সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠন

বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষ করে সরকার দেশে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করতে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠন করেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩-এর আওতায় এই কর্তৃপক্ষ গঠনের কথা বলেছে। তবে প্রজ্ঞাপনে কর্তৃপক্ষ গঠনের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি। অতিরিক্ত সচিব গোলাম মোস্তফার সই করা ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সিদ্ধান্তটি অবিলম্বে কার্যকর হবে। অর্থমন্ত্রী হবেন এই কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান।
উল্লেখ্য, সবার জন্য পেনশন চালু করার বিষয়টি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল। তাই অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে আ হ ম মুস্তফা কামালও জোর দিয়ে বলতে থাকেন, সবার জন্য করা হবে পেনশন। তা বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষ করে জাতীয় সংসদে পাস হয়। এরপর গত ৩১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩-এর অনুমোদন দেন। তারপরই এটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।
এতে বলা হয়েছিল, আইন কার্যকর হওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ নামে একটি কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করবে সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় রবিবার অর্থ বিভাগ কর্তৃপক্ষ গঠন করেছে।
আইন অনুযায়ী, সরকার যতক্ষণ এটিকে সব নাগরিকের জন্য বাধ্যতামূলক না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত সর্বজনীন পেনশন ঐচ্ছিক থাকবে। সর্বজনীন পেনশনে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়স থেকে ৫০ বছর বয়সী সব বাংলাদেশি নাগরিক অংশ নিতে পারবেন। পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিরাও বিশেষ বিবেচনায় সুযোগ পাবেন। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরাও অংশ নিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে কর্মী ও প্রতিষ্ঠানের চাঁদার অংশ জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে।
তবে আপাতত সরকারি ও আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারীরা সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার আওতাবহির্ভূত থাকবেন। বর্তমানে শুধু সরকারি কর্মচারীরা অবসরের পর পেনশন সুবিধা পান।
আইনে বলা হয়েছে, জাতীয় পরিচয়পত্রকে ভিত্তি ধরে সর্বজনীন পেনশনের আওতায় ১৮ বছর বা তার বেশি বয়স থেকে ৫০ বছর বয়সী সব বাংলাদেশি নাগরিক অংশ নিতে পারবেন। বিশেষ বিবেচনায় পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিরা প্রক্রিয়াটির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন। মাসিক পেনশন সুবিধা পেতে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর চাঁদাদাতাকে ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিতে হবে।
এতে বলা হয়, চাঁদাদাতার বয়স ৬০ বছর পূর্তিতে পেনশন তহবিলে পুঞ্জীভূত মুনাফাসহ জমার বিপরীতে পেনশন পাবেন। একজন পেনশনার আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন। পেনশনে থাকাকালে ৭৫ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগে পেনশনার মারা গেলে অবশিষ্ট সময়কালের জন্য মাসিক পেনশন পাবেন তার নমিনি। এ ক্ষেত্রে মূল পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত যে অর্থ পেতেন, সেই অর্থ নমিনি পাবেন।
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় মাসিক সর্বনিম্ন চাঁদার হার কত হবে, তা নির্ধারণ করবে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ।
পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য হবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, অর্থ বিভাগের সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি, এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি, উইমেন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি। আর সদস্যসচিব হবেন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান।
জেডএ/এসজি
