ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ চায় নির্মূল কমিটি
বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দেশ গড়তে হলে ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে বলে মত দিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। আজ সোমবার (৩১ জানুয়ারি) মিরপুর মুক্ত দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক ওয়েবিনারে কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির এই মত প্রকাশ করেন।
লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই ওয়েবিনারে তিনি বলেন, ‘নির্মূল কমিটির দীর্ঘ ধারাবাহিক আন্দোলনের কারণে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আরম্ভ করেছেন, সংবিধানের বিলুপ্ত মূলনীতিসমূহ পুনঃস্থাপন করেছেন কিন্তু ধর্মের নামে রাজনীতির উপর যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা সংবিধানে এখনও পুনস্থাপিত হয়নি। যার কারণে ’৭১-এর গণহত্যাকারী, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধীরা এখনও রাজনীতিতে সক্রিয় থেকে ধর্মের নামে হত্যা, সন্ত্রাস, নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বাংলাদেশ গড়তে হলে ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।’
শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘’৭১-এর ১৬ ডিসেম্বরের পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকার-আলবদরদের যে সব সদস্য আত্মসমর্পণ না করে অবাঙালি অধ্যুষিত মিরপুরে অবস্থান নিয়েছিল তাদের দখল থেকে মিরপুর মুক্ত করতে গিয়েই জহির রায়হান সহ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলামী, রাজাকার, আলবদর প্রভৃতি ঘাতকদের দল ও বাহিনী সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে আত্মগোপনে থেকে মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র ও অন্তর্ঘাতে লিপ্ত ছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বপ্রদানকারী তার সহযোগীরা ১৯৭২-এ প্রণীত বাংলাদেশে সংবিধানে তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন এবং ’৭১-এর ঘাতক দালালদের বিচার আরম্ভ করেছিলেন, যা ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধু ও চার জাতীয় নেতার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমান সামরিক ফরমানের দ্বারা বন্ধ করে দিয়েছিলেন।’
তিনি বলেন, ’অবিলম্বে মিরপুরের দখলিকৃত বধ্যভূমিগুলো পুনরুদ্ধার করে সে সব জায়গায় শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করতে হবে। ’৭১-এর গণহত্যাকারীদের বিভিন্ন সংগঠনসহ পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত আরম্ভ করতে হবে। বিভিন্ন মাধ্যমের পাঠ্যপুস্তকে ’৭১-এর গণহত্যার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি, শিক্ষা- সর্বক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিফলন থাকতে হবে। তবেই আমরা বঙ্গবন্ধুসহ মুক্তিযুদ্ধের শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করতে পারব।’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ১৯৭২-এর ৩০-৩১ জানুয়ারি মিরপুরের যুদ্ধে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাবার জন্য প্রতিবছর ৩১ জানুয়ারি মিরপুর মুক্ত দিবস পালন করে। করোনা মহামারীর কারণে এ বছর মিরপুরের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য জনসমাবেশ ও র্যালির পরিবর্তে ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়েছে।
ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে অংশগ্রহণ করেন ঢাকা ১৪ আসনের সংসদ সদস্য আগা খান মিন্টু, মিরপুরে শহীদ সাংবাদিক আবু তালেবের পুত্র খন্দকার আবুল আহসান, ‘মিরপুরের ১০টি বধ্যভূমি’ গ্রন্থের প্রণেতা সাংবাদিক মিরাজ মিজু, ‘কল্যাণপুর গণহত্যা’ গ্রন্থের লেখক আলী আকবর টাবী ও নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল।
এমএ/