বুধবার, ২ এপ্রিল ২০২৫ | ১৯ চৈত্র ১৪৩১
Dhaka Prokash

সবার দৃষ্টি ওয়াশিংটনে

নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে বারবার তাগাদা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। র‌্যাবের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুমসহ মানবাধিকার ইস্যু নিয়েও বারবার তীব্র প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে দেশটি। এ ছাড়া, আছে কোয়াড-আইপিএসে যোগ দেওয়া না দেওয়াসহ নানা প্রসঙ্গ।

এমন পটভূমিকায় সোমবার (১০ এপ্রিল) স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায়) ওয়াশিংটনে বৈঠকে বসছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। এ বৈঠকে যোগ দিতে ড. মোমেন শুক্রবার (৭ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নানা কারণে এই বৈঠকটি গুরুত্বপূর্ণ। আর কয়েক মাস পরে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হয় সে ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের তাগিদ রয়েছে। অংশগ্রহণমূলক মানে হলো বিএনপিকে নির্বাচনের আনার বিষয়টি। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট বার্তা দেওয়া হতে পারে।

এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন গতবছর স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ওয়াশিংটনে বৈঠক করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে। সেই বৈঠকে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার বিষয়ে তাগাদা দেন ব্লিঙ্কেন।

এ প্রসঙ্গে ড. মোমেন সাংবাদিকদের সেসময় জানান, তিনি ব্লিঙ্কেনকে বলেছেন বিএনপিকে নির্বাচনের আনার ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে। যদিও পরে অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন তিনি এমন কথা বলেননি।

ওই বৈঠকের পর একবছর দফায় দফায় বিভিন্ন পর্যায়ের মার্কিন কর্মকর্তা বাংলাদেশে এসেছেন। প্রত্যেকেই বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড-গুমসহ নানা ইস্যুতে কথা বলেছেন। প্রতিবারই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মার্কিন কর্মকর্তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে এসব বিষয়ে বাংলাদেশ পদক্ষেপ নেবে।

এ ছাড়া, বাংলাদেশ চীন-রাশিয়া বলয়ে চলে যেতে পারে বলেও উদ্বিগ্ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই উদ্বেগের কারণ হলো যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে কোয়াড ও আইপিএসে যোগ দিতে বললেও বাংলাদেশ শুধু সময় নিয়েছে। বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রকে ভাবিয়ে তুলেছে বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়।

২০২২ সালের মার্চে বাংলাদেশে আসেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড। তিনি বাংলাদেশকে কোয়াড-আইপিএসে যোগ দেওয়ার তাগিদ দিয়ে বলেন, এই অঞ্চলে হুমকি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করতে চায়।

অন্যদিকে, রাশিয়া ও চীন চায় বাংলাদেশ তাদের সঙ্গে থাকুক এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন কোয়াড-আইপিএসে যোগ না দিক। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রকাশ্য বিতণ্ডায় জড়িয়েছিল চীন। ২০২১ সালের শেষদিকে তৎকালীন চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং প্রকাশ্য বলেছিলেন বাংলাদেশ কোয়াডে যোগ দিলে চীনের সঙ্গে সম্পর্কে তা প্রভাব ফেলবে।

এরপর একে একে ঢাকা সফর করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাউন্সিলর ডেরেক শোলে, মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। তারা সবাই আগামীর জাতীয় নির্বাচন ও মানবাধিকার পরিস্থিতির ‘উন্নতির’ তাগিদ দেন।

জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এতদিন ইউরোপে আমরা যে ‘কোল্ড ওয়ার’ বা ঠাণ্ডা যুদ্ধ দেখেছি সেই কোল্ড ওয়ার ভিন্ন ফর্মে এশিয়ার দিকে স্থানান্তরিত হচ্ছে। ভূরাজনীতিটা কিন্তু এখন আমাদের গায়ের উপর এসে পড়েছে। যেটা আগে দূরে ছিল।

সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, এখন বাংলাদেশের জন্য যেটা চ্যালেঞ্জ হয়ে এসেছে সেটা হলো এই ভূরাজনৈতিক ঘুর্ণাবর্তের মধ্যে বাংলাদেশ নিজেকে কীভাবে রক্ষা করবে। বাধ্য হয়েই ভূরাজনৈতিক কূটনীতির মধ্যে ঢুকে পড়তে হচ্ছে। আমরা চাই বা না চাই।

র‌্যবের উপর নিষেধাজ্ঞা

এই যে এতজন মার্কিন কর্মকর্তা গত এক বছরে ঢাকা সফর করলেন তাদের প্রত্যেকের কাছেই র‌্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ। প্রতিটি বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ড. মোমেন বিষয়টি নিজেই জানিয়েছেন।

প্রায় দুই বছর হতে চলল র‌্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র ও রাজস্ব দপ্তর। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

এই দুই বছরে বাংলাদেশর পক্ষ থেকে বহু দেনদরবার করা হয়েছে যাতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কথায় কর্ণপাত করেনি যুক্তরাষ্ট্র।

ওয়াশিংটনেও সাংবাদিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন সোমবার (১০ এপ্রিল) স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনা হবে।

অন্যান্য ইস্যু

বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত চাইবে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই সরব ভূমিকায় রয়েছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ও শরণার্থীদের অর্থ সহায়তার বিষয়টি বৈঠকে তুলবেন ড. মোমেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানো নিয়েও আলোচনা হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের নির্বাচন-মানবাধিকার ছাড়াও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, শ্রম অধিকার, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ, ইউক্রেন ইস্যু আলোচনায় প্রাধান্য পেতে পারে।

আরইউ/এমএমএ/

Header Ad
Header Ad

ময়মনসিংহে সিনেমা হলে যান্ত্রিক ত্রুটির জেরে দর্শকদের ভাঙচুর

ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে একটি সিনেমা হলে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্রচার বন্ধ হয়ে গেলে ক্ষুব্ধ দর্শকেরা ব্যাপক ভাঙচুর চালান। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঈশ্বরগঞ্জ পৌর বাজারের মাছ মহালে অবস্থিত সোনালি টকিজ সিনেমা হলে এই ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানা যায়, ঈদ উপলক্ষে চলমান ‘বরবাদ’ সিনেমার সন্ধ্যার শো দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর দর্শক সমাগম ঘটে। ডিসি, বেলকনি এবং প্রথম শ্রেণির টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু সিনেমার মাঝপথে সাউন্ড সিস্টেমে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়, ফলে সিনেমা প্রদর্শন বন্ধ হয়ে যায়। কর্তৃপক্ষ অনেক চেষ্টা করেও সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর কোনো আশার আলো দেখতে না পেয়ে ক্ষুব্ধ দর্শকেরা হলে ভাঙচুর শুরু করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, রাত সাড়ে ৮টা থেকে প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে চলা এই তাণ্ডবে সিনেমা হলের বসার বেঞ্চ, চেয়ার ও টিকিট কাউন্টার ভাঙচুর করা হয়। পাশাপাশি হলের দেয়ালে লাগানো পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে নিচতলায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় একদল যুবক বিক্ষুব্ধ দর্শকদের ধাওয়া করলে তারা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান।

কিছু দর্শক অভিযোগ করেন, যান্ত্রিক ত্রুটির সময় হল কর্তৃপক্ষ কোনো আশ্বস্ত না করে কলাপসিবল গেটে তালা মেরে চলে যান। এতে দর্শকেরা আরও বেশি ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন এবং হলের বিভিন্ন অংশ ভাঙচুর করেন।

ঘটনার সময় হলে উপস্থিত থাকা একজন কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, উত্তেজিত দর্শকেরা তাকে মারধর করতে উদ্যত হন। তবে তিনি দ্রুত নিয়ন্ত্রণ কক্ষের লাইট বন্ধ করে দরজায় তালা লাগিয়ে ভেতরে বসে থাকায় অল্পের জন্য রক্ষা পান।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) প্রজিত কুমার দাস জানান, সিনেমা চলার সময় সাউন্ড সিস্টেমে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। সেটি ঠিক করতে না পেরে কর্তৃপক্ষ বাইরে থেকে সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া আনতে যান। কিন্তু দর্শকেরা কলাপসিবল গেটে তালা লাগানো দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং পরবর্তীতে ভাঙচুর চালান।

এদিকে, ঘটনার পর সিনেমা হলের দায়িত্বে থাকা হারুনুর রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানা যায়, তিনি অসুস্থ হয়ে বিশ্রামে আছেন। হলের অন্যান্য কর্মীরাও ভয়ে কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করেন। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ঘটনায় তদন্ত চলছে এবং দোষীদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Header Ad
Header Ad

সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ড. ইউনূসের মন্তব্যে ভারতীয় রাজনীতিবিদদের তীব্র প্রতিক্রিয়া

সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ড. ইউনূসের মন্তব্যে ভারতীয় রাজনীতিবিদদের তীব্র প্রতিক্রিয়া। ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি চীন সফরে গিয়ে এক বক্তৃতায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যকে (সেভেন সিস্টার্স) স্থলবেষ্টিত বলে উল্লেখ করেন এবং বাংলাদেশকে এ অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের অভিভাবক হিসেবে বর্ণনা করেন।

ড. ইউনূস তার বক্তব্যে বলেন, ভারতের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত সাতটি রাজ্য সম্পূর্ণরূপে স্থলবেষ্টিত। সমুদ্রের সঙ্গে তাদের কোনো সরাসরি সংযোগ নেই। ফলে বাংলাদেশ এই অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের একমাত্র প্রবেশদ্বার এবং অভিভাবক হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে।

তার এই মন্তব্য ভারতের রাজনৈতিক নেতা ও কূটনীতিকদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যকে অনেক ভারতীয় রাজনীতিবিদ হতাশাজনক এবং নিরাপত্তার জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন।

ভারতের আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা মন্তব্য করেছেন, ড. ইউনূসের বক্তব্য ভারতের ‘চিকেনস নেক’ করিডোরের দুর্বলতা নিয়ে পাকিস্তান ও চীনের দীর্ঘদিনের প্রচারণাকে উসকে দিতে পারে। তিনি আরও বলেন, উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের সংযোগ আরও জোরদার করতে শক্তিশালী রেল ও সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি।

ত্রিপুরার আদিবাসী দল টিপ্রা মোথার নেতা প্রদ্যোত মানিক্য বলেন, ‘১৯৪৭ সালে চট্টগ্রাম ভারতের অংশ হলে আজ এ সমস্যা হতো না। আমাদের বাংলাদেশের পরিবর্তে নিজস্ব সমুদ্রবন্দর প্রয়োজন।’

বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বীণা সিক্রি বলেন, ‘উত্তর-পূর্ব ভারতের সমুদ্র প্রবেশাধিকার নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ইতোমধ্যেই চুক্তি রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের মন্তব্য অত্যন্ত হতাশাজনক এবং তিনি এ ধরনের মন্তব্য করার অধিকার রাখেন না।’

ড. ইউনূসের বক্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন একাধিক কংগ্রেস নেতা। কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা পবন খেরা মন্তব্য করেছেন, ‘বাংলাদেশের এ ধরনের অবস্থান উত্তর-পূর্ব ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।’

Header Ad
Header Ad

মিয়ানমারের ভূমিকম্পে এক ইমামের ১৭০ স্বজনের মৃত্যু

সাবেক ইমাম সোয়ে নেই ওও। ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র ঈদুল ফিতর আসন্ন। বিদায় নিচ্ছে রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস রমজান। শেষ জুমার নামাজ আদায় করতে মুসলমানদের মধ্যে আগ্রহ ছিল চরমে। কিন্তু কে জানত, এই জুমাই শত শত মুসল্লির জীবনের শেষ জুমা হয়ে উঠবে!

গত ২৮ মার্চ, শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৫১ মিনিটে মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে। সাগাইং অঞ্চলের পাঁচটি মসজিদে তখন নামাজ আদায় করছিলেন অসংখ্য মুসল্লি। শক্তিশালী ভূমিকম্পে তিনটি মসজিদ ধসে পড়ে, যার মধ্যে অন্যতম ছিল মায়োমা মসজিদ। এই মসজিদে নামাজরত প্রায় সবাই প্রাণ হারান।

মায়োমা মসজিদের সাবেক ইমাম সোয়ে নাই ওও তখন মিয়ানমার-থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী শহর মায়ে সোতে অবস্থান করছিলেন। সেখানেও তিনি ভূমিকম্প অনুভব করেন, তবে বুঝতে পারেননি কী পরিমাণ বিপর্যয় তার অপেক্ষায় রয়েছে।

সোয়ে নাই ওও একসময় মিয়ানমারের ইমাম ছিলেন, তবে ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশ ছেড়ে থাইল্যান্ডে পালিয়ে যান এবং বর্তমানে একটি মানবাধিকার সংস্থায় কাজ করছেন। ভূমিকম্পের পরের দিনগুলোতে একের পর এক শোকসংবাদ পেতে থাকেন তিনি। এখন পর্যন্ত তিনি জানতে পেরেছেন, তার প্রায় ১৭০ জন আত্মীয়, বন্ধু ও প্রাক্তন মুসল্লি মারা গেছেন। তাদের বেশিরভাগই মসজিদে অবস্থান করছিলেন, অনেকেই মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সোয়ে নাই ওও বিবিসিকে বলেন, ‘আমি প্রাণ হারানো সব মানুষের কথা ভাবছি। তাদের শিশুদের কথা ভাবছি... এই শোক সহ্য করা অসম্ভব।’

সাগাইং অঞ্চল মূলত বৌদ্ধ মন্দিরের জন্য পরিচিত হলেও এখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলমান দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন। নানা নিপীড়ন ও নির্যাতন সত্ত্বেও তারা এ অঞ্চলে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছেন।

মিয়ানমারের জান্তা সরকারের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভূমিকম্পের সময় মসজিদে নামাজরত অবস্থায় প্রায় ৫০০ মুসলমান মারা গেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মসজিদ সংলগ্ন মায়োমা স্ট্রিট ও শহরতলি। ভূমিকম্পে বহু ভবন ধসে পড়েছে, রাস্তাঘাট বিধ্বস্ত হয়েছে।

এই ভূমিকম্পে মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সাগাইং ও মান্দালয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উদ্ধারকর্মীরা এখনো ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করছেন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দেশটির জান্তা সরকার জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৭১৯ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন ৪৪১ জন এবং আহত হয়েছেন ৪ হাজার ৫২১ জন। জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং এক টেলিভিশন ভাষণে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, নিহতের সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

মিয়ানমারের ভূমিকম্পটি ছিল ৭ দশমিক ৭ মাত্রার। এর কেন্দ্রস্থল ছিল মান্দালয় শহর থেকে ১৭.২ কিলোমিটার দূরে এবং ভূ-পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে। প্রথম কম্পনের ১২ মিনিট পর ৬ দশমিক ৪ মাত্রার আফটারশক হয়, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।

এই বিধ্বংসী ভূমিকম্পে দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। উদ্ধারকর্মীরা নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও অনেকের আটকে থাকার আশঙ্কা রয়েছে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

ময়মনসিংহে সিনেমা হলে যান্ত্রিক ত্রুটির জেরে দর্শকদের ভাঙচুর
সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ড. ইউনূসের মন্তব্যে ভারতীয় রাজনীতিবিদদের তীব্র প্রতিক্রিয়া
মিয়ানমারের ভূমিকম্পে এক ইমামের ১৭০ স্বজনের মৃত্যু
ঈদের আনন্দে যমুনার দুর্গম চরে গ্রাম-বাংলার ঘুড়ি উৎসব, আনন্দে মেতে উঠে বিনোদনপ্রেমীরা!
ইমামকে ঘোড়ার গাড়িতে রাজকীয় বিদায়, দেওয়া হলো ৯ লাখ টাকার সংবর্ধনা
লন্ডনে একসঙ্গে দেখা গেলো সাবেক চার আওয়ামী মন্ত্রীকে
ঢাকায় ফিরছে ঈদযাত্রীরা, অনেকে ছুটছেন শহরের বাইরে
চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় আবারও সড়ক দুর্ঘটনা, নিহত ৭
বিটিভিতে আজ প্রচারিত হবে ঈদের বিশেষ ‘ইত্যাদি’
ঈদের ছুটিতে ফাঁকা ঢাকা, নেই যানজটের চিরচেনা দৃশ্য
মাদারীপুরে তিন মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ৪, আহত ২
থানায় জিডি করলেন ভোক্তা অধিকারের জব্বার মন্ডল
রাশিয়া আমাদের চিরকালের বন্ধু, কখনো শত্রু নয়: চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান খালেদা জিয়ার
দ্বিতীয় দফায় মিয়ানমারে ত্রাণ সহায়তা পাঠালো বাংলাদেশ
ভারতে প্রশিক্ষণ প্লেন বিধ্বস্ত, পাইলট আহত
এপ্রিলে ঢাকায় আসছে আইএমএফ প্রতিনিধি দল
জাপানে মেগা ভূমিকম্পের শঙ্কা, প্রাণহানি হতে পারে ৩ লাখ
জুলাই কন্যাদের সম্মানজনক পুরস্কার নিয়ে যা জানাল যুক্তরাষ্ট্র
দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের সম্ভাবনা