জ্বালানিতে ভর্তুকির সুবিধা পাচ্ছেন বিদেশি ক্রেতারা: প্রতিমন্ত্রী
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে ভর্তুকির সুবিধা পাচ্ছেন তৈরি পোশাক খাতের বিদেশি ক্রেতারা। এটা হতে পারে না।
তিনি বলেন, ‘বিদেশি ক্রেতাদের জন্য সস্তা বাজার তৈরির এ প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তাদের কাছে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে নিজেদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। ধীরে ধীরে বিশ্ববাজারের সঙ্গে মিল রেখে জ্বালানির দাম সমন্বয় করা হবে। এ জন্য নীতিমালা তৈরি হচ্ছে।’
শনিবার (২০ মে) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) নিজস্ব কার্যালয়ের সভাকক্ষে এক সংলাপে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী।
‘অনুমেয় ভবিষ্যতের পথে জ্বালানি কৌশল’ শিরোনামে এই সংলাপের আয়োজন করে ডিসিসিআই। এতে মূল নিবন্ধ উপস্থাপনের পাশাপাশি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন প্রতিমন্ত্রী।
সংলাপে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মতামত তুলে ধরে কথা বলেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক ফয়সাল করিম খান, ফরেন ইনভেস্টর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফআইসিসিআই) সভাপতি নাসের এজাজ বিজয় প্রমুখ। সংলাপ সঞ্চালনা করেন ডিসিসিআই সভাপতি মো. সামীর সাত্তার।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সবাইকে এখন জ্বালানির দক্ষ ব্যবহারে জোর দিতে হবে। দাম কমানো নয়, দক্ষ ব্যবহারই শিল্পের খরচ সাশ্রয় করতে পারে। ভারত, ভিয়েতনাম কোথাও জ্বালানি পণ্যে ভর্তুকি নেই। বিনিয়োগ, কর্মসংস্থানের কথা ভেবে সরকার দিচ্ছে। কিন্তু সরকার আর কত দিন ভর্তুকি দেবে?
নসরুল হামিদ বলেন, করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ মিলে একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ-জ্বালানির সমস্যা সবার সামনে এসেছে। এমন পরিস্থিতির কথা কেউ অনুমান করতে পারেননি। এর আগে তো কোনো সমস্যা ছিল না। পরে দাম বেশি হলেও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের দাবি তোলেন ব্যবসায়ীরা।
গ্যাসের দাম বাড়িয়ে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু ডলারের সংকট আছে। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ রাখতে হয়েছে। এতে অনেকে গ্যাস না পেয়ে অভিযোগ করছেন, যোগ করেন তিনি।
মূল নিবন্ধে বলা হয়, বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ট্রিলিয়ন (এক লাখ কোটি) ডলারের অর্থনীতিতে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ। এ জন্য বছরে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি করতে হবে। এটি এখন পাঁচে নেমে এসেছে। এটা বাড়াতে হলে বিনিয়োগ লাগবে। সে জন্য উচ্চ মূল্যে হলেও সবার কাছে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
এর জন্য জ্বালানি খাতে ১৭০ থেকে ২০০ বিলিয়ন (১৭ হাজার থেকে ২০ হাজার কোটি) ডলারের বিনিয়োগ লাগবে। এখনই দিনে ৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের ঘাটতি আছে। ২০৩০ সালে চাহিদা হবে দিনে ৫০০ কোটি ঘনফুট। এ চাহিদা পূরণে আমদানি করা এলএনজি থেকে দিনে ১৫০ থেকে ২০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করতে হবে।
তিনি বলেন, এতে বছরে প্রায় ১২ বিলিয়ন (১ হাজার ২০০ কোটি)ডলার লাগবে। সরকার সেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশে গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন বাড়ানোর দিকে জোর দেওয়া হয়েছে। তবে দেশে গ্যাসের সম্ভাবনা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বিতর্ক আছে।
বৈশ্বিক সংকটের কারণে সারা পৃথিবী মূল্যস্ফীতি নিয়ে ভুগছে উল্লেখ করে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, অনেক দেশের চেয়ে বাংলাদেশ ভালো আছে। তবে চাপ জনগণ ভোগ করছে। বাজারে গিয়ে কষ্ট পাচ্ছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানির দাম পণ্যের খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে।
ভূতত্ত্ববিদ বদরূল ইমাম বলেন, দেশে গ্যাসের সম্ভাবনা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। সরকারের মনোনীত একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গবেষণা করে গ্যাসের সম্ভাবনা দেখিয়েছে। শুরুর দিকে যেসব গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার হয়েছে, এগুলো সহজ অনুসন্ধান ছিল। এখন আরও কঠিন অনুসন্ধানে যেতে হবে। গ্যাসভিত্তিক সব দেশের ক্ষেত্রেই এমন হয়।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানি তেল ও পানির দাম বেড়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ ও গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নেই। এটা দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া, বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা ধরে রাখতে হলে রপ্তানি শিল্পে সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে। না হলে রপ্তানি এখন যেমন কমছে, এটি আরও কমবে।
এনএইচবি/এমএমএ/