আবু সাঈদ ফ্রান্সে আছে দাবিতে গোলাম মাওলা রনির নামে ভুয়া মন্তব্য প্রচার
ছবি: সংগৃহীত
সম্প্রতি, শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, পটুয়াখালী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি ‘আবু সাঈদ মারা যায়নি, ফ্রান্সে আছে। ড. ইউনূস তাকে ফ্রান্সে পাঠিয়ে দিয়েছে’ শীর্ষক মন্তব্য করেছেন।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত ভিডিওটি প্রায় ২ লাখ ৩৫ হাজারের অধিক বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে ৩ হাজারের অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। ভিডিওটি ৫ শতাধিক বার শেয়ার করা হয়েছে। ভিডিওটির মন্তব্য ঘর ঘুরে অধিকাংশ নেটিজেনকে উক্ত দাবির পক্ষে মতামত দিতে দেখা গেছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পটুয়াখালী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি ‘আবু সাঈদ মারা যায়নি, ফ্রান্সে আছে। ড. ইউনূস তাকে ফ্রান্সে পাঠিয়ে দিয়েছে’ শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি বরং গোলাম মাওলা রনির ভিন্ন একটি মন্তব্যের ভিডিও ক্লিপের সাথে ‘আবু সাঈদ জীবিত গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে গেল Golam Maula Rony’ শীর্ষক বাক্য বসিয়ে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটির ব্যাকগ্রাউন্ডে গোলাম মাওলা রনির কণ্ঠস্বর শোনা গেলেও তা অস্পষ্ট এবং খন্ডিত ছিল। সেখানে গোলাম মাওলা রনিকে আবু সাঈদকে নিয়ে আলোচিত মন্তব্যটি করতে দেখা যায়নি। তাছাড়া ভিডিওটিতে উক্ত দাবির পক্ষে কোনো তথ্য বা প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি।
আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে আবু সাঈদকে নিয়ে গোলাম মাওলা রনির এমন কোনো মন্তব্যের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও, গোলাম মাওলা রনির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল পর্যবেক্ষণ করেও আবু সাঈদকে নিয়ে তাঁর এমন কোনো মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তাছাড়া, গোলাম মাওলা রনির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গত ১৬ জুলাই আবু সাঈদকে শহীদ উল্লেখ করে প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
সেখানে তিনি বলেন, আবু সাঈদের বীরত্ব নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর ব্যানারে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহত হন।
আবু সাঈদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রদত্ত মৃত্যুর প্রমাণপত্র অনুযায়ী আবু সাঈদকে ১৬ জুলাই দুপুর ৩.০৫ মিনিটে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ১৭ জুলাই সকালে রংপুরে পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামের জাফরপাড়া মাদরাসা মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে আবু সাঈদকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
সুতরাং, আবু সাঈদের জীবিত থাকা ও ফ্রান্সে অবস্থান করার বিষয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জড়িয়ে গোলাম মাওলা রনির নামে টিকটকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।