এবারের বাজেট ৭ লাখ কোটি টাকা: প্রধানমন্ত্রী
আগামী অর্থবছরের জন্য এবার ৭ লাখ কোটি টাকার বাজেট দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (৩০ মে) গাজীপুরে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) ৩৫তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, পহেলা জুন আমরা নতুন বাজেট দিতে যাচ্ছি। এবার আমরা ৭ লাখ কোটি টাকার বাজেট দিতে সক্ষম হব। দেশে স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক পরিবেশ আছে বলেই এ অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা (অগ্রগতি) সম্ভব হয়েছে কেন? সম্ভব হয়েছে একটি কারণে- ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছে। আজকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত একটা স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক পরিবেশ বাংলাদেশে বিরাজমান। এর মাঝে অনেক ঝড়-ঝাপটা এসেছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। অনেক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হয়েছে। তারপরও আমি বলব দেশ যখন স্থিতিশীল থাকে, দেশে যখন অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা থাকে তখনই দেশ উন্নতি করতে পারে। আর তার জন্য লাগে একটা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। আমাদের প্রতিটি প্ল্যান প্রোগ্রাম টার্গেটেড, টাইমবাউন্ড।
বিএনপি আমলের সঙ্গে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের বাজেট ২০০৬ সালে মাত্র ৬১ হাজার কোটি টাকা ছিল। আজকে সেই (গত অর্থবছর) বাজেট আমরা ৬ লাখ কোটি টাকায় উন্নীত করেছি। ২০০৬ সালে দারিদ্র্যের হার ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ হতে ২০২২ সালে ১৮ দশমিক ৬ শতাংশে এবং চরম দারিদ্র্যের হার ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ হতে হ্রাস পেয়ে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। এসময় দেশে চরম দারিদ্র্য বলে কিছু থাকবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জিডিপির আকার ২০০৬ সালে যেখানে ছিল মাত্র ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার; বর্তমানে তা ৪৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। মাথাপিছু আয় ৫৪৩ মার্কিন ডলার হতে ২০২২ সালে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে ৭৩ বছর হয়েছে।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যের কথা পুনর্ব্যক্ত করে সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশে আমরা একটি জ্ঞানভিত্তিক স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চাই। স্মার্ট বাংলাদেশে থাকবে একটি স্মার্ট সরকার, একটি স্মার্ট অর্থনীতি, একটি স্মার্ট জনসংখ্যা, একটি স্মার্ট সমাজ এবং স্মার্ট জনশক্তি। মানুষকে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারে দক্ষ করে তোলা হবে; যাতে তারা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে অবদান রাখতে পারে। স্মার্ট বাংলাদেশের উদ্দেশ্য হলো পরিবর্তিত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প উৎপাদন, ব্যবসা, বাণিজ্য সবক্ষেত্রে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করা।
তিনি বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমরা প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করছি। সারা দেশে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও ইনকিউবেশন সেন্টার এবং হাই-টেক পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা হচ্ছে। দক্ষ মানব সম্পদ গড়তে সরকার শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়েছে। শিক্ষা ও গবেষণায় আমরা বিশেষ জোর দিয়েছি। এ ক্ষেত্রে মেধাবী শিক্ষার্থীদের আমরা বৃত্তিসহ বিশেষ প্রণোদনা দিচ্ছি। দেশ-বিদেশের নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গবেষণার জন্য তাদের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।
আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা, আবাসন, কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, ডিজিটাল পরিষেবা, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, দুর্যোগের প্রস্তুতি এবং জলবায়ু অভিযোজনসহ বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক খাতে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। এমনকি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ আমাদের অগ্রগতি ব্যাহত করতে পারেনি।
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) ৩৫তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির চ্যান্সেলর ও ওআইসির মহাসচিব হিসেইন ব্রাহিম তাহা। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে স্বর্ণপদক প্রাপ্তদের পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এসজি