শেখ হাসিনার সঙ্গে ‘বেঈমানি’ করতে চাননি কিন্তু দেশের মানুষের সাথে বেঈমানি করেছেন পলক
জুনাইদ আহমেদ পলক ও শেখ হাসিনা। ছবি কোলাজ: ঢাকাপ্রকাশ
৫ আগস্ট ছাত্র ও সাধারণ মানুষের আন্দোলনের চাপের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিকে তার দেশত্যাগের পর প্রায় ২৪ ঘণ্টা জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার একটি কক্ষে আত্মগোপনে ছিলেন সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দিন (৬ আগস্ট) দুপুর পর্যন্ত পলক ওই এলাকাতেই ছিলেন। এরপর তিনি বিশেষ উপায় অবলম্বন করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে যান। মুখে মাস্ক, মাথায় ক্যাপ পরেন নিজেকে আড়াল করতে। কিন্তু তাতেও ঘটে যায় বিপত্তি সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বরত থাকা কর্মকর্তারা তাকে চিনে ফেলেন। পরে তাকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে যায় সেনাবাহিনী। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারের পর থেকেই বেশিরভাগ সময় কান্নাকাটি করছেন জুনাইদ আহমেদ পলক। ইন্টারনেট শাটডাউনের বিষয়েও তিনি তার দায় অস্বীকার করেছেন। তার ভাষ্য, প্রতিমন্ত্রী হলেও ইন্টারনেট বন্ধ করার ক্ষেত্রে তার একক কোনও সিদ্ধান্ত ছিল না।
জিজ্ঞাসাবাদে পলক জানিয়েছেন, গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান ও এনটিএমসির মহাপরিচালক সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের নির্দেশনা মেনে তিনি ইন্টারনেট শাটডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এছাড়া ইন্টারনেট শাটডাউনের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার সায় ছিল।
জিজ্ঞাসাবাদকারী সূত্রের দাবি, ভিআইপি আসামিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভেঙে পড়েছেন জুনাইদ আহমেদ পলক। এত দ্রুত সরকারের পতন হতে পারে, তা তিনি কল্পনাও করতে পারেননি। যদিও একদিন আগে স্ত্রী-সন্তানদের বিদেশ পাঠিয়ে দেওয়ার কথাও তিনি স্বীকার করেছেন। পলকের ভাষ্য, চাইলে তিনিও দেশ ছেড়ে পালাতে পারতেন। তবে শেখ হাসিনার সঙ্গে ‘বেঈমানি করা হবে’ বলে তিনি যাননি।
সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসে থাকা একজন মানুষের সঙ্গে বেঈমানি না করতে পারায় যে দেশের প্রায় ১৮ কোটি সাধারণ মানুষের সঙ্গে বেঈমানি করে ফেলেছেন তা হয়ত তিনি নিজেও জানেন না। এর ফলে নিজেকে বানিয়ে ফেলেছেন জাতীয় বেঈমান। তাকে এখন এখন সারাদেশের মানুষ হাসছেন। তিরস্কার আর ধিক্কার জানাচ্ছেন। সকল মহল থেকেই উঠেছে তার বিচারের দাবি।
গত ১৯ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর পল্টন থানা এলাকায় গুলিতে নিহত হন রিকশাচালক কামাল মিয়া (৩৯)। ওই ঘটনায় রাজধানীর পল্টন থানায় অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীদের আসামি করে ২০ জুলাই একটি হত্যা মামলা করেন নিহতের স্ত্রী ফাতেমা খাতুন। ওই মামলায় গত ১৪ আগস্ট গ্রেপ্তার করা হয় শামসুল হক টুকু, জুনাইদ আহমেদ পলক ও ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকে।