কলেজের এই শিক্ষার্থী।
এর আগে ইডেন মহিলা কলেজের সুমাইয়া শাহিনা ৬ দফা দাবি উত্থাপন করে বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে এটি কোনভাবেই কাম্য ছিল না। জুলাই অভ্যুত্থানে সাত কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাঁধে-কাধ মিলিয়ে লড়াই করেছে। জুলাই অভ্যুত্থানের সময় ১৫ জুলাই পুলিশ ও ছাত্রলীগের পেটোয়া বাহিনী যেভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে, গতকালও ঠিক একই কায়দায় শিক্ষার্থীসহ নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল। তাদেরও আমরা দৃষ্টান্তমূলক শান্তির দাবি জানাচ্ছি।’
তাদের দাবিগুলো হলো- সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংঘাতের দায় নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে এবং প্রো-ভিসি মামুন আহমেদের পদত্যাগ; ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী রাকিবকে হত্যার উদ্দেশে হামলাসহ ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর নিউমার্কেট থানা পুলিশের ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় এসি, ওসিসহ জড়িত পুলিশ সদস্যের প্রত্যাহার করে তদন্তসাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থীদের দ্বারা ইডেন কলেজ ও বদরুন্নেচ্ছা কলেজসহ সাত কলেজের নারী শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও অশালীন অঙ্গভঙ্গির সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সাত কলেজের একাডেমিক এবং প্রশাসনিক সম্পর্কের চূড়ান্ত অবসান ঘটিয়ে তা বাতিল করে শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা প্রণয়ন।
উদ্ভুত পরিস্থিতি সমাধানের জন্য প্রধান উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টা, শিক্ষার্থী উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, ইউজিসি সদস্য এবং ঢাবি ভিসির সমন্বয়ে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি টিমের সঙ্গে তাৎক্ষণিক উচ্চপার্যায়ের মিটিংয়ের মাধ্যমে এই ঘটনার সমাধান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট এরিয়ায় সিটি করপোরেশনের রাস্তা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত।
এর আগে গতকাল রবিবার পাঁচ দফা দাবিতে ঢাবি উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের সঙ্গে তার অফিসে বাকবিতণ্ডার জেরে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব ও টেকনিক্যাল মোড় অবরোধ শেষে উপ-উপাচার্যের বাসভবনে ঘেরাও করতে এলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে এলে ঢাবি শিক্ষার্থীদের বাঁধার মুখে পড়েন তারা। পরে তোরণের সামনেই সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে ঢাবি শিক্ষার্থীরা সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিয়ে তোরণ থেকে সরিয়ে দিতে গেলেই শুরু হয় দু’পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া।
রাত সাড়ে ১১টার দিকে দু’পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়ে চলে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত। এ সময় দুই পক্ষকে নিবৃত্ত করতে পুলিশ কয়েক দফায় সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল নিক্ষেপের পরও দফায় দফায় চলতে থাকে দু’পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। পরবর্তীতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন করা হয় চার প্লাটুন বিজিবি। এতে অন্তত দুই প্রতিষ্ঠানের অন্তত ২০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।