ইসির পদত্যাগের প্রস্তুতি, দুপুরে সংবাদ সম্মেলন
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। ছবি: সংগৃহীত
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পদত্যাগের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে এসংক্রান্ত ঘোষণা আসতে পারে।
এদিকে গতকাল বুধবার তাদের পদত্যাগের দাবিতে নির্বাচন ভবনের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন সিইসি। ধারণা করা হচ্ছে, সংবাদ সম্মেলন থেকেই পদত্যাগের ঘোষণা আসতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ২০২২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সিইসি হিসেবে নিয়োগ পান সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান, অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর ও অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান। নিয়োগের এক দিন পর তারা তৎকালীন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর কাছে শপথ নেন।
ওই কমিশনের অধীন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনটি বিএনপি ও তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো বর্জন করে। ভোট শেষে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছিল শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ।
বিগত সংসদ নির্বাচনের পর থেকে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল।
এর মধ্যে ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সরকারের পতনের পর প্রশাসনে থাকা আওয়ামী লীগের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এ সময় বর্তমান নির্বাচন কমিশন বিলোপ করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনেরও দাবি ওঠে। এ নিয়ে কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন কর্মসূচিও পালিত হয়েছে।
সর্বশেষ গতকাল নির্বাচন কমিশন ভবনের সামনে ‘নাগরিক সমাজ’ নামে একটি সংগঠন বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগের পাশাপাশি ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন সংস্কারে পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনারদের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
ইসি সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নিজেদের অবস্থান ও করণীয় জানতে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য বারবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে আউয়াল কমিশন। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মতো নির্বাচন কমিশনেও সংস্কার আসছে, এটি নিশ্চিত বলে মনে করছেন তাঁরা। সে জন্য বেশ কয়েক দিন ধরেই তাঁরা মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সিইসিসহ অন্য কমিশনাররা অফিস করলেও বর্তমানে তাঁদের বিদায়ের প্রস্তুতিই প্রাধান্য পাচ্ছে। শেষ সময়ে নিজেদের প্রয়োজনীয় জরুরি কাগজপত্রসহ অন্যান্য সামগ্রী সরিয়ে নিচ্ছেন তারা।
এদিকে আজ দুপুরে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আওয়াল সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন। এর আগে ইসির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে পদত্যাগের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে এবং সংবাদ সম্মেলনে তা ঘোষণা করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন।
গতকাল নির্বাচন কমিশন ভবনে নিজের দপ্তরে অন্য নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করেন সিইসি। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সিইসি কাজী হাবিবুল আওয়াল জানান, পদত্যাগের বিষয়ে ইসির সিদ্ধান্ত বৃহস্পতিবার জানানো হবে। যা বলার বৃহস্পতিবার (আজ) দুপুর ১২টার সংবাদ সম্মেলনে বলা হবে। সংবাদ সম্মেলন শেষে ইসি সদস্যরা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে যাবেন বলেও জানান তিনি।