'উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকা দরকার'
২০২৬ সালের মধ্যে চূড়ান্তভাবে এলডিসি থেকে উত্তরণের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করতে হলে অবশ্যই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রবিবার (২৫ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের সাধারণ আলোচনায় যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ আজ উন্নয়শীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে উল্লেখ করে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, আমরা (আ.লীগ) যদি (আবার ক্ষমতায়) না আসি তাহলে কে তা বাস্তবায়ন করতে পারবে?
তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে এমন কাউকে দেখান যিনি এটি করতে পারবেন। আমাকে এমন একজন লোক দেখান যে দেশের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করবে। আপনি যদি আমাকে এমন নেতৃত্ব দেখাতে পারেন, আমার কোনো আপত্তি নেই।’
প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, আপনারা আওয়ামী লীগকে বারবার ভোট দিয়ে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছেন বলে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের সেবা করতে পেরেছে, বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে এসেছে। আওয়ামী লীগ সরকার দারিদ্র্যের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে সক্ষম হয়েছে এবং আজ বেকারত্বের হার মাত্র ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
‘বাংলাদেশ কখনো পিছিয়ে থাকবে না, বরং অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ, বাঙালি জাতি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।’
জাতির পিতা আমাদের এই দেশ দিয়েছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো, এ দেশকে সমৃদ্ধ করা। আজ আমরা অনেক দূর এগিয়েছি এবং এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।’
গত ১ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭৬১,৭৮৫ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট পেশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা এবং বাংলাদেশকে বিজয়ী জাতি হিসেবে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
তিনি আরও বলেন, আমরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে চাই। আমরা কারো ওপর নির্ভরশীল হতে চাই না। আমরা ভিক্ষা চাই না। আমরা একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসাবে মাথা উঁচু করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।
তিনি বলেন, এতো প্রতিবন্ধকতা, বিরোধিতা, সমালোচনা এবং প্রতিনিয়ত ঘটতে থাকা অনেক কিছুকে অতিক্রম করে আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে আমরা (আওয়ামী লীগ সরকার) যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি।
কভিড-১৯ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ না হলে বাংলাদেশ উন্নয়নের যাত্রায় আরও এগিয়ে যেতে পারতো বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, তবে ভয়ের কিছু নেই। কেননা, বিভিন্ন সময়ে সমস্যা আসাটাই স্বাভাবিক। ‘সমস্যা দেখে মন খারাপ করবেন না বরং এর মুখোমুখি হতে হবে। আমরা অনেক কথা শুনছি যে, সরকার আজকে উৎখাত হবে এবং আগামীকাল অন্য কিছু ঘটবে’ তিনি যোগ করেন।
বাজেট নিয়ে সমালোচকদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, অনেকেই এই বাজেটকে উচ্চাভিলাষী বা বাস্তবায়ন যোগ্য নয় বলে অভিহিত করেছেন, যা তারা সব সময়ই বলে আসছে।
এ ছাড়াও কিছু লোক আছে যারা সব সময় নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে এবং তারা ইতিবাচক কিছুই দেখে না, যা দেশের জন্য সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক বিষয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সরকার প্রধান বলেন, তারা (সমালোচকরা) হয়তো কখনোই প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাননি, যেখানে শহরের তুলনায় দারিদ্র্যের হার অনেক কমেছে।
তিনি আরও বলেন, গ্রামীণ জনসাধারণের মধ্যে এমন কোনো দুর্ভোগ নেই।
তিনি বলেন, গত সাড়ে ১৪ বছর ধরে দেশে স্থিতিশীলতা বজায় থাকায় দেশের জনগণ ব্যাপক অগ্রগতি দেখতে পেরেছে।
তিনি আরও বলেন, কভিড-১৯ মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে কঠিন সময়ের মধ্যেও সরকার রেকর্ড ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট দিতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বে অনেক উন্নত দেশের অর্থনীতি যখন খারাপ অবস্থার মধ্যে রয়েছে, তখন আমরা এই বিশাল বাজেট দিতে পেরেছি।’
বাজেটের ঘাটতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার প্রতি বছর বাজেট ঘাটতি ৫ থেকে ৫ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রাখে। তিনি বলেন, ‘এবার বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশের মধ্যে রাখা হয়েছে এবং দুশ্চিন্তার কিছু নেই।’
বাজেটে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব।
আসন্ন ’২৪ অর্থবছরেই সার্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী তার বত্তব্যে সরকারি কর্মচারীদের মূল বেতনের ৫ শতাংশ বিশেষ প্রণোদনা হিসেবে বিবেচনার ব্যবস্থা নিতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে নির্দেশ দেন।
‘আমি অর্থমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করছি, এই জরুরি সময়ে সরকারি কর্মচারীদের মূল বেতনের ৫ শতাংশ বিশেষ বেতন হিসেবে দেওয়ার কথা বিবেচনা করুন। আমি আশা করি, মাননীয় অর্থমন্ত্রী বিষয়টি মেনে নেবেন। আমরা বিশেষ প্রণোদনা হিসেবে তাদের মূল বেতনের ৫ শতাংশ প্রদান করব।’
শেখ হাসিনা তার ভাষণে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা এবং বিভিন্ন খাতে তার সরকারের উন্নয়ন সাফল্য বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।
/বাসস