ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার ‘বাংলা মিশন’: হাসিনাত্তোর বাংলাদেশে ‘র’-এর পরিকল্পনা
ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার ‘বাংলা মিশন’: হাসিনাত্তোর বাংলাদেশে ‘র’-এর পরিকল্পনা। ছবি: সংগৃহীত
জার্মানির নিউজ পোর্টাল‘দি মিরর এশিয়া’ সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ বাংলাদেশে একাধিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে ভারত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত একটি প্রকল্প শুরু করেছে।
এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো বামপন্থীদের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইউনূস সরকারের ওপর একটি নেতিবাচক বয়ান প্রতিষ্ঠা করা। এর সাথে, হেফাজত ইসলাম ও হিজবুত তাহরীরের মতো সংগঠনগুলোর উপর ভিত্তি করে একটি ভয় তৈরি করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
দি মিরর এশিয়া ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ প্রতিবেদটি প্রকাশে আনে, বর্তমানেও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা চলমান আছে বলে জানা যায়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘র’-এর সাথে দীর্ঘদিন যোগাযোগ আছে এমন কিছু হেফাজত ইসলামের অংশকে বোঝানো হচ্ছে যে, ড. ইউনূস একটি মার্কিন এজেন্ট এবং সুদখোর, ফলে তিনি ভালো মুসলিম নন। একইসাথে, তাদের জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সাথে ঐক্যবদ্ধ না হওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
‘দি মিরর এশিয়া’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘বাংলা মিশন’-এ সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে আন্দোলনকারীদের হিজবুত তাহরীরের সাথে সংশ্লিষ্টতা তুলে ধরে জনগণের মধ্যে এক ধরনের ভয় তৈরি করা। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে তিনজন বামপন্থী সাবেক ছাত্রনেতার সাথে দিল্লির এক সাংবাদিক দীর্ঘ আলোচনা করেছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের বর্তমান অগ্রাধিকার হলো- হিজবুত তাহরীর ও শিবির প্রভাবিত সরকার বলে চিহ্নিত করে একটি রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করা। একইসাথে, আওয়ামী লীগকে প্রকাশ্য রাজনীতিতে ফিরে আসার জন্য প্রস্তুত করা।
এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে ‘র’-এর একটি উপ-গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘বাংলা মিশন’। এই মিশনের অন্তর্ভুক্ত কয়েকজন সমন্বয়কের বক্তব্যকে বিশেষ নজরে রাখা হয়েছে। তাঁদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্টগুলো হিন্দি ও ইংরেজিতে অনুবাদ করে ‘র’-এর একটি সেল, ‘ভিক্টর-২’-এর কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, হাসিনাকে দক্ষিণ দিল্লির একটি সরকারি আবাসনে স্থানান্তরিত করা হয়েছে, এবং তার নিরাপত্তার দায়িত্ব সরাসরি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি) গ্রহণ করেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশনায় ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল শেখ হাসিনার নিরাপত্তার তত্ত্বাবধান করছেন। হাসিনার মনোবল ফিরিয়ে আনার জন্য নিয়মিত তার সাথে দেখা করছেন তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।
‘দি মিরর এশিয়া’ প্রতিবেদনে বলছে, ভারতের পরবর্তী পরিকল্পনা হলো ছাত্র আন্দোলনের সম্ভাব্য বিপ্লব প্রতিহত করা এবং একটি ‘প্রতিবিপ্লব’ সংগঠিত করা। এই লক্ষ্যে সংখ্যালঘুদের সমাবেশের আড়ালে একটি প্রতিবিপ্লবের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, যা ৫ আগস্ট ব্যর্থ হয়। এরপরে ১৫ আগস্ট একটি ক্যু পরিকল্পনা করা হয়, কিন্তু সেটিও সফল হয়নি।
ভারত মনে করে, বিএনপির সাথে আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব থাকলেও, আওয়ামী লীগই তাদের জন্য নিরাপদ রাজনৈতিক মিত্র হতে পারে। ফলে, ছাত্র আন্দোলন এবং বামপন্থী দলগুলোকে অগ্রাধিকার না দিয়ে, তারা আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত এখনই জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে আলোচনার দরজা খুলতে চাচ্ছে না, তবে তারা একটি ‘জানালা’ খুলে রাখার চিন্তা করছে। আর বিএনপির নেতৃত্বে ভারত কোনো নিরাপত্তা পাবে না বলে মনে করছে তারা।
‘দি মিরর এশিয়া’ বলছে, ভারতের সামগ্রিক পরিকল্পনা হলো- বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে নিজের আঞ্চলিক নিরাপত্তা শক্তিশালী করা এবং তাদের কৌশলগত অবস্থান ধরে রাখা।